নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে নতুন অধ্যাদেশ জারির পর দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে বুধবার (১৪) থেকে শুরু করেছেন তিন দিনের কলমবিরতি।
এতে ঢাকাসহ দেশের সব কাস্টম হাউস, শুল্ক স্টেশন, কর অঞ্চল ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এনবিআরের মূল কার্যালয় আগারগাঁওয়েও দেখা গেছে একই চিত্র—অফিসে কর্মীরা উপস্থিত হলেও কোনো কাজ করছেন না, রুমের বাইরে “কলমবিরতি চলছে” এমন লেখা সম্বলিত ফেস্টুন ঝুলছে।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত কমিশনার (কাস্টমস ও ভ্যাট) সাধন কুমার কুন্ডু জানিয়েছেন, সরকার যে পরামর্শক কমিটি করেছিল, সেখানে দেশের যোগ্য ব্যক্তিরা ছিলেন, কিন্তু তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানতে পারেননি, কোন ভিত্তিতে এই অধ্যাদেশ হয়েছে। এ ছাড়া বিসিএস ট্যাক্সেস অ্যাসোসিয়েশনের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৪ মে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা, ১৫ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা এবং ১৭ মে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কলমবিরতি পালন করা হবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, আমদানি-রপ্তানি এবং বাজেট সংশ্লিষ্ট কাজগুলো কলমবিরতির বাইরে থাকবে।
চলমান আন্দোলনের মূল কারণ সোমবার (১২ মে) রাতে সরকারের গোপনীয়ভাবে জারি করা এক অধ্যাদেশ। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এনবিআর আর থাকছে না—এর বদলে গঠিত হয়েছে দুটি পৃথক বিভাগ: ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’। কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ও স্টেকহোল্ডারদের মতামত একেবারেই উপেক্ষা করা হয়েছে।
প্রতিবাদকারীরা বলছেন, তারা সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল; তবে কোনো আলোচনার ভিত্তি ছাড়াই এমন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন মেনে নেওয়া যায় না। তারা চান, অধ্যাদেশ বাতিল করে পরামর্শক কমিটির রিপোর্টের আলোকে, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়ন হোক।
কর্মকর্তারা বলছেন, তারা কোনো ক্যাডারের বিপক্ষে নয়, বরং চায় এমন একটি কাঠামো যেখানে তারা নীতিনির্ধারণে কার্যকর অবদান রাখতে পারবেন। বর্তমান অধ্যাদেশ অনুযায়ী সেই সুযোগ নেই বলেই তারা মনে করেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, দাবি আদায় না হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন। সরকার যদি সত্যিই একটি শক্তিশালী ও কার্যকর রাজস্ব কাঠামো গঠন করতে চায়, তবে সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণই হবে।