অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে: ড. আসিফ নজরুল

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে: ড. আসিফ নজরুল
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে: ড. আসিফ নজরুল
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

হারুন-অর-রশিদ বাবু, রংপুর

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আবু সাঈদসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে, সারা পৃথিবীর মাঝে গ্রহণযোগ্য একটি বিচার করতে চাই।

আমরা তো বিচার বিভাগকে বলতে পারি না, ‘এই সময়ের মধ্যেই বিচার করতে হবে’—এতে হস্তক্ষেপ করা হয়। কিন্তু আমি যেটুকু খবর জানি, প্রসিকিউশনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, আমি নিশ্চিত, আমার দৃঢ় বিশ্বাস—আমাদের সরকারের শাসনামলেই আপনারা আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখতে পাবেন।

বুধবার (১৬ জুলাই) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের ‘শহীদ বার্ষিকী’ ও ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন ও বিচার উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “আবু সাঈদ হচ্ছেন জুলাইয়ের বীরশ্রেষ্ঠ। তার আত্মত্যাগ এতটাই বড় যে, আমাদের জাতি সেটার প্রকৃত মর্ম বুঝতে আরও বহু বছর সময় নেবে। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া আবু সাঈদের সঙ্গে একই দিনে আরও পাঁচজন প্রাণ দিয়েছিলেন। তাদেরও আমরা ভুলে যেতে পারি না। আমি ওয়াসিমের কথা মনে করতে পারি, সেও ছাত্র ছিল। তরুণরা জানতো এইভাবে দাঁড়ালে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে, তবুও তারা দাঁড়িয়েছিল দদেশের জন্য।”

আসিফ নজরুল আরও বলেন, “এত বড় আত্মদানের পর আমাদের মধ্যে প্রশ্ন জাগে—আমরা কি এই আত্মত্যাগের যোগ্য সম্মান দিতে পারি? সত্যি বলতে গেলে, পারি না। তবে চেষ্টা করি। আমাকে যেখানেই দেখা যায়, সবাই একটাই প্রশ্ন করেন—বিচার কবে হবে?”

তিনি জানান, আবু সাঈদকে গুলি করা দুই পুলিশ সদস্য সুজন ও আমির হোসেন গ্রেপ্তার হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। বিচারক, কোর্ট, প্রসিকিউটর না থাকায় শুরুতে কাজ ব্যাহত হলেও এখন বিচার কার্যক্রম পুরোদমে চলছে।

আমরা চাই না শেখ হাসিনার আমলের মতো বিচার। আমরা চাই আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি গ্রহণযোগ্য বিচার করতে। আপনাদের আমি আশ্বস্ত করতে পারি—এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই আবু সাঈদ হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে।”

অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আলোচনা সভায় অনেকেই দাবি করে বলেছে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন বৈষম্যের কথা। এটা সত্য যে রংপুর বিভাগ অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। তবে আমরা একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই, যেন কোনো বিভাগই ন্যূনতম একটি শতাংশের নিচে বাজেট বরাদ্দ না পায়।”

তিস্তা মহাপরিকল্পনা ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা মূলত বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগ। কাজেই এটি চূড়ান্ত করতে উভয় দেশের সম্মতির প্রয়োজন। এ কয়েক মাসে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ বছরের ডিসেম্বরেই চীনের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করবো ইনশাআল্লাহ। ২০২৬ সালের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।”

উপদেষ্টা আরও বলেন, “ভবিষ্যতে যেন তিস্তার পাড়ের মানুষ আর ভাঙনের শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিস্তা পরিকল্পনার কাজ চলছে। সেই সঙ্গে নদীভাঙন রোধে কাজ করছে সরকার।”

কুড়িগ্রাম ইকোনমিক জোন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর হয়ে ভুটানের ফুন্টশোলিং এলাকার দূরত্ব কম। সহজে যাতায়াত করা যায়। ভুটানের অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ হবে। পাশাপাশি শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটবে।”

রংপুর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে শ্যামাসুন্দরী খাল উদ্ধারে প্রকল্প

রংপুর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে শ্যামাসুন্দরী খাল উদ্ধার ও সংস্কারে ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে জানিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “রংপুর নগরীর ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল। এক সময় শহরের পানি নিষ্কাশনে খালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে তা পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। দখল আর দূষণে এখন তা সরু নালায় পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। খালটির সংস্কারে ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে খালটির পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ১০ কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি ৬৮টি বর্জ্য প্রবেশ পয়েন্টে ছাঁকনি বসানো হবে। এতে খালে দূষণ কমবে এবং বর্ষাকালে পানির প্রবাহ ফিরে আসবে।”

খালের প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “শ্যামাসুন্দরী খালের দুটি স্থানে কৃত্রিম বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধগুলোর যৌক্তিকতা খুঁজে দেখা হবে এবং প্রয়োজন হলে সেগুলো অপসারণে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হবে। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে শুষ্ক মৌসুমেই কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যতিক্রম আয়োজন ও শহীদ পরিবারের দাবি;

‘জুলাই শহীদ দিবস’ এবং আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর নজির স্থাপন করল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রশাসন। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভার মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। মঞ্চের সামনে দর্শকসারিতে বসেন অতিথিরা।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মূল মঞ্চে বসানো হয় শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনকে। তার পাশে মঞ্চে বসেন রংপুরের নিহত আরও ২১ জন শহীদের পরিবারের সদস্যরা—যাদের সন্তান, ভাই কিংবা স্বামী এই জুলাই আন্দোলনে রক্ত দিয়েছিলেন।

এ সময় পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, আগামী নির্বাচনের আগেই প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এসএমএ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের এবং ইউজিসির সদস্য ড. তানজীমউদ্দীন খানসহ রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

দৈনিক আমাদের কণ্ঠ