বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার প্রসারে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
শুক্রবার (০৪ জুলাই) তুরস্কের ইস্তানবুলে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মাননীয় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট নেজমুদ্দিন বিলাল এরদোয়ান।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পূর্বে দুই নেতার মধ্যে এক ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তাঁরা দুই দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন এবং এসব লোকজ ক্রীড়া প্রসারে পারস্পরিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে বিলাল এরদোয়ান বাংলাদেশের লোকজ ও ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন, কাবাডি, কুস্তি, বলিখেলা ও নৌকা বাইচের মতো খেলাগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে তিনি একযোগে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলা নিয়ে কাজ করা ফেডারেশনগুলোকে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সদস্য করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তুরস্কের শিক্ষা কার্যক্রমে নিজের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য তুরস্কে শিক্ষাবৃত্তি, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং বিষয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশে তাঁর সংস্থার পরিচালিত স্কুলের একটি শাখা চালু করার আগ্রহও প্রকাশ করেন। ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণায় তিনি তাঁর কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা প্রসারে সহায়তা প্রদানের আগ্রহ জানান, যাতে রোহিঙ্গাদের জীবন সহজতর হয়।
বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে তুরস্কের চলমান প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানান। এ সময় তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে তুরস্কের জনগণ নিজেদের আত্মপরিচয়, সংস্কৃতি ও সাফল্য পুনরুদ্ধারে কাজ করছে।
বৈঠকে উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ তার প্রকৃত ও বিশ্বস্ত বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে, যেখানে তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তিনি বলেন, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংকটকালে তুরস্ক বঙ্গীয় বদ্বীপের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তরুণদের মধ্যে রাজনীতি সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সভ্যতাগত রুপান্তরে গুরুত্বারোপ করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে তুরস্কের মতো বাংলাদেশের অতীত গৌরবোজ্জ্বল সময়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পুনর্জীবন ঘটানোর প্রতি আগ্রহের কথা জানান তিনি।
উপদেষ্টা বিলাল এরদোয়ানের পিতা তুরষ্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, গাজায় চলমান গণহত্যাসহ পৃথিবীর নিগৃহীত মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী এবং কার্যকর আন্তর্জাতিক জোট। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সমর্থন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের আশ্বাস দেন।
উপদেষ্টা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর মধ্যে কাবাডি, দাড়িয়াবান্ধা, বলিখেলা, কুস্তি ও নৌকা বাইচ আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড এথনোস্পোর্টস ইউনিয়নের সহায়তা কামনা করেন।
উপদেষ্টা আসন্ন “গ্লোবাল ইয়ুথ সামিট ২০২৫”-এ জনাব বিলাল এরদোয়ানকে বাংলাদেশ সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই সফর দুই দেশের যুব, ক্রীড়া ও রাজনৈতিক সম্পর্কের পারস্পরিক অংশীদারিত্বকে আরও সুদৃঢ় ও বেগবান করবে।