নিজস্ব প্রতিবেদক
গাজীপুরের টঙ্গীতে কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচারে অতিষ্ট এলকাবাসি। এখানে ঠিক কতগুলো অপরাধী গ্রæপ রয়েছে সে তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে। এসব গ্রæপের সদস্যরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে আড্ডা, তরুণিদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন ও সাধারণ মানুষকে অহেতুক হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। মোটর সাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো এসব কিশোরদের অত্যাচার এলাকাবাসিকে সহ্য করতে হয় নিরবে। চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এরা। উঠতি বয়সী কিশোরদের মধ্যে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রæপের সঙ্গে অন্য গ্রæপের মারামারি ও উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। একেকটি গ্রæপকে আবার শেল্টার দিচ্ছে এলাকার স্বার্থান্বেষী কতিপয় বড় ভাই। কোনো কোনো মাদক ব্যবসায়ী এদের লালন করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, টঙ্গীর আমতলী, কেরানীরটেক এলাকায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কিশোর গ্রæপ। তাদের প্রশয়দাতাদের তালিকায় রয়েছে জনৈক আলাল, রহিম, উজ্জ্বল, আফজাল, বাবা টাওয়ারের রনি, আক্তার, মিজানুর রহমান মিঠু, রহিমা ও রানি। গত রমজানে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে সুমন আহমেদ মজুমদারের পরিবারের উপর হামলা চালায় সোহেল রানা সিন্ডিকেট। এসময় ককটেল বিস্ফোরন ঘটিয়ে এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে। সন্ত্রাসীদের হামলায় সুমন আহমেদ মজুমদারের ছোট ভাই বিপ্লব আহমেদ মজুমদার ও ছাদ্দাম আহমেদ মজুমদারকে গুরুতর আহত হন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় আহতদের প্রথমে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বিপ্লব মজুমদারকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এছাড়া আলালের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। রহিমের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদকের মামলা। কিছুদিন আগে ৩০০ পিছ ফেন্সিডিলসহ রহিমের এক সহযোগী গ্রেফতার হয়। রহিম দীর্ঘদিন জেল খাটার পরে জামিনে এসে পুনরায় এলাকায় মাদক কারবার শুরু করে। গত ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশ ৫ হাজার পিচ ইয়াবাসহ উজ্জ্বল ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘদিন জেল খাটার পর জামিনে এসে পুনরায় এলাকায় মাদকের কারবার শুরু করে উজ্জ্বল। তার ইয়াবা কারবারের টাকার লেনদেন ও হিসাব নিকাশ পরিচালনা করে নিজের ছোট ভাই আফজাল। উজ্জ্বল টঙ্গীর মধুমিতা, কালীগঞ্জ, কোনাবাড়ী, বিসিক, ফকির মার্কেট ও উত্তরার জয়নাল মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবার করে গ্রামের বাড়ি সিলেটে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে। কিছুদিন আগে উজ্জলের সহযোগী নিজ বাড়ির দারোয়ান ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এঘটনার পর থেকে উজ্জ্বল আড়ালে থেকে তার নিয়ন্ত্রিত কিশোর গ্যাং পরিচালনা করছেন।
সূত্র জানায়, রনি দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় মাদক কারবার করে আসছে। তার মাদক কারবারে পরিচালনায় গড়ে তুলেছে সক্রিয় কিশোর গ্যাং বাহিনী। তার অবৈধ মাদকের টাকায় গড়ে তোলা বাড়িটি এলাকায় বাবা টাওয়ার নামে পরিচিত।
মাদক ব্যবসায়ী রহিমা ও রানীকে সহেযোগিতা করতে আক্তারের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে ২৫-৩০ জনের সক্রিয় কিশোর গ্যাং বাহিনী। বউবাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুছ মিয়া বলেন, এ আর আলাল, রহিম, উজ্জ্বল, মিজানুর রহমান মিঠু, আফজাল, রনি ওরফে বাবা টাওয়ার রনি, আক্তার, রহিমা ও রানি’র বিভিন্ন অপরাধ মুলক কাজের প্রশ্রয়দাতা হিসেবে নাম রয়েছে টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের এক প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে।
টঙ্গীর ‘সবচেয়ে অপরাধপ্রবণ’ এলাকা বউবাজার, পূর্ব আরিচপুর ও নদীবন্দর। এখানে তুরাগ নদের পাশ ঘেঁষে হাঁটার পথ, তুরাগবাজার, ঢাকা ডাইংয়ের পেছনের দিকসহ আশপাশের এলাকায় সারাক্ষণই থাকে কিশোরদের আড্ডা। অন্ততঃ ১৫টি দল এখানে গড়ে উঠেছে। একেকটি দলে ১০ থেকে ১২ জন করে সদস্য এদের মাদক ব্যবসা শেল্টার দিয়ে থাকেন জনৈক রফিক নামে এক ব্যক্তি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাদক মামলায় গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রত্যেকটি অপরাধমূলক ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। জানা যাবে ঘটনার আড়ালে থাকা গডফাদার কিংবা প্রশয়দাতাদের নাম। এলাকাবাসি এসব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গোপন প্রশাসনকে গোপন অনুসন্ধ্যানের দাবি করেন।