নিসা আক্তার দিনা, গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জে টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর মোঃ এহসানুল হকের নামে মামলা হয়েছে। মাহামুদ হাসান সুজন নামের এক স্থানীয় ঠিকাদার গোপালগঞ্জ আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। আমলী আদালতের মামলা নম্বর-১৩১৭/২৪। মামলায় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এহসানুল হক সহ তার অপকর্মের সহযোগী আসলাম খান, হেলাল সরদার ও মেহেদী ফরাজী কে আসামি করা হয়েছে। আমলী আদালত মামলাটি কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরে আমলে না নিলে ভুক্তভোগী ঠিকাদার সংক্ষুব্ধ হয়ে গোপালগঞ্জ জেলা জর্জ আদালতে রিভিশন করেন, যার নম্বর- ১২৯/২৪।
জজকোর্টের বিচারক আতয়ার রহমান রিভিশনটি আমলে নিয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক সহ অন্যান্য আসামিদের আগামী ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ধার্য তারিখে স্বশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করেছেন। অপরদিকে মামলা হওয়ার খবর পেয়ে ঠিকাদার মাহামুদ হাসান সুজনের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক। জেলার বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও নিজেস্ব মাস্তান বাহিনী দিয়ে মামলা তুলে নিতে বাদীকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার সুজন নিরুপায় হয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, দূর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
মামলার বর্ননা ও ঠিকাদার সুজন এর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, মাহামুদুল হাসান সুজন দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত লাইসেন্স সহ অন্যান্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়ে এলজিইডির দপ্তরে ঠিকাদারি করে আসছিলেন। এর মধ্যে ২নং আসামি আসলাম খানের এন এ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড রানা এন্টারপ্রাইজ (জেভি) ফার্মের নামে দুইটি কাজ করে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করায় প্রায় অর্ধেক বিল প্রাপ্ত হন ঠিকাদার সুজন। পরবর্তীতে দূর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক এবং ৩ ও ৪নং আসামি হেলাল সরদার, মেহেদী ফরাজী যোগসাজশে গত ১১ মার্চ ও ১৩ জুন ২০২৪ তারিখে ঠিকাদার সুজন কে এলজিইডির কার্যালয়ে নিয়ে কৌশল করে ৩ ও ৪ নং আসামির নামে ৩১লক্ষ ১৮হাজার ৯শ টাকার দুইটি চেক লিখে নেন। পরে সুবিধা জনক সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট থেকে সমুদয় টাকা উত্তোলন করে নেয় ওই চক্র। পরবর্তিতে একই কাজের বিপরীতে আরো দুটি বিল ৭৭লক্ষ ৫৫ হাজার ৮শ ১৫ টাকা এবং ৩০লক্ষ ৭২হাজার ১৪৪ টাকা পাশ হলে ১নং আসামি এহসানুল হক সহ অন্যান্য আসামিদের যোগশাজসে জেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে কৌশলে নিয়ে নিজেদের জিম্মায় রাখে। পরবর্তীতে নির্বাহী প্রকৌশলী ও ১নং আসামি তার কার্যালয়ে বসে ৩ ও ৪ নং আসামির উপস্থিতিতে সুজনের কাছে ২০লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন।
এসময় ঠিকাদার সুজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে এহসানুল হক কে বলেন, স্যার এই কাজ থেকে তো আপনাকে আগেই অংশ দিয়েছি। এই কাজে তো আমার খুব একটা লাভ হবে না, এখন আবার কেন টাকা দিতে হবে? এসময় নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক সুজনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে খারাপ ব্যবহার করেন এবং ঠিকাদারি ফার্মের মুল মালিকের হাতে চেক দেওয়ার ভয় দেখান। এরপর তাকে চেক প্রদান না করে বিভিন্ন অযুহাতে ঘুরাতে থাকেন। এছাড়াও দূর্নীতিগ্ৰস্ত নির্বাহী প্রকৌশলী সুজনের নিজেস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিউ রেক্স এর নামে চলমান দুইটি কাজ বাতিলের হুমকি দেয়।
পরবর্তীতে ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখে ঠিকাদার সুজনের উপস্থিতে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে সকল আসামিরা সমুদয় টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার।
নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এর পূর্বে ও খায়রুল নামের এক ঠিকাদার দুর্নীতিগ্রস্ত এই নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হকের বিরুদ্ধে প্রকল্প পরিচালকের প্রাক্কালিত মুল্য পরিবর্তন করে টেন্ডার দেওয়ার অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে এবিষয়ে তদন্ত শুরু হলে স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী কে ম্যানেজ করেন। পাশাপাশি ঠিকাদার খায়রুলকে নির্বাহী প্রকৌশলীর পালিত মাস্তান বাহিনী দিয়ে হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে দমনপীড়ন করার কারণে অভিযোগ টি আলোর মুখ দেখেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডি বিভাগের কয়েকজন ঠিকাদার জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক ২০২০ সালের মার্চ মাসের ১৮ তারিখে গোপালগঞ্জে যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন অসৎ উপায় অবলম্বন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গোপনে প্রকল্প পরিচালকের প্রাক্কলিত মূল্য পরিবর্তন করে বড় অংকের উৎকোচের বিনিময়ে তার পছন্দের ঠিকাদারকে একাধিক কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। এতে করে অনেক নিয়মিত ঠিকাদার কাজ না পেয়ে পথে বসেছেন। এছাড়াও তিনি কার্যাদেশ ও বিল স্বাক্ষরের সময় ঠিকাদারদের কাছ থেকে বড় অংকের উৎকোচ গ্রহন করেন।
এসকল অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক আমাদের কন্ঠকে বলেন, আমি কোন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নই। কারো টাকা আত্মসাৎ বা প্রকল্প পরিচালকের প্রাক্কলিত মূল পরিবর্তন করনি। ঠিকাদার সুজন তার ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে আমার নামে কোর্টে মামলা করার পাশাপাশি বানোয়াট তথ্য দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে।