নিজস্ব প্রতিনিধি:
চাকুরী বিসিকে, ব্যবসাও বিসিকে সহযোগিতায় কর্তৃপক্ষ শিরোনামে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রকাশিত সংবাদে বিসিকের গাড়ী চালক মোঃ আরিফ খান, মামুনুর রশীদ, ফজলুর রহমান এবং পিয়ন মোহাম্মদ হোসেন নামক বিসিকের উপকরণ শাখার ৪ জন কর্মচারী কর্তৃক বিসিক চেয়ারম্যান বরাবরে দাখিলকৃত আবেদনের কপি স্ক্যান করে দৈনিক আমাদের কন্ঠ পত্রিকার প্রথম পাতায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল।
( পর্ব ২)
প্রকাশিত সংবাদ প্রকাশের পূর্বে বিসিক সচিব, উপকরণ শাখার উপ-ব্যবস্থাপক, বিসিক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং গাড়ীচালক মোঃ আরিফ খানের টেলিফোনিক মতামত নেয়া হয়েছে। একজন সরকারী কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমতি ব্যতীত ব্যবসায়িক কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেন না-এটি হচ্ছে সরকারী আইন বা বিধান। ব্যবসায়িক উদ্দ্যেশ্যে বিসিকের ৪ জন কর্মচারী কর্তৃক বিসিক চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন দাখিল হতে শুরু করে এ বিষয়টি নথিতে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে উপকরণ শাখার উপব্যবস্থাপক মোঃ মেরাজ উদ্দিন এবং বিসিক সচিব মোঃ মফিদুল ইসলামসহ বিসিক কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রদানের বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করে তাদের কার্যক্রমে। সবিস্তারে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর চাকুরী প্রবিধান ও সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালা লংঘন করার দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকলেও তা নেয়া হয়নি। দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বে-আইনী কাজের সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে নিজ জেলা এবং নিজ জেলার ক্ষমতাশালী ব্যক্তিবর্গের নাম উল্লেখ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন, সংবাদ সূত্রের সোর্সের নাম জানতে চাওয়া এবং দেখে নেয়ার হুমকী প্রদান কোন অবস্থাতেই সঠিক কাজ নয়। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি সঠিক হলে প্রচলিত নিয়ম-নীতি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার বিধানের পাশাপাশি ভুল বা মিথ্যা সংবাদ প্রকাশিত হয়ে থাকলে সে বিষয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কার্যক্রম গ্রহনের নিয়ম আছে। আমাদের কন্ঠ পত্রিকা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দূর্নীতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরার ক্ষেত্রে সদা সর্বদা সচেষ্ট।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদের (ক) ও (খ) উপ-অনুচ্ছেদে বর্নিত বিধানমতে স্বাধীন মত প্রকাশ ও সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা প্রদান করা হইল উল্লিখিত বিষয়ে বাধা প্রদান বা হস্তক্ষেপ করা সংবিধান পরিপন্থী কাজ। উল্লেখ্য বিসিকের উপকরণ শাখার উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ মেরাজ উদ্দিন ০৮-০৯-২০২২ তারিখে আমাদের কন্ঠ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের সাথে টেলিফোনে আলাপকালে উল্লিখিত বিষয়াদির অবতারনা করেন। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে গুরুতর বে-আইনী কাজের উল্লেখ ছিল। যার মধ্যে অন্যতম দুটি বিষয় হচ্ছে মোঃ আরিফ খান নিজেই স্বীকার করেছেন ৪ লক্ষ টাকা খরচ করে তিনি বিসিকের নলগোলাস্থ জায়গায় সেমি পাকা টিনশেড ঘর নির্মান করেছেন ইউনিয়ন নের্তৃবৃন্দ এবং উপকরণ শাখার উপব্যবস্থাপক মেরাজ উদ্দিনের আর্থিক সহযোগিতায়। দ্বিতীয়তঃ আরিফ খান টেলিফোনে আরও জানিয়েছেন যে, বিসিকের নলগোলাস্থ জমিতে থাকা স্ক্র্যাব সরিয়ে নেয়ার জন্য বিসিকের রেভিনিউ খাতে যে ৬ লক্ষ টাকা প্রদান করার কথা তার আবেদনে উল্লেখ করেছে উক্ত টাকা ইউনিয়ন নের্তৃবৃন্দ এবং উপকরণ শাখার উপব্যবস্থাপক প্রদান করবেন। ইউনিয়নের সভাপতি ঘর নির্মান এবং স্ক্র্যাব সরিয়ে নেয়ার জন্য আরিফের আবেদনের বা আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে কিছুই জানেন না মর্মে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। অপরদিকে ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ঘর নির্মানের বিষয়ে জানলেও টাকা প্রদান করেননি মর্মে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন। সংগত কারণে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, গাড়ী চালক পদে চাকুরী করে আরিফ খান এত টাকা কোথায় পেয়েছেন? তাকে ঘর নির্মান হতে শুরু করে ব্যবসায়িক কাজে কে বা কারা টাকার যোগান দিচ্ছেন এবং ব্যবসায়িক কাজে তাকে কারা সহযোগিতা প্রদান করছেন তা খুজে বের করা দরকার। জনগনের দেয়া ট্যাক্সের টাকায় বেতন ভাতা গ্রহনকারী সরকারী কর্মচারীগণকে সরকারের নিয়ম নীতি মেনেই চাকুরী করার বিধান আছে।
বিটিএন ট্রেডিং করপোরেশন নামক একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীর প্রতিষ্ঠানের প্যাডে নিজ খরচে বিসিকের নলগোলাস্থ জমিতে থাকা আবর্জনা সরিয়ে নেয়ার আবেদনটি ১৭ আগষ্ট তারিখে পাওয়ার পর তা কাউকে মার্ক না করে ২৪ তারিখে আরিফের দাখিলকৃত আবেদন ২৫ আগষ্ট রশীদকে মার্ক করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আসল রহস্য। এখানে পরিস্কারভাবে বুঝা যায় যে, আরিফ খান গংদের আবেদনের অপেক্ষায় ছিলেন তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে আরিফ খান আরও তিনজনকে সাথে নিয়ে ২৪ আগষ্ট তারিখে সাদা কাগজে বিসিকের নলগোলাস্থ জায়গার স্ক্যাব মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য বিসিক চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করেছেন। আরিফ খানদের আবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট নথি উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় বিসিকের চাকুরীজীবি কর্মচারীদেরকে ব্যবসায়িক কাজে সহযোগিতা প্রদানের জন্যই এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কর্তব্য কাজে কালক্ষেপন এবং অধীনস্থ কর্মচারীদেরকে ব্যবসায়িক কাজে সহযোগিতা প্রদানের দায়ভার এড়ানোর সুযোগ উপকরণ শাখার উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ মেরাজ উদ্দিন এবং বিসিক কর্তৃপক্ষের নেই। তাদের সম্পাদিত কর্মকান্ডই প্রমাণ করে- তারা সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। বিসিকের নলগোলাস্থ জমি অবৈধ দখলদার মুক্ত করার পর জমিটি রক্ষা করার ক্ষেত্রে বিসিক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বা গাফিলতি বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে জমিটি অবৈধ দখলদার মুক্ত হও্য়ার পর পরই সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া অতিব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলেও বিসিক কর্তৃপক্ষ সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। যাতে কোন মহল বিসিকের উক্ত জমিটি বে-আইনীভাবে দখল করতে না পারে সে জন্যও ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল। বিসিক কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে আজ অবধি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারেননি অতি মুল্যবান উক্ত জমির সদ্ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে। বিসিকের চাকুরী করে বিসিকে ব্যবসায়িক কাজে জড়িত হওয়া ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যথাযথ তাৎক্ষনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেয়া এবং বিসিকের তথা সরকারী সম্পত্তি রক্ষায় বিসিক কর্তৃপক্ষের এ ধরণের উদাসীনতা কিসের আলামত বহন করে-তা শিল্প মন্ত্রণালয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট এজেন্সীগুলোর নিবিড় নজরদারীর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, অন্যথায় ব্যাহত হবে আইনের শাসন।