বগুড়া প্রতিনিধি
সেলামির টাকা কম পেয়ে রোগীর ‘অক্সিজেন মাস্ক’ খুলে হত্যার দায়ে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিছন্নকর্মী আসাদুল ইসলাম ধলুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর আব্দুলাহপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুল ইসলাম ধলু ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশের চিকিৎসারত অবস্থায় অক্সিজেন মাস্ক বিচ্ছিন্ন করায় বিষয়টি স্বীকার করেন। ধলু বিগত ৬ বছর ধরে ওই হাসপাতলে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করছে। প্রতিদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করার পর বিকাল থেকে হাসপাতালের জরুরি আউটডোরে রোগীদের ট্রলিতে করে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। এই কাজের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করতো। গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে গাইবান্ধার সাঘাটায় মোটরসাইকেলের সঙ্গে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন বিকাশ। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে তাকে নেওয়া হয় বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নকর্মী বিকাশের সাথে বকশিশের টাকা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় বিকাশের মুখের ‘অক্সিজেন মাস্ক’ খুলে দেয় ধলু। এরপরই বিকাশের মৃত্যু হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাÐের ঘটনায় র্যাব-১২ ও র্যাবের গোয়েন্দারা ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর আব্দুলাহপুর থেকে আসাদুল ইসলাম ধলুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ধলু। একইদিন দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্সের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিহত শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছালে জরুরি বিভাগের হাসপাতালের দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী আসাদুল ইসলাম মীর ধলু ভিকটিমের অভিভাবকের কাছে চিকিৎসা দালালির নামে ৫০০ টাকা দাবি করে। পরবর্তীতে ২০০ টাকায় রাজি হয় ধলু। ভিকটিমকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক রোগীকে জরুরি সেবা দিয়ে অক্সিজেন লাগিয়ে দেন ও ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। এরপর ভিকটিমকে ধলু সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। বেড না থাকায় ভিকটিমকে ফ্লোরে বেড দেওয়া হয়। এরপর ভিকটিমের অভিভাবকের কাছে টাকা চাইলে তাদের কাছে ১৫০ টাকা থাকায় তাকে সেটাই দেওয়া হয়। তখন সে আরও টাকা দাবি করলে বিকাশ চন্দ্র দাশের অভিভাবক বলে আমাদের কাছে আর কোনো টাকা নেই। তখন ধলু উত্তেজিত হয়ে বিকাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে গালিগালাজ করে। এরপরই শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভিকটিমের মৃত্যু হয়। তখন হাসপাতালে অন্যান্য রোগী ও পার্শ^বর্তী বিভিন্ন লোকজন জড়ো হয়। এ সময় হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তখন সুযোগ বুঝে আসাদুল ইসলাম মীর ধলু পালিয়ে যায়।