শাহিন চৌধুরী:
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কুন্ডা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার রাসেল এর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের পাহার গড়ে তুলেছেন। ৫০টি দলিলে রাসেল মেম্বারের অন্তত ১ হাজার শতক জমি নিজ নামে রেজিস্ট্রেশন করে নিয়েছেন। এছাড়াও ভাই ভাই ব্রিকস নামে ৬টি ইটভাটা থাকলেও আয়কর রিটার্নে ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং নীট সম্পদ দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আয় দেখিয়ে কর দিয়েছেন মাত্র ২৪ হাজার টাকা। দুর্নীতির মাধ্যমে ইউপি সদস্য রাসেলের গত ১০ বছরে উত্থানের বিষয়ে এভাবেই বলা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দেওয়া অভিযোগের চিঠিতে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায় রাসেল মেম্বার এর নিজস্ব বাগান বাড়িতে নিয়মিত বসে মদ ও জুয়ার আসর। ১৮টি ব্যাংক হিসাবে জমা অন্তত ১০ কোটি টাকা। বনে গেছেন ৬ টি ইটভাটা ও ২টি ডকইয়ার্ডের মালিক।
চড়ে বেড়ান দামি গাড়িতে। গত ১৩ ও ৩১ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ রাসেলের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগের চিঠি জমা দিয়েছেন মোকাররম হোসেন নামের একজন। অভিযোগে দুর্নীতি জবরদখল ও অনিয়মের মাধ্যমে রাসেলের শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের ফিরিস্ত্রি তুলে ধরা হয়। দুদকে দেওয়া দুটি অভিযোগে বলা হয়, কুন্ডা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাসেল মিয়া ছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কিন্তু ২০১১ সালে এলাকার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার ভাগ্যখুলে যায়। রাতারাতি এলাকার ভূমি জবরদখল ও নানা জালজালিয়াতি করে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। সাধারণ মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি, অন্যের জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে বিক্রি করেন রাসেল। বৈধ আয়ের তেমন কোন উৎস না থাকলেও গত ১১ বছরে রাসেলের সম্পদ অর্জনের তথ্য দিয়ে অভিযোগে বলা হয়, তার ভাই হাবিবুর রহমান রানা ও মোস্তাক আহমদ রাজুসহ তিন ভাইয়ের নামে ভাই ভাই ব্রিকস নামে নিজ এলাকায় ৬টি ইটভাটা গড়ে তুলেছেন।
এছাড়া ভাই ভাই ডকইয়ার্ড ও রাসেল ট্রেডার্স নামে দুটি ডকইয়ার্ডের মালিক হয়েছেন তিনি। এর বাইরে অবৈধ পন্থায় প্রায় ৫০টি দলিলে অন্যত ১ হাজার শতক জমি নিজ নামে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। শুধুমাত্র এসব জমির রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ খরচ করেছেন ১০ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংকের ধর্মগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ শাখাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের ১৮টি হিসাবে বাবা, ভাই ও রাসেলের নিজ নামে ১০ কোটি টাকা রয়েছে। বিপুল অংকের টাকা বিদেশে পাচার করে মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে গড়ে তুলেছেন সেকেন্ড হোম।আয়কর রিটার্নে সম্পদ ও আয়ের তথ্য গোপন করা হয়েছে উলেল্লখ করে বলা হয়, সরকারি মৌজা মূল্য হিসাবে রাসেলের নামে রেজিস্ট্রেশন না হওয়া জমির মূল্য প্রায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যবসা ও অন্যান্য সম্পদসহ রাসেল শতাধিক কোটি টাকার মালিক হলেও সর্বশেষ জমা দেওয়া আয়কর রিটার্নে মাত্র ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক বলে উল্লেখ্য করা হয়।
পরে এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবি আর) খোঁজ নিলে জানা যায়, ২০২০-২১ কর বছরে রাসেল মিয়া কর অঞ্চল-৪ এর ৮৪ নম্বর সার্কেলে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। ২১০৯৬২৩৪২৫৭৮ টিআইএন নম্বরে দাখিল করা আয়কর রিটার্নে তিনি ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা আয় দেখিয়ে কর দিয়েছেন ২৪ হাজার টাকা। নীট সম্পদ দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গা দখলের প্রসঙ্গ অভিযোগে বলা হয়, হিন্দুদের জায়গা-জমি ফাকা দেখলেই কৌশলে নিজেই মালিক হয়ে দখল করে নেন রাসেল। এছাড়া জমি নিয়ে জটিলতা নিরসনে মেম্বার হিসেবে হিন্দুরা তার কাছে সালিশ নিয়ে গেলে নিজেই কৌশলে ঢুকে পড়ে জমির মালিক বনে যান। স্থানীয় ভূমি রেজিট্টি কার্যালয়ে থাকা তার লোকের মাধ্যমে এ জালিয়াতি করেন। স্থানীয় ব্রাহ্মণগাঁওয়ে হিন্দুদের রথখোলার মাঠ ভেঙ্গে প্লট বানান রাসেল। প্লটটে যাতায়াতের জন্য রথখোলার মাঝখানে রাস্তা গড়ে তুলেন তিনি। অভিযোগে আরো বলা হয়, ব্রাহ্মণগাঁওয়ে তিন বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়ি গড়ে তুলেছেন রাসেল মিয়া। সেখানে নিয়মিত মদ-জুয়ার আসর বসান। রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের তান্ডবের ঘটনার আসামিও ছিলেন রাসেল।দুদকে দেওয়া এসব অভিযোগের বিষয়ে রাসেল মিয়ার বক্তব্য জানতে চাইলে আমাদের কণ্ঠকে বলেন, একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দুদকে দেওয়া অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও দাবি করেন তিনি।
কুন্ডা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মহিউদ্দিনের কাছে দুদকে দেওয়া অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাসেল মেম্বার হওয়ার আগে তাদের একটি ইটভাটার মাত্র ২৫ শতাংশ শেয়ার ছিল। অন্য কোন ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু সে ইউপি সদস্য হওয়ার পর থেকেই প্রায় শতকোটি টাকার মালিক হয়ে যায় এই পরিবার। এখন তারা ৬টি ইটভাটা ও দুটি ডকইয়ার্ডের মালিক। এছাড়া প্রায় এক হাজারের অধিক শতাংশ জায়গা কিনেছেন। হিন্দুদের জমি নিজেদের বলে বিক্রিও করে দিয়েছেন।কুন্ডা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনর কাছে রাসেল মিয়ার বিরুদ্ধে দুদকে দেওয়া অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাসেল ইউপি সদস্য হওয়ার পর নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছেন। জানা গেছে, গেলো ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগে রাসেলের বিরুদ্ধে গত ২৪ অক্টোবর মনির হোসেন নামের একজন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।