ফুলবাড়ী, দিনাজপুর প্রতিনিধি:
স্ব স্ব কাজে ফেরানো না হলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরণ অনশনের হুমকি দিয়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির শ্রমিকরা। বকেয়া বেতনভাতা ও স্ব স্ব কাজে যোগদান এই দুইদফা দাবিতে গত ২৭ এপ্রিল থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কয়লাখনি গেটে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশসহ অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন শ্রমিকরা। সকালে বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে খনি গেটে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর ইসলাম, শ্রমিক নেতা আবু তাহের, এহসানুল হক সোহাগ, এরশাদ আলী প্রমুখ।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, শ্রমিকদের দুইদফা নিয়ে একাধিকবার খনি কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও কর্তৃপক্ষ দাবির বিষয়ে কর্ণপাত করছেন না। সব শ্রমিককে তাদের স্ব স্ব কাজে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধ করতে হবে। দ্রæততম সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বর্তমান অবস্থান কর্মসূচি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আগামীতে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে রুপ নেবে। গত ২৭ এপ্রিল থেকে লাগাতারভাবে প্রতিদিন খনি গেটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ অব্যাহত রয়েছেন শ্রমিকরা। এদিকে কোভিড মহামারীর সময়ে সরকারের লকডাউনের অংশ হিসেবে খনিতে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধিন কর্মরত এক হাজার ১৪৭ জন দেশিশ্রমিককে বাধ্যতামূলখ ছুটি দিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর চলতি জানুয়ারি মাসে খনির উৎপাদন ও উন্নয়ন কাজের জন্য ওই শ্রমিকদের মধ্য থেকে ৪০০ জন শ্রমিককে খনির ভেতরে অবস্থান করে কাজ করার শর্তে নেওয়া হয়। অন্য ৭৪৭ জন শ্রমিককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা না হলেও বেতনভাতা দেওয়া হচ্ছে না তাদের। একইভাবে চলতি মে মাসের ২ তারিখে খনির অভ্যন্তরে কর্মরত ৪০০ জন শ্রমিককেও বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে খনি থেকে।
২ মে খনির ভেতর থেকে বাইরে আসা জাহিদুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলাম বলেন, চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশিশ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করে থাকেন। সেখানে বন্দি জীবনযাপন করতে হয়েছে এবং প্রতিদিন ৮ঘণ্টার পরিবর্তে ১০-১১ ঘণ্টা পর্যন্ত তাদেরকে কাজ করতে হয়েছে। ভুলক্রমে মাক্স খুললে এক হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বেতন থেকে, বাথরুমে যেতে অনুমতি নিতে হতো। মাসে একবার বেতনের টাকা দেওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা স্বাক্ষাত করতে দেওয়া হলেও তার সময় ছিল মাত্র দুই মিনিট। খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামমান খান বলেন, করোনার কারণে কাজে যোগদানের পরিবেশ এখনও ফিরে আসেনি। আন্দোলনকারি শ্রমিকরা চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধিনে কর্মরত। তাদেরকে চীনা প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি মেনেই কাজে আসতে হবে। এর আগে ২৯ এপ্রিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছিলেন, কোল ফেইসে কয়লার মজুদ শেষ হওয়ায় উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন কোল ফেইস থেকে উত্তোলন শুরু হতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লেগে যাবে।