আজম রেহমান, ঠাকুরগাঁও
গ্রাম্য শালিসে গৃহবধূকে অমানবিক বিচারে মারপিট করে মাথার চুল কেটে দিয়েছে নারী চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার হিমু। এ ঘটনায় পীরগঞ্জ থানায় ঐ চেয়ারম্যান সহ তার ৯ সহযোগীর বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শহর বানু বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গৃহবধু বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত রবিবার রাত ১১ টার দিকে বৈরচুনা ইউনিয়নের ইন্দ্রইল মোল্লাপাড়ার অছিম উদ্দিনের বাড়ীতে বসা বিচারস্থলে নেয়া হয় অমানবিক সাজার শিকার গৃহবধু শহর বানু(৩৬)কে। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান টেলিনা সরকার হিমু শতাধিক জনতার সম্মুখে অশালীন কথাবার্তা, মারপিট করে মাথার চুল কেটে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন। সহযোগীরা নিজেদের মত করে মারপিটের পর চেয়ারম্যান নিজেই কাচি দিয়ে গৃহবধুর মাথার চুল কেটে দেন। এরপর দায়মুক্তির জন্য ফাকা ষ্ট্যাম্পে সহি স্বাক্ষর নিয়ে ৩ দিন ধরে গৃহবধু ও তার স্বামীকে গৃহবন্দি করে রাথা হয়। অবশেষে ১৫ জুন সকালে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহবধু চিকিৎসার জন্য পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হন এবং পুলিশের আশ্রয় প্রার্থনা করেন। সেখানেও হস্তক্ষেপ করা হয় বলে অভিযোগ গৃহবধুর। তিনি বলেন, থানা পুলিশ প্রভাবান্বিত হয়ে আমার বলা কথা বিকৃত করে এজাহারে উল্লেখ করে চেয়ারম্যানকে ৪ নম্বর আসামীভুক্ত করে তার অপরাধকে ছোট করে দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানা পুলিশের নিজেদের অফিসিয়াল কম্পিউটারে লেখা এজাহারে স্বাক্ষর নেয়া হয় অশিক্ষিত বাদীনি শহর বানু ও তার স্বামী হাসেন আলীর। অসহায় শহরবানু বলেন, চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে আমার মাথার সমস্ত চুল কেটে দিলেও, রুজুকৃত এজাহারে চুল কেটে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধকে সাধারন ঘটনা হিসেবে দেখিয়ে বলা হয়েছে চেয়ারম্যান তার মাথার পিছনের চুল ৬ ইঞ্চি পরিমান কেটে দিয়েছে। এজাহারের বর্ননায় সমগ্র ঘটনা অন্যান্যদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে এজাহারকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। এবং গুরুতর অপরাধের অপরাধীদেরকে তাকে বাচানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। আমি গরীব বলে আমার কথাগুলো হুবহু এজাহারে লেখা হয়নি। এ বিষয়ে থানায় চেয়ারম্যানের সহযোগী আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক হোসেন,রবিউল ইসলাম, চেয়ারম্যান টিলিনা সরকার হিমু, রমজান আলী, আনছারী বেগম, আম্বারী, আনারুল ইসলাম ও শরিফুল ইষলাম সহ অচ্ঝাত ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ১৪৩/৩২৩/৩৫৪/৩৮৬/৫০৬/১১৪ ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে। যার নং ১৬/১৩৪ তারিখ ১৫.০৬.২৩ ইং। বিষয়টি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. খাজিম উদ্দিনের মতামত চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি মামলার ঘটনাস্থল তদন্ত করেছি, আসামীরা পলাতক থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে এজাহারের বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ জাহাঙগীর আলম বলেছেন, এজাহার কে কিভাবে লিখেছে আমি জানিনা, এজাহার পেয়ে সাথে সাথে মামলা রুজু করেছি।