মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ, বগুড়া :
স্বপ্ন সবাই দেখে। সন্তান যখন মায়ের কোলে কিম্বা দোলনায় দোল খায় তখন স্বপ্নের বীজ বুনেন মা-বাবা। বুদ্ধি হওয়ার পর নিজেই স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করে। এরপর বয়ষ বাড়ার সাথে সাথে স্বপ্নের পরিধিও বাড়তে থাকে। মানব জীবনটাই এমন। কিন্তু সবার স্বপ্ন পূরণ হয় না। শৈশবে মনের গহীনে লালিত স্বপ্ন বাস্তব জীবনে এসে ফিকে হয়ে যায় অনেকেরই। তেমনই একজন সবুজ মিয়া। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে অবশেষে মাটি আর ঘাসের সাথেই মিতালি হয়েছে তার।
মোঃ সবুজ মিয়া। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার আলমপুর পূর্বপাড়ার গোলাম হোসেনের ছেলে। বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে গণিতে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে যখন ঘরে ফিরে যান তখন একবুক স্বপ্ন ছিল মা-বাবার। ছেলে বড় চাকরিজীবি হবে এমনটাই আশা ছিল তাদের। কিন্তু সবুজ মিয়া হেঁটেছেন ভিন্নপথে। কিছু দিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও মনের প্রশান্তি মিলেনি। অবশেষে আবারও ফিরে এলেন গ্রামে। গ্রামের সবুজ মাটিকেই আঁকড়ে ধরে স্বপ্ন পূরণের পথে ছুটলেন। প্রথমে ১২০ শতাংশ জমিতে আম, পেয়ারা এবং বরইয়ের বাগান গড়ে তোলেন। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে-পুড়ে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন তিনি। উচ্চশিক্ষিত ছেলের পাগলামি ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেননি মা-বাবা। গ্রামের লোকেরাও নানান কথা শোনাতে থাকে। কিন্তু সবুজ মিয়া কারো কথায় কান না দিয়ে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাগানে। ধীরে ধীরে স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিতে থাকে। ফুলে ফলে ভরে ওঠে বাগান। গাছে গাছে দুলতে থাকে বাহারী রঙের আম, বড় বড় পেয়ারা আর সুস্বাদু বরই। বাগান ভর্তি ফল দেখে সবুজ মিয়ার মা-বাবার চোখে মুখে খুশির রেখা দেখা দেয়। প্রতিবেশীরাও বাহবা দিতে থাকে। সবুজ মিয়া জানান, গত বছর বাগান থেকে ৫০ হাজার টাকার পাকা আম, ৬০ হাজার টাকার পেয়ারা এবং ২ লক্ষ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। এবারও ২ লক্ষাধিক টাকার বরই বিক্রি হবে বলে আশা করছেন।
সবুজ মিয়া আরও জানান, শুরুতে সবাই কৃষিকাজকে ভিন্ন চোখে দেখলেও মুনাফা পাওয়ার পর সবাই বাহবা দিতে শুরু করলো। এমন কি বাগানে নিয়মিত মানুষ দেখার জন্য আসে। যারা এক সময় অবজ্ঞা করতো তারাই এখন আমাকে নিয়ে সবার কাছে গল্প করে। বিশেষ করে বাগানের বরই, পেয়ারা এবং ডিসেম্বর মাসে আম দেখে সবাই অবাক! মা-বাবা শুরুতে বিরোধীতা করলেও এখন তারা সাপোর্ট দেয়, আমাকে নিয়ে গর্বও করে। সবুজ মিয়া মনে করেন, উচ্চ শিক্ষিত তরুনদের জন্য কৃষি পেশা মোটেও সহজ নয়। কৃষিতে প্রচুর খাটতে হয়। পরিশ্রমের সাথে সাথেই ফল পাওয়া যায় না। বছর খানেক সময় শুধু খেটেই যেতে হবে। এটার জন্য দরকার প্রচুর পরিশ্রম আর ধৈযর্য। পরিশ্রম করলে সাফল্য নিজে থেকেই ধরা দিবে বলে তিনি মনে করেন। এলাকায় ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তার নাম। অনেক শিক্ষিত তরুণ তাকে মডেল হিসেবে নিচ্ছে। সবুজ মিয়া ‘স্মার্ট কৃষকথ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।