নিজস্ব প্রতিবেদক:
কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ও কাগজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের াবিতে সংবা সম্মেলন করেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রিতা সমিতি। আজ বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রিতা সমিতির সভাপতি মো.আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, আমরা যারা প্রকাশনাশিল্পের সাথে জড়িত, তারা ইতোমধ্যে বিপদের মধ্যে পড়ে গেছি এবং এর কুফল সমগ্র জাতিকে যে স্পর্শ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেবল সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই এই সমস্যাকে মোকাবিলা করা যাবে বলে আমরা মনে করি। দু:খের সাথে আমরা বলতে চাই যে, বাংলাদেশের বাজারে এখন মুদ্রণ এবং লেখার কাগজের যে সংকট চলছে, এবং তার প্রেক্ষিতে কাগজের যে আকাশচুম্বী মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে, তা স্বাধীন বাংলাদেশে অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে ভয়াবহ।
এ ভয়াবহতার চিত্র এতই প্রকট যে, আসন্ন শিক্ষাবর্ষে দেশের কোটি কোটি কোমলমতি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন যেমন বিঘ্ন ঘটবে, তেমনি ২০২৩-এর অমর একুশে বইমেলায় এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। একথা সত্য যে, বৈশ্বিক করোনা-উত্তরকালে কাগজ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীরে পুঁজিতে যে র্গতি নেমে এসেছে, তার সাথে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরিস্থিতিজনিত ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব। সব মিলিয়ে বিশ্ববাজারের ম›ার ঢেউ বেশি আঘাত হেনেছে আমাদের কাগজের বাজারের ওপর, যা দেশের নানাবিধ প্রকাশনার মূল উপাদান এবং শিক্ষার প্রধান উপকরণ।
তিনি বলেন,একথা স্বীকার করছি যে, কাগজ তৈরির কাচামাল (পালপ) অধিক মূল্যে, বর্ধিত পরিবহন বায়ে দেশে এনে কাগজ তৈরিতে উৎপাদন খরচ অনেকাংশেই বেড়ে গেছে। কিন্তু আমরা বলতে চাই যে, এ সমস্ত ব্যয়াবৃদ্ধির কারণে কাগজের মূল্যবৃদ্ধি ঘটা যে মাত্রায় স্বাভাবিক ছিল, প্রকৃত বাস্তবে তা বেড়েছে সেই তুলনায় খুবই অস্বাভাবিক মাত্রায়। বর্তমানে এ বৃদ্ধি ক্ষেত্র বিশেষে বিক্ষণ বা তারও বেশি। অস্বাভাবিক এ কাজটি ঘটে গেছে অতি ্রæত সময়ে, যা একদিকে দেশের শিক্ষাঙ্গন ও প্রকাশনা শিল্পকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে।
অন্যদিকে বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, ২০২১ সালে যেখানে ৮০ গ্রাম অফসেট উউ কাগজের মূল্য ছিল ১৫০০ টাকা রিম, এখন ২০২২ সালে তার নাম ৩০০০ টাকার বেশি। ১০০ গ্রামের একই কাগজের যেখানে ২০২১ সালে মূল্য ছিল ১৭৫০ টাকা রিম, এখন ২০২২ সালে তার াম ৪২০০ টাকা। অন্যদিকে, ২০২১ সালে যেখানে ২০.৩০ ইঞ্চি নিউজপ্রিন্ট ডিসি কাগজের রিম প্রতি মূল্য ছিল ৩৮০ টাকা, এখন ২০২২ সালে তার মূল্য ১০০০ টাকা। একই কাগজের ডিডি-এর মূল্য ২০২১ সালে যেখানে ছিল ৪৪৫ টাকা রিম, এখন ২০২২ সালে তার মূল্য ১১৮০ টাকা । এক্ষেত্রে কোনো ব্যবসায়িক ুর্নীতি ঘটছে কি না, কোনো ুষ্টচক্র দেশের কাগজ ও প্রকাশনা বাজারের বিরুদ্ধে সুরভিসন্ধিমূলক কাজে লিপ্ত আছে কি না, সে বিষয়ে আমাদের এবং সদাশয় সরকারের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
ছোটন বই ছাপানোর বিষয় উল্লেখ্য করে বলেন, আমাদের শিক্ষাবান্ধব সরকার আগামী এক মাসের মধ্যে দেশের স্কুল শিক্ষার্থীদের হাতে ৩৫ কোটি বই বিনামূে তুলে দেবে। তাতে অপরিহার্যভাবে খরচ হবে যে কাগজ, তার পরিমাণ পাপ আগামী ুই মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অমর একুশে বইমেলায় এই প্রকাশনার জন্য প্রচুর কাগজের ব্যবহার হবে। সহজ শর্তে বিনাে অথবা স্বল্পতাকে কাগজ আমানি করা না গেলে আলোচ্য বই বিতরণ ও বইমেলার প্রেক্ষিতে কাগজের চলতি সংকট আরও বিরাট অচলাবস্থার সৃষ্টি করবে। একথা মনে রাখতে হবে যে, গত ুই-আড়াই বছর কোভিড পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায়, প্রতি বছর যে ওয়েস্টেজ কাগজকে রিসাইকেলযোগ্য কাঁচামাল হিসেবে পাওয়া যায়, সেটা পাওয়া যায়নি। উপরিউক্ত চাহিার সাথে অন্যান্য একাডেমিক ও সহায়ক বই, শিক্ষার্থীদের খাতাপত্র, শিক্ষাবোর্ডে নিধিপত্র, প্যাকেজিং শিল্প, ব্যাগশিল্প, থাম, বিভিন্ন সংবাদপত্র,দাপ্তরিক কাজা, পোস্টার, ডেকোরেশন ইত্যাি কাজে যে পরিমাণ কাগজের চাহিদা, তা কিন্তু বেড়েই চলেছে। এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে কাগজের আমদানি তেন যদি কমানো না হয়, তাহলে খুব শীঘ্রই কাগজের বাজারে ব্যাপক বেসামাল অবস্থার সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে স্কুল- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থীর লেখাপড়া যেহেতু কাগজের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত, সেহেতু কাগজের মূল্য এবং ু”প্রাপাতা বাড়লে তা ব্যাপক কোনো আন্দোলনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে কি না, তা অবশ্যই আমারেকে, আমাদের সরকারকে কাগজের মিল মালিকদেরকে এবং কাগজ ব্যবসায়ীদেরকে এখনই ভেবে দেখতে হবে।
তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, লক্ষ করলেই খো যাবে যে, দুইগুণ-তিনগুণ পাম দিলে কিছু দেশে যেকোনো পরিমাণ কাগজ করা সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ ঘটনা নিশ্চয়ই প্রশাসনিকভাবে তদন্ত করে খো রকার যে, বাস্তবতাটা আসলে কী? আমরা মনে করি, সরকার তো অবশ্যই, সাথে কাগজের মিল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা এক্ষেত্রে এখনই কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সাংবাকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। নইলে কাগজসংশ্লিষ্ট মুদ্রণ, পত্র-পত্রিকা, পড়ালেখা, সৃজনশীল ও মননশীল সাহিত্য রচনা, নতুন লেখক সৃষ্টি এবং প্রকাশনাশিল্পের ছাপা ও অন্যান্য শাখা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। সেটা ঘটলে আমাদের মেধাগত ও সৃষ্টিশীল উন্নয়ন ব্যাহত হবে। ফলে বাহ্যিক উন্নয়নের অনেকাংশই অর্থহীন হয়ে পড়বে, যার সুদূরপ্রসারী পরিণতি হবে
তাদের প্রধান সুপারিশ
১. উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সরকারি প্রতিনিধি, কাগজের মিল মালিক, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির
প্রতিনিধি এবং কাগজ ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময়পূর্বক কারণ চিহ্নিত করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ২. ্রæততম সময়ে বিশে থেকে কাগজ আমদানিতে মুক্ত ঘোষণা করা।
৩. দেশের সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কাগজকে রিসাইকেলিং কাজে ব্যবহার করার ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক রাখা।
১৮. কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর গুদামজাতকৃত কাগজ (যদি থাকে), তাহলে তা স্বাভাবিক মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা।
৫. হ্রাস/মুক্ত করা ছাড়াও অন্যবিধ কী ভর্তুকি বা প্রণোদনামূলক ছাড় সরকার কর্তৃক দেওয়া সম্ভব, তা ভেবে দেখা।