সৈয়দ ফজলে রাব্বী ডলার
বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চল জুড়ে প্রবাহিত হচ্ছেমাঝারি শৈত্য প্রবাহ। ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন উত্তর জনপদ। কুয়াশায় ঢেকে গেছে হেমন্তের স্বচ্ছ ও পরিষ্কার নীল আকাশ। দিনের শুরুতে বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদ উঠলেও কমছে না শীতের তীব্রতা। কুয়াশায় আচ্ছন্ন সকালে উত্তরের মহাসড়ক তথা নদীপথে চোখ মেললে কুয়াশায় আটকে যায় দৃষ্টিসীমা। উত্তরের জেলাগুলোয় ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নাগরিক জীবন। শীতের তীব্রতায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে দিন আন দিন খাওয়া নি¤œ আয়ের মানুষ। অপরদিকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতজনিত নানা রোগ-বালাই। কুয়াশায় ঢাকা থাকায় মাঝ রাত থেকে ভোর অবধি প্রতিটি সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহতই শুধু হচ্ছে না কোথাও কোথাও দূর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে যানবাহন।
প্রচন্ড শীতের কারণে ব্যাপক হারে নারী-শিশু-বৃদ্ধরা নিউমোনিয়া, হাপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অপরদিকে গতকাল সোমবার চলতি শীত মৌসুমে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল তেঁতুলিয়ায়। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, রংপুর, রাজশাহী সহ অন্যান্য জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা বিরাজ করছে। মাঝ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ভারি কুয়াশায় গুড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁটার মতো পানি ঝড়তে থাকে। সেই সাথে বইতে থাকে কনকনে শীতল বাতাস। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছে দু:স্থ ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। আগামী ১৫ জানুয়ারি পর আরেকটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর। কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকায় ও কনকনে শীতের দরুণ মাঠে-ঘাটে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না কৃষক-শ্রমিকরা। ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে শ্রমজীবী মানুষদের পরিবার। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারের শীতে সরকারি বেসরকারী পর্যায়ে গরীব-দু:স্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ এখনও তেমনটি চোখে পড়ছে না। গত বছরের চেয়ে এবার এসময় শীতের তীব্রতা বেশি। প্রচন্ড শীতের কারণে অনেক স্থানে ক্ষেতের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গত কয়েকদিনে বগুড়া শহরের কাঠালতলা, সাতমাথা, স্টেশন রোডস্থ হকার্স মাকের্ট এলাকায় ভাস্যমান ক্ষুদ্র বস্ত্র ব্যবসায়ীরা নতুন ও পুরাতন কম্বল, সোয়েটার, জ্যাকেট, কোট, মাফলালসহ ছোট-বড়দের বিভিন্ন রকমের শীতবস্ত্র সাজিয়ে রেখে বিক্রি করছেন।
একইভাবে উত্তরের রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় সহ অন্যান্য জেলা শহরে শীত নিবারণের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ শীতবস্ত্র কিনতে রাস্তার পাশে ফুটপাত, হকার্স মার্কেট সহ বিভিন্ন মার্কেটে ভীড় জমাচ্ছে। ফলে প্রতিটি এলাকায় শীতবস্ত্রের দোকান গুলোয় শীতবস্ত্র বেচা-কেনার ধুম পড়েছে। এর পাশাপাশি বগুড়ার সান্তাহার, লালমনিরহাট, ফুলছড়ি ঘাট সহ বিভিন্ন রেল স্টেশন এলাকায় ফেরিওয়ালাদের মাফলার, কানটুপি, কান ঢাকনা ফেরী করে বিক্রি করতে দেখা যায়। শীতবস্ত্রের অভাবে কর্মব্যস্ত মানুষও কাজের খোঁজে বাইরে যেতে পারছে না। খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উত্তাপ নিয়ে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে । যদিও কিছু কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্ন ভাবে সংগঠনের ব্যানারে শীত বস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে শীতের কারণে নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুরা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
শীত নিবারনের প্রয়োজনীয় কাপড় না থাকায় নারী-শিশু ও বয়বৃদ্ধরা নানা রোগ বালাই এ আক্রান্ত হচ্ছে। এর পাশাপাশি গৃহপালিত পশুরা ক্ষুরা রোগ সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায়, নিউমোনিয়া, ডায়ারিয়া, শ্বাসকষ্ট, ব্রর্ণকাইটিস, হাপানি রোগে আক্রান্ত হয়ে নারী-শিশু ও বয়বৃদ্ধরা অধিক মাত্রায় ভর্তি হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে বিপুল সংখ্যক রোগীদের চিকিৎসায় বেগ পাচ্ছে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ রেজাউল আলম জুয়েল বলেন, বিদ্যমান জনবল সংকট দূর হলে চিকিৎসায় আগত রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেয়া শতভাগ সম্ভব হবে।