নুরুল আমিন : ভ্রমণ পিপাসু যারা প্রকৃতির নৈসর্গ লীলাভূমি খাগড়াছড়ি বান্দরবান ভ্রমনের প্রকৃতির নির্মল পরশ পেতে চান তারা কিছু সময়ের জন্য ঘুরে আসতে পারেন ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটের গাবরাখালী গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্র থেকে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমানা ঘেষা এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে গেলে আপনি সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়ায় একধরনের নির্মল আনন্দ উপভোগ করবেন। স্থান টিতে গেলে আপনার পথেই চোখে পড়বে মেঘালয় রাজ্যের সুবিশাল দৃষ্টিনন্দন তুরা পাহাড়। আরো দূর সীমানায় তাকালে হিমালয় পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি আপনার দৃষ্টির সীমানায় ভেসে উঠবে। সেখানে যেতে না পারলেও বাংলাদেশের হালুয়াঘাটে ছোট ছোট গারো পাহাড় গুলো আপনাকে ঠিকই কাছে টেনে নিবে।আপনার হার্টের সমস্যা না থাকলে ঘুরে বেড়াতে পারবেন এ পহাড় থেকে ও পাহাড়। এ সময় আপনার সাথে দেখা হবে বিভিন্ন বয়সের অনেক দর্শনার্থী সাথে। তাদের অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়েই সেখানে ঘুরতে এসেছে। জানা যায় গাবরাখালী গ্রাম গুলোতে একসময় হাজং ও বানাই জনগোষ্ঠীর বসবাস করতো । এ এলাকায় ১২৫ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছোট-বড় ১৬৭টি পাহাড়িটিলা রয়েছে।আপনার কাছে এগুলোকে ছোট ছোট পাহাড়ি মনে হবে । ময়মনসিংহের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম গাবরাখালীতে পর্যটনকেন্দ্র করার উদ্যোগ নেন।
আমাদের বহনকারী অটোরিকশা চালক জানান ঈদ,পূজা,গারো সমাজের উৎসব ও নববর্ষের দিন হাজারো দর্শনার্থীর ভীড় হয় এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে। প্রতিদিন শত শত মানুষের আনাগোনা তো আছেই। দুঃখজনক হলেও সত্য পর্যটন কেন্দ্রটি এখনো পরিপূর্ণতা লাভ করে নি। সংযোগ সড়ক গুলোতে হয়নি কাঙ্ক্ষিত সংস্কার। পত্রিকান্তরে প্রকাশ সরকারিভাবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়নে ২০১৯-২০ অর্থবছরে হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে ১ কোটি টাকার ওপর বরাদ্দ দিয়েছে। সেই বরাদ্দ থেকেই পর্যটনকেন্দ্রটির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে । পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনও নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে , পর্যটনকেন্দ্রকে আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রবেশ মুখেই রয়েছে সুউচ্চ পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলের মনোরম ঝর্ণাধারা। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকে ঝুলন্ত ব্রিজ, লেকে ঘুরতে দর্শণার্থীদের জন্য প্যাডেল বোটের ব্যবস্থাও রয়েছে। পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে মনোরম রেস্ট হাউস। এ ছাড়া বিশ্রামের জন্য গারো ভাষায় জারামবং (পূর্ণিমা) ও ফ্রিংতাল (শুকতারা) নামে দুটি বিশ্রামাগার রয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য বাড়াতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পাহাড়ে রোপণ করা হয়েছে কাজুবাদাম, আগর (সুগন্ধি), চা, কফি গাছ। পাহাড়ের টিলায় ওঠার জন্য করা হয়েছে স্টিলের সিঁড়ি, গাড়ি রাখার জন্য গাড়ি পার্কিং স্পট। এলাকাবাসী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে গাবরাখালী গারো পাহাড় পর্যটন কেন্দ্রে কাঙ্খিত উন্নয়ন সাধিত হলে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। গাবরাখালী গারো পাহাড় পর্যটনকেন্দ্র যেতে হলে ময়মনসিংহ ব্রীজ মোড় থেকে বাস,সিএনজি যোগে আপনাকে প্রথমে হালুয়াঘাট উপজেলা শহরে যেতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে মাত্র ৪০/৫০ টাকা জনপ্রতি আপনি গাবরাখালী চলে যেতে পারেন, এছাড়াও আপনি চাইলে ব্যক্তিগত বা ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসেও যেতে পারবেন।হাতে সময় থাকলে সিমান্তবর্তী এলাকার কড়ইতলী স্থলবন্দর গজনী, মধুটিলা, পানিহাতা সহ আরো কয়েকটি দর্শনীয় স্থান গুলো আপনি ঘুরে দেখে আসতে পারেন।