শেখ কালিমউল্যাহ নয়ন
জিকে শামীম সামালোচিত একটি নাম। ক্যাসিনোকান্ড অঢেল অর্থ নিয়ে খেয়েছেন ধরা। রয়েছে জেলে। তবে হাসপাতালের কেবিনে আয়েসেই রয়েছেন তিনি। সেখানে বসেই হোয়াট অ্যাপসের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলছেন দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে থাকা বিতর্কিত ব্যক্তিদের সাথে। জেল থেকে জামিনে মুক্তির পরামর্শও করছেন বিভিন্ন জনের সাথে। গুঞ্জন রয়েছে, তার মুক্তির জন্য ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী কোনো কোনো নেতার দ্বারস্থও হচ্ছেন তিনি। এজন্য কোটি কোটি টাকাও খরচ করছেন। কিন্তু এখনো কারো কাছ থেকে তেমন নিশ্চয়তা মেলেনি।
ক্যাসিনোকান্ড গ্রেফতার বিতর্কিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে শামীম বন্দি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটাচ্ছেন হাসপাতালে। কারা সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে জিকে শামীম রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন্স অ্যানেক্স ভবনে । বিগত ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ৭ দেহরক্ষীসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হন জিকে শামীম। রিমান্ড শেষে তাকে পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ( কেরানীগঞ্জ)। তারপর কিছুদিন বন্দি ছিলেন সেখানে।কারা সূত্র জানায়, বুকে শ্বাস কষ্ট, সুগার বেড়ে যাওয়া, হাতে ক্ষতসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন জিকে শামীম। গত বছরের ৫ এপ্রিল ডান হাতের চিকিৎসার জন্য তাকে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। পরে কারা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ভর্তি করা হয় বিএসএমএমইউ হাসপাতালে। দীর্ঘ আট মাস একটানা হাসপাতালে কাটানোর পর বিতর্কের মুখে তাকে কারাগারে ফিরতে হয়। কয়েক মাসের ব্যবধানে তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ( কেরানীগঞ্জ) জেলার মাহবুবুল ইসলাম গতকাল আমাদের কন্ঠকে বলেন, জিকে শামীম অসুস্থ হয়ে পড়লে ফের তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সেখানের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শামীম করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন।
তবে এতোদিনতো করোনার প্রভাব থাকার কথা নয়। কারা কর্তৃপক্ষ বন্দিকে কারাগারে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য হাসপাতালের সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন তিনি কোন ধরনের রোগে আক্রান্ত তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। এদিকে হাপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ১৭ এপ্রিল পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ আসে। সে থেকে ২ মে পর্যন্ত করোনা ইউনিটে ভর্তি ছিলেন। ২ মে পিসিআর ল্যাব টেষ্টে তার করোনা নেগেটিভ আসে। তবে বিএসএমএমইউ করোনা ইউনিটের সংশ্লিষ্ট আহসান হাবিব হেলাল জিকে শামীমের করোনা কিংবা কোন ধরনের রোগে আক্রান্ত সে ব্যাপারে একেবারেই কথা বলতে নারাজ। তিনি এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালকের সাথে কথা বলতে বলেন। তবে কর্তমানে দায়িত্বরত অতিরিক্ত পরিচালকের সাথে কথা বলতে গিয়েও তার সাক্ষাৎ মেলেনি।এদিকে একাধক সূত্র বলেছে, নিয়মিত ফোনালাপ, স্বজন ও শুভাকাঙ্খিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা পেতেই অসুস্থতার বাহানায় হাসপাতালে ভর্তি হন জিকে শামীম। এ জন্য তিনি খরচ করেন মোটা অঙ্কের টাকা।
কারা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করতে হয় তাকে। হাসপাতালে বসে তিনি সারাদিনই হোয়াটঅ্যাপে দেশ বিদেশে থাকা বিতর্কিত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেন। এ তালিকায় রয়েছে দাগি সন্ত্রাসীদের নামও। এখানে বসেই তিনি জামিনে মুক্তির লবিং করছেন বলে জানা গেছে।গ্রেফতারের আগে জি কে শামীম কখনো নিজেকে যুবলীগের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতেন আবার কখনো পরিচয় দিতেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে। চলতেন সামনে পেছনে সাতজন সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের বড় কাজের প্রায় সবই ছিল তার প্রতিষ্ঠানের কবজায়। তাকে গ্রেফতারকালে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই, আটটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানান অভিযান থাকা কর্মকর্তারা।