গুইমারা, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
আসছে ১৫ জুন গুইমারা উপজেলা পরিষদের ২য় নির্বাচন। সময় যত যাচ্ছে ততই কঠিন সমীকরণ হচ্ছে। হিন্দু-মুসলিম, মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা অধ্যুষিত ৩ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। এবারের নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী নির্বাচন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। এরা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত গুইমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেমং মারমা ,স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা, আইয়ুব আলী, রুইসাঅং মারমা।
৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনেরই বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। শুধু রইসাঅং মারমা নতুন প্রাথী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এরই মধ্যে রাজনৈতিক ও স্থানীয় মেরুকরণ নিয়ে চলছে কঠিন সমীকরণ। কে হবেন গুইমারা উপজেলার কান্ডারী, তার হিসাব মেলাতে চলছে বিরামহীন নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ। প্রার্থীরা ছুটে চলেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। বুঝাতে চাচ্ছেন উপজেলা কার হাতে তুলে দিলে আধুনিক উপজেলায় রুপান্তরিত করতে পারবেন সে ফিরিস্তি সামনে নিয়ে আসছেন। সেসব হিসেব মেলাতে প্রত্যেক প্রার্থী নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের বিশ্লেষণঃ-
মেমং মারমা গুইমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের ২ বারের সফল চেয়ারম্যান এবং গুইমারা উপজেলা বাস্তবায়নের অন্যতম রুপকার। তার হত ধরেই গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের আধুনিক ভবন বাস্তবায়িত হয়েছে যাতে বর্তমানে উপজেলা পরিষদের অফিস হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছে। তার রাজনৈতিক ক্লিন ইমেজের কারনে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ জনগন এবং ভিন্ন রাজনৈতিক দলের মানুষের কাছেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। সব সাইডের ভোট রয়েছে তার তাই তিনি এবারের উপজেলা নির্বাচনে জয়লাভ করবেন বলে আশা করছেন তার সমর্থিত ভোটারগন। তাকে বিজয়ী করলে আধুনিক উপজেলা বিনির্মান হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তার কর্মীরা।
রুইসাঅং মারমা তিনি নির্বাচনের ময়দানে একেবারেই নতুন। একজন স্কুল শিক্ষক হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিকভাবে তিনি তেমন পরিচিত নয়। তবে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের গুইমারা উপজেলা কমিটিতে একটি পদে রয়েছেন। যদিও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার শিক্ষকতার কারণে তিনি সিন্ধুকছড়ি ইউনিয়নে ভোটের মাঠে কিছিটা প্রভাব ফেলতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। আরেকটি কারণে তার ভোটের মাঠে প্রাণ ফেরার সম্ভাবনার কথা মাঠে ঘুরে বেড়ায় সেটি হলো আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিএফের কেন্দ্রীয় নেতা তার ছোট ভাই। তার মাধ্যমে ভোটারগন প্রভাবিত হতে পারে। তবে তিনি কোন দল অথবা ব্যাক্তির পরিচয় দিচ্ছে না। অত্যান্ত সাদাসিধেভাবেই চলাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারনা। তিনি শিক্ষিত ও যোগ্য হিসেবে ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হবেন বলে আশা করছেন।
আইয়ুব আলী মেম্বার তিনি গুইমারা উপজেলার একজন পরিচিত রাজনৈতিক ব্যাক্তি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গুইমারা উপজেলার সহ সভাপতি হিসাবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। গত কাউন্সিলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। কাউন্সিলে ভোট ছাড়া তাকে সিনিয়র সহ সভাপতি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কমিটিতে তাকে সিনিয়র সহ সভাপতি না দেওয়ায় দলের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে (মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে) নির্বাচন করে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের উপজেলা নির্বাচনেও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে আছেন। পাহাড়ি বাঙালী সমীকরণের কারণে ভোটের মাঠে ব্যাপক প্রভাব ফেলার সম্ভাবণা দেখছেন তার সমর্থকরা। ৩ জন মারমা প্রার্থীর বিপরীতে ১ জন বাঙালী প্রার্থী এ সরল সমীকরণটি বাকী ৩ প্রার্থীর জন্য কঠিন হতে পারে বলে ভোটের মাঠে প্রচারণা সরগরম। গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে বাঙালীদের সিংহভাগ ভোট পড়ে আইয়ুব আলীর পক্ষে। সে হিসেব ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে তার সমর্থকরা। নিরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জয়লাভের আশায় বুক বাধছেন আইয়ুব আলী। গুইমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন যে কঠিন সমীকরণ ও মেরুকরণ হচ্ছে তা এখন স্পষ্ট।