সাতক্ষীরাপ্র্রতিনিধি :
কুষ্ঠ একটি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রামক রোগ। এটি মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রে নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট। এটি ত্বক, স্নায়ুতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র চোখকেপ্র্রভাবিত করে। ত্বকের সংবেদনশীলতা নষ্ট করে ও পেশীর দুর্বলতা তৈরি করে। তবে এটি নিরাময়যোগ্য। এই রোগের প্রথম ধাপে চিকিৎসা করা গেলে তা নিরাময় সম্ভব।
এছাড়া কুষ্ঠরোগীর কাছাকাছি বেশীক্ষণ থাকা, দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, অস্বাস্থ্যকরপ্ররিবেশে থাকা, জিনগতপ্র্রবনতা ও ভৌগলিক কারনে কুষ্ঠরোগ দেখা দেয়। কুষ্ঠরোগের প্রাথমিক লক্ষন হলো ত্বকের একটি অংশ সাদা ও অবশ হয়ে যাওয়া। দ্রæত চিকিৎসা করলে এটি নিরাময় করা যায়।কুষ্ঠ রোগ মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়েপ্র্রাচীন হলেও বাংলাদেশে এই রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা প্র্রায় নেই বললেই চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যপ্রতি ১০ হাজারে কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা কমিয়ে একজনের নিচে নিয়ে আসা। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্যপ্রূরন করলেও বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে, এখনও প্রতিবছর চার হাজার মানুষ নতুন করে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, আশির দশকে সারাদেশে ১০ থেকে ১১ হাজার কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হয়েছে। ২০২০ সালে শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৭২৪ জন। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হলো এই সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।সাতক্ষীরা জেলায় কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা ২০২৫ সালের আগস্ট মাসপ্রর্যন্ত ৬৮ জন। তবে এদের মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়েছে। বর্তমানে চলমান স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ৫১ জন। বেসরকারি এনজিও সংস্থা সিএসএস- এর মাধ্যমে রোগী শনাক্ত ও ওষুধ বিতরন চলমান রয়েছে।
কুষ্ঠ একটি নিরাময়যোগ্য রোগ এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হওয়া যায় এই বার্তা সমাজের সকলের কাছে পৌছে দিতে হবে। কারন সমাজে কুসংস্কার রয়েছে যে, এই রোগ আর ভালো হয় না। এই রোগীর ছোয়া লাগলে তারও কুষ্ঠ হবে।কুষ্ঠ রোগের প্রতিবন্ধিতার হার শূন্যে নামিয়ে আনতে আক্রান্তদেও প্রতি সামাজিক বৈষম্য ও কলঙ্ক দূর করা জরুরি।কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং কুষ্ঠের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রæত চিকিৎসকের শ্মরণাপন্ন হতে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এছাড়া কুষ্ঠের কারণে হওয়া স্নায়ুবিক ক্ষতি এবং বিকৃতি প্রতিরোধের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
শ্যামনগরের দরিদ্র রিকশাচালক ফিরোজ হোসেন ও অশ্বিনী মুন্ডা তাদের শরীরে ফ্যাকাশে কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করেন। ফিরোজ হোসেনের ডানপ্রা ও অশ্বিনী মুন্ডার দুই হাতে এটি দেখা দেয়। গুরুত্ব না দেয়ায় কিছুদিনপ্রর জিনিসটা আরও বেড়ে যায়। স্থানীয় গ্রাম ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে চর্মরোগের চিকিৎসা করা হয়। এতেও ভালো না হয়ে ফিরোজেরপ্রা ও অশ্বিনীর হাত থেকে গুটি বের হয় এবং আস্তে আস্তে অবশ হয়ে যায়। এরপর ফিরোজ খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা করান এবং ডাক্তারপ্ররীক্ষা ছাড়াই চর্মরোগের চিকিৎসা করেন। একপর্যায়ে তার ডানপ্রা কেটে ফেলা হয়।
একইভাবে অশ্বিনী মুন্ডাও স্থানীয় গ্রাম ডাক্তারেরপ্ররামর্শে হাতের অবশ হওয়া গুটিগুলো কেটে ফেলেন। এর কিছুদিনপ্রর থেকেই হাত অবশ হয়ে যায় এবং কাজকর্ম করতে অক্ষম হয়েপ্রড়েন অশ্বিনী মুন্ডা। ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ও তারপর গুটি উঠে অবশ হয়ে যাওয়া রোগটির নাম কুষ্ঠ।
কুষ্ঠ বিশেষজ্ঞ সূত্রে কষ্ঠ রোগের প্রকোপ ওপ্রতিবন্ধীতা শূন্যের কোঠায় আনতে করনীয় : প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয়েরপ্রর মাল্টিড্রাগ থেরাপিপ্রয়োগ, কুষ্ঠ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবংপ্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাপ্রয়োজন। ত্বকে ক্ষত, স্নায়ুর ক্ষতি, সংবেদনশীলতা হ্রাস বা পেশীর দুর্বলতা দেখা দিলে দ্রæত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এছাড়া মাল্টিড্রাগ থেরাপি দিলে রোগী সুস্থ হয়ে যায় এবং রোগের বিস্তার বন্ধ হয়।মাল্টিড্রাগ থেরাপিতে অ্যান্টিবায়োটিকের সংমিশ্রণ (ড্যাপসোন, রিফাম্পিসিন ও ক্লোফাজিমিন) ব্যবহার করা হয়।কুষ্ঠ ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।
সাতক্ষীরায় কুষ্ঠরোগ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা সিএসএস। তারা মাঠপর্যায়ে কর্মী নিয়োগ করে রোগী শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে। কুষ্ঠ কি, কিভাবে ছড়ায় ও এর চিকিৎসাপ্রদ্ধতি কেমন এসব বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরীর কাজ করছে সিএসএস। কুষ্ঠ আক্রান্তরোগীরা যাতে সামাজিকভাবে সমস্যায় নাপ্রড়েন সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে সেমিনার ও উঠানবৈঠক নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছে এই বেসরকারি সংস্থাটি। এছাড়া রোগী শনাক্তের পর বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করছেন তারা।এ বিষয়ে সিএসএস এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো: খালেকুজ্জামান বলেন, কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি উপজেলায় কর্মশালা হয় নিয়মিত। স্বাস্থ্যবিভাগের কাছে এই রোগের ওষুধ বিনা খরচে দেয়া হয়। তবে কিছু কিছু জায়গায় জনবল সংকট রয়েছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও কালিগঞ্জে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুষ্ঠ বিশেষজ্ঞ না থাকায় কাজ করতে ভোগান্তিপোহাতে হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন মো: আব্দুস সালাম জানান, সরকারিভাবে সিএসএস এনজিও’র মাধ্যমে রোগী শনাক্ত ও বিতরন করা হয়। এছাড়া এই কাজের জন্য প্রতিটি উপজেলায় সরকারি লোক নিয়োগ করা রয়েছে। চলতি মাসপ্রর্যন্তজেলায় ৫১ জন কুষ্ঠরোগী রয়েছে যাদের চিকিৎসা চলছে। এছাড়া কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো ও আক্রান্তব্যক্তিরা যাতে সামাজিক হেনস্থার শিকার না হন সেজন্য সেমিনার, উঠান বৈঠক সহ নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়। এই কাজে বেসরকারি সংস্থা সিএসএস যথাযথভাবে সাহায্য করে থাকে।আশাশুনি উপজেলার যক্ষা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সহকারী মো: আজহারুল ইসলাম জানান, চলতি মাসে সেখানে কোন রোগী নেই। কুষ্ঠরোগীর আক্রান্তস্থান অবশ হলেই শুধুমাত্র চিকিৎসা দেয়া হয়। কুষ্ঠরোগী শনাক্তকরন কাজে খাদিজা নামের একটি মেয়ে কাজ করে। এখানে জনবল সংকট রয়েছে। #