ঝালকাঠি প্রতিনিধি
৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠি মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলা পাকহানাদার মুক্ত হয়। হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে ঝালকাঠিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সদর উপজেলা পরিষদের শাপলা চত্বর থেকে র্যালি বের করে। র্যালিটি শহর ঘুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুমসহ মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ও স্বাধীনতার সপক্ষের মানুষ অংশ নেয়। পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম। এদিকে নলছিটি মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উপজেলা ইউনিট কমান্ডের উদ্যোগে বধ্যভ‚মিতে পুস্পমাল্য অর্পন, র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঝালকাঠির মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঝালকাঠির নিয়ন্ত্রণ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। ২৭ এপ্রিল হেলিকপ্টার থেকে অবিরাম বোমাবর্ষণ ও গানবোর্ড থেকে কামানের গোলা নিক্ষেপ করতে করতে পাকবাহিনী ঝালকাঠি আক্রমন করে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। হানাদার বাহিনী শহরের দখল নিয়ে ‘দ্বিতীয় কোলকাতাখ্যাত’ দেশের বৃহত্তম এ বাণিজ্য বন্দরে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুড়ে ছাই হয়ে যায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এর পর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজাকার, আলবদর, আলসামস বাহিনীর সহায়তায় নির্বিচারে গনহত্যা, লুট-পাট, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয় নিরিহ মানুষের ওপর। পাকবাহিনীরা শহরের পালবাড়ির একটি দ্বিতল ভবনে ‘টর্চারসেল’ স্থাপন করেন। শহরের পৌরসভা খেয়াঘাট, পালবাড়ি গোডাউনঘাট, রমানাথপুর মসজিদ সংলগ্ন পুকুর পাড়, দেউলকাঠি, গাবখান, খেজুরা গ্রামে শত শত নিরিহ বাঙ্গালীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৭ ডিসেম্বর বিকেলে পাক মিলিশিয়া বাহিনী ঝালকাঠির উত্তর অঞ্চলে অভিযান শেষে নৌপথে বরিশাল ফেরার সময় ঝালকাঠি শহরের কাঠপট্টি চরে ২৭-২৮ জনের একটি রাজাকারের দল নামিয়ে দিয়ে যায়। এসময় মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় জনতা তাদের ঘেরাও করে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে। শত্রæ মুক্ত হয় ঝালকাঠি। একই দিন পাকহানাদার মুক্ত হয় নলছিটি। ৭ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা নলছিটি থানা ও রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমন করে পুলিশ ও রাজাকারদের নিরস্ত্র করেন। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় তালতলা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। পরের দিন ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠি ও নলছিটি শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পতাকা হাতে মুক্তিকামি মানুষের ঢল নামে। জয় বাংলার ¯েøাগানে মুখরিত হয় ঝালকাঠি ও নলছিটি শহর।