মো.ইউসুফ আলী-
২৫ জুন, শনিবার। ¯্রােতস্বিনী পদ্মার দুই তীরে লাখো মানুষের ভীড়। সারা দেশের মানুষ ভীড় জমিয়েছেন বিভিন্ন মিডিয়ার সামনে। দেশের বাইরেও সংবাদ মাধ্যম সমূহের সামনে অপেক্ষমান বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উৎকন্ঠা। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় ক্ষণ গণনা করছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার কয়েক লাখ মানুষও। কখন আসবে সেই বজ্র কন্ঠের উদ্বোধনী ধ্বনি। অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার বেড়াজাল ভেদকরে ঘোষনা এলো শুভ উদ্বোধনের। বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলার তিন তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী জণনেত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠ থেকে ভেসে এলো লাখো বাঙ্গালীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধনের শুভ ধ্বনি। এ যেন কোন ঘোষনা নয় এ যেন লাখো মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের কলধ্বনি।
এরআগে সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে মুন্সিগঞ্জের দোগাছি পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়া-১ এ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে পদ্মা সেতুর উত্তর থানা সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। সমাবেশে অংশ নেন সাড়ে ৩ হাজার সুধীজন। যাদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিশিষ্ট নাগরিক ও সাংবাদিকরা।
সমাবেশ শেষে বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। এরপর দুপুর ১২টা ০৬ মিনিটে সেতু দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর জাজিরার অভিমুখে রওয়ানা হয়। এর আগে বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে নিজহাতে নির্ধারিত টোল দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে টোল প¬াজা সংলগ্ন উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। অবশেষে দ্বার খুলল বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। খুলে গেল দক্ষিণের দুয়ার। অবসান হল দীর্ঘ অপেক্ষার।
উল্লেখ্য,পদ্মা নদীর উপর নির্মিত বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ সেতুর পুরো নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’। প্রায় ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১০ মিটার চওড়া সেতুটির নির্মাণ কাজ ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখে শুরু হয়। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। কাজেই পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়। এটা দেশের একটি বড় সম্পদ। এই সেতুর জন্য প্রধানমন্ত্রী যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আজ উদ্বোধনের মাধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সেই ত্যাগকে যৌক্তিক প্রমাণ করেছে। এই সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে সড়কপথে খুলে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের দক্ষিনের দুয়ার।
যা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগের মাধ্যম। যেকারনে বাংলাদেশের মানুষের একটি স্বপ্নের প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতু। যা যাত্রী ও মালবাহী যানবাহনের জন্য যাত্রা সহজ করবে এবং ধীরে ধীরে দেশের জিডিপির হার বাড়িয়ে দিবে।
এর ফলে ফেরি পাড়ি দিয়ে পদ্মা পার হওয়া এবং পদ্মার দুইপাড়ে দীর্ঘ লাইর জ্যামের ভয়ংকর এক অস্বস্তিকর ও দীর্ঘ ভোগান্তির কবল থেকে রেহাই পেলো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ যেভাবে যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারছে এই সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে আজ থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষও সেই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরনের দিন আজ। কারন সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে রাজধানীতে কৃষিপণ্য পরিবহনে একটি যুগান্তকারী অধ্যায় তৈরি করবে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পাবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটবে।তাছাড়া বাঙালীর স্বপ্নের এই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের সড়ক পথে বড় ধরনের কোন ভোগান্তি আর থাকবে না। বরং অন্যান্য পথে যাতায়াতের তুলনায় ঢাকা থেকে দেশের দক্ষ্ণিাঞ্চলের জন্য এটাই হবে সবচেয়ে সহজ আরামদায়ক ও যানজটমুক্ত পথ। #