রফিকুল ইসলাম খান, পাইকগাছা, খুলনা
পাইকগাছা উপজেলায় নেপিয়ার ঘাস চাষের প্রতি ঝুঁকছেন কৃষকরা। অনেকেই এখন এ ঘাস চাষ করে নিজের গবাদি পশুর প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি অংশ বাজারে বিক্রি করছেন। আর এতে করে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন তারা। পাইকগাছা উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নেপিয়ার ঘাস নিয়ে কৃষকদের কর্মব্যস্ততা। নির্ধারিত সময়ে জমি থেকে ঘাস কেটে কেউ কাঁধে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন আবার কেউ আটি বেঁধে ইজিবাইক ও ভ্যানগাড়িতে করে বিক্রির জন্য বিভিন্ন গ্রামে ও বাজারে চলে যাচ্ছেন। অনেক চাষি পাইকারিও বিক্রি করে এ ঘাস। চাষিরা জানিয়েছেন, নেপিয়ার ঘাস চাষে পরিশ্রম কম। এ ঘাসের চারা একবার জমিতে লাগালে ৩ বছরের মধ্যে নতুন করে লাগানো লাগে না। এজন্য চাষিরা এ ঘাস গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য জমিতে চাষ করছে। গবাদি পশুর প্রিয় খাদ্য হিসেবে এবং ভিটামিন ‘এথ ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এ ঘাসের চাহিদা পাইকগাছা অঞ্চলে দিনদিন বাড়ছে। পাইকগাছার হরিঢালী ইউনিয়নের সঞ্জয় কুমার দাস জানান, তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী । ব্যবসার পাশাপাশি তিনি একটি গরুর খামার করেছেন । তার খামারে ১২টি উন্নত জাতের গরু রয়েছে । খামারের শুরু থেকেই তিনি দেড় বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছেন। এই ঘাস খামারের গরুদের খাওয়ায়ে মোটা তাজা করনের মাধ্যমে আর্থিক ভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন । কপিলমুনি ইউনিয়নের সেলিম বিশ্বাস জানান, তিনি মূলত পেশায় একজন কৃষক ও ইজিবাইক চালক । বাড়িতে ২টি উন্নত জাতের গাভী রয়েছে । তিনি ইজিবাইক চালানোর পাশাপাশি পাঁচ বিঘা জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস লাগিয়েছেন । নিজের গবাদি পশুগুলোকে খাওয়ানোর পাশাপাশি তিনি নিজে এই ঘাস বাজারে ও গ্রামের গবাদি পশু খামারীদের কাছে বিক্রি করেন । নেপিয়ার ঘাস পাইকারি বিক্রি করে তার পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে।তার স্ত্রী একাজে তাকে সহযোগিতা করেন। সেলিম বিশ্বাস আরও জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাজারে এ ঘাসের চাহিদা অনেক। তিনি ইজিবাইকে করে কপিলমুনির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে ১০ টাকা আটি দরে এ নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করেন। আগে যেখানে তার সংসার চালানো কষ্টের ছিল সেখানে এখন তিনি আর্থিকভাবে বেশ সচ্ছল । পাইকগাছার সামাদ শেখ; আশরাফুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম , সিরাজুল ইসলাম, ফারুক হোসেন সহ কয়েকজন কৃষক জানান- নেপিয়ার ঘাস চাষে অনেকেই আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এ ঘাস সহজ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায় এবং পরিশ্রমও অনেক কম। কেবল মাঝে-মাঝে ক্ষেতের ভেতরে জন্মানো আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। এবং সময়মত সার প্রয়োগ করতে হয়। সব দিক দিয়ে লাভজনক হওয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এ জাতের ঘাস চাষ করে আসছেন। এ কৃষকরা আরও জানান, শুরুতে নিজেদের গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা মেটাতেই এই ঘাস চাষ শুরু করেন তারা। পরে বাড়তি অংশ বিক্রি করতে করেন। এ ঘাসের কয়েকজন ক্রেতা জানান, পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকায় থেকে প্রতিদিনই সহজে এ ঘাস আমরা কিনতে পাই এবং গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করি। নেপিয়ার জাতের ঘাস গবাদি পশুর খাদ্য তালিকায় রেখে অন্যান্য খাবার খাওয়ানো হয়। নেপিয়ার ঘাস চাষে কৃষকদের আগ্রহ প্রসঙ্গে পাইকগাছার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ তুহিন বলেন , নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ লাভজনক। স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয় এই ঘাস চাষে। পাইকগাছা অঞ্চলের অনেক চাষিই এখন নেপিয়ার ঘাস বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন।