তরিকুল ইসলাম, খুলনা:
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ¡াসে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা আইলা-আম্পানে চরম ক্ষতিগ্রস্থ কয়রা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রাম নদীর লোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দূর্বল বেড়িবাঁধের কমপক্ষে ৮টি পয়েন্ট ভেঙ্গে ও অর্ধ শতাধিক স্থান থেকে উপর দিয়ে উপচে গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। লোনা পানি প্রবেশ করায় লোকালয়, ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ সহ¯্রাধিক মানুষ রয়েছে। গত বুধবার (২৬ মে) ভোর থেকে কয়রা উপকূলে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। সকাল ৮টার পরপরই সূর্যের দেখা মেলে। এরপর কখনো গুড়ি গুড়ি আবার কখনো ঝড়ো বৃষ্টি। ফের রোদ। এভাবেই রোদ-বৃষ্টির খেলা চলে। এরপরই ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। বেলা সাড়ে দশটার দিকে ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব শুরু হয়। উত্তাল ঢেউ এসে আঘাত করে দূর্বল বেড়িবাঁধে। প্রবল বেগে ঝড় না হলেও নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে লোকালয়ের দিকে নদীর পানি ধেয়ে আসতে থাকে। দুপুরের আগেই উপকূলবর্তী এলকার বহু গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে ঝড়ে কোথায় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কয়রা উপজেলার দশহালিয়ার তিন কিলোমিটার, মঠবাড়ি, তেতুলতলার চর, আংটিহারা, মটবাড়ী, গোবরা ঘাটাখালী, কয়রা সদরের তহসিল অফিসসংলগ্ন বেড়িবাঁধ, দশহালিয়া, কাটকাটা, কাশির হাটখোলা, কাটমারচর, ২ নং কয়রা, ৪নং কয়রা, পবনা, কাশির খালের গোড়া, হোগলা, উত্তর বেদকাশী গাতির ঘেরী, শাকবাড়িয়া, সুতির অফিস, নয়ানি, খোড়ল কাটি, জোড়শিংসহ বেশ কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। আগে থেকে সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে আশ্রয় না নেয়ায় প্লাবিত হওয়ার পর চারপাশে পানিবেষ্টিত মানুষজন উদ্ধার কর্মীদের সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনসহ করনীয় নির্ধারণের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ করেছেন। মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের আসমা বেগম বলেন, ঝড় আসলে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি বাড়িতে প্রবেশের আতেঙ্কে থাকতে হয়। আম্পানেও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছিলো। বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে ঘর প্লাবিত হয়েছে। সদর ইউনিয়নের লঞ্চঘাট এলাকার আনোয়ারা বেগম বলেন, ঝড়ে বেশ কয়েক দফা ঘর ভেঙেছে। আম্পানেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এবারও আতঙ্ক বিরাজ করছে। মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দশহালিয়া গ্রামে সকাল থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা দূর্বল ও ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামতে কাজ শুরু করে। বেলা ১১ টার পর থেকে জোয়ারের পানি বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। একপর্যায়ে অসংখ্য জায়গাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। প্লাবিত হয় লোকালয়। আগে থেকে এখানকার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। উত্তর বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নূরুল ইসলাম কোম্পানী জানান, শাকবাড়িয়া নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা, কাটমারচর, কাশির হাটখোলা, হরিয়ারপুর গাতির ঘেরী এলাকা দিয়ে নদীর পানি উপচে চিংড়ি ঘেরে প্রবেশ করছে। স্থানীয়দের সাথে নিয়ে আমরা পানি আটকানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম বাহারুল ইসলাম জানান, গত বছরের ২০ মে আম্পানের আঘাতে কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা, গোবরা ঘাটাখালী, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে যায়। অম্পানের সে ক্ষতি মানুষ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরপর অবার প্লাবিত হলে কয়রা ইউনিয়ন মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। তিনি কয়রাবাসীকে রক্ষা করতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। খুলনার কয়রা উপজেলার পিআইও বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। তবে কতগুলো গ্রাম প্লাবিত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ৩০ থেকে ৩৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। ভাটিতে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা চলছে। সাইক্লোনে শুকনা খাদ্য পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চেয়ারম্যানগণ সক্রিয় রয়েছেন ভাটা নেমে যাওয়ার সাথে সাথে পানি বের করতে কাজ করবেন তারা। কয়রা উপকূলীয় এলাকায় যাতে টেকসই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয় সে ব্যাপারে সরকার দ্রæত পদক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার মানুষ। পাউবো সাতক্ষীরা বিভাগ-২-এর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান বলেন, কয়রা উপজেলার ২৬টি স্থানের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট জলোচ্ছ¡াস এবং পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে ২ থেকে ৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বাতাসের তীব্রতা বাড়ার কারণে বেশ কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। বাঁধ মেরামতে কাজ চলছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আক্তারুজ্জামান বাবু ভেঙে যাওয়া বেঁড়িবাধের স্থানগুলো পরির্দশনকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সার্বিক সহযোগিতায় আশ্বাস এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দ্রæত বাঁধ মেরামতের নির্দেশ দেন।
বৃহস্পতিবার, জুন ১
সংবাদ শিরোনাম
- জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু
- লঞ্চে মোটরসাইকেল পারাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকছে না
- দেশের সবচেয়ে বড় এডুকেশন এক্সপো সোমবার
- কমলগঞ্জে অভিনব কায়দায় সিএনজি চুরি : কৌশলে নগদে টাকা আদায়
- রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উন্মোক্ত বাজেট ঘোষণা
- এনবিআরের দাবি করা কর দিতে হবে ড. ইউনূসকে
- কাউকে জেতানো বা পরাজিত করা ইসির দায়িত্ব নয়
- ভালুকায় অসংক্রামন রোগের কারণ ও প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত