এস এম রাজু আহমেদ
সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ডিজিএম আব্দুল বারেক সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বীমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি গ্রহণের লিখিত আদেশনামা পাওয়া সত্ত্বেও কোন প্রকারের ব্যবস্থা না নিয়ে বরং দুর্নীতিবাজের পক্ষেই সরাসরি সুপারিশ করেন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান। বীমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সুপারিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দুর্নীতিবাজ এই ডিজিএম এর দুর্নীতিকে সরাসরি প্রশ্রয় দিয়ে এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান বীমা কর্পোরেশন শিল্পের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে শোনা যাচ্ছে, দুর্নীতিবাজ ডিজিএম আব্দুল বারেকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তিনি নিজেই ফেঁসে যাবেন। আর এসব তথ্য কোনভাবেই যেন সংবাদ কর্মীদের হাতে পৌঁছাতে না পারে সে কারণে তিনি বীমা কর্পোরেশনের কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে সংবাদকর্মীদের যোগাযোগে ব্যারিকেট সৃষ্টি করে রেখেছেন। বীমা কর্পোরেশনের গেইটে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত লোকজন কোন সংবাদকর্মীদের তাদের অনুমোদন ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করতে দেন না এবং এমডি সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান নিজেও কোন সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেন না। তার কাছে লিখিত বক্তব্য পাওয়ার আবেদন করেও দিনের পর দিন অপেক্ষা করে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এমনকি তার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ডিজিএম আব্দুল বারেক কর্পোরেশনের অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য, সহকর্মীদের হয়রানি সহ নানান অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বীমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বীমা কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষকে আদেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের এই আদেশনামাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ডিজিএম আব্দুল বারেককে রক্ষা করতে তার পক্ষেই উল্টো লিখিত সুপারিশ করেন- যেন আব্দুল বারেক ‘ধোয়া তুলসী পাতা’। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিজিএম আব্দুল বারেক ও তার স্ত্রী ডিজিএম শাহানা গনি চাকুরী বিধিমালা বহির্ভূতভাবে বীমা কর্পোরেশনের গৃহ নির্মাণ অগ্রিম ঋণ সেল থেকে ১কোটি ১০ লাখ টাকা তসরুপ করেন। তিনি প্রভাব বিস্তার করে একজন সিনিয়র এজিএম কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে নিজের স্ত্রীর পদোন্নতি বাগিয়ে নেন, দপ্তরের গাড়ি ক্রয়, মেরামত সংক্রান্ত ও লিফট ক্রয়ের ক্ষেত্রে মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্য করেন, তিনি কেন্দ্রীয় মোটরপুলে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ফুয়েল সরবরাহের ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। সম্প্রতি তিনি সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের আউটসোর্সিং এমএলএসএস কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটা অংকের কমিশনের বিনিময়ে নিজের পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেই কাজ পাইয়ে দেন। এমন সব অভিযোগের ভিত্তিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ডিজিএম আব্দুল বারেক ও তার সহযোগী নাজিম উদ্দিন আলমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেন। উক্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক (উপসচিব) মোঃ সফিউদ্দিন স্মারক নং-৫৩.০৩.০০০০.০৭২.৫৬.০২২.২১.০৫, তারিখ-৫ জানুয়ারি ২০২২ মূলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু চিঠি প্রেরণের পর দুই মাস অতিবাহিত হলেও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান উক্ত বিষয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। শোনা যাচ্ছে, আব্দুল বারেক ও নাজিম উদ্দিন আলম মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে উর্ধ্বতন এই কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে নিয়েছেন। যার কারণে সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান ডিজিএম আবদুল বারেকের পক্ষে বীমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত সুপারিশ জানিয়েছেন। তবে আব্দুল বারেককে রক্ষা করতে এমডি সিন্ডিকেটে আরও একাধিক উর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাম উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে সাধারন বীমা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসানের বক্তব্য জানতে তাদের কার্যালয়ে একাধিক বার গিয়েও কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়নি। আর সম্প্রতি কর্পোরেশনের প্রধান গেইটে নিরাপত্তা কর্মী দ্বারা সাংবাদিক প্রবেশের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা স্থাপন করা হয়েছে।