আব্দুল মালেক, নীলফামারী
নীলফামারীর ডোমারে সিয়াম আহমেদ(১২) নামে এক স্কুল ছাত্রকে মাটিতে ফেলে বুকে লাথি ও বেধরক মারধরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনিছুজ্জামানের বিরুদ্ধে। স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে পাঠালেন হাসপাতালে বাবাকে লাঞ্ছিত করে দিলেন জেলে পাঠিয়েছেন ওই কৃষি কর্মকর্তা। এসময় স্থানীয়রা ওই শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান। সিয়াম আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রে নীর শিক্ষার্থী ও ছোটরাউতা ডাঙ্গাপাড়া এলাকার মোফাজ্জল হোসেন মোফার ছেলে। এদিকে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রের বাবা তার ছেলেকে মারধরের কারন জানার জন্য উপজেলা পরিষদে কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে সেখানে কৃষি কর্মকর্তার সাথে বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। পরে সোমবার রাতে কৃষি কর্মকর্তা সিয়ামের বাবাসহ ৬জনের নাম উল্লেখ করে সরকারী কাজে বাধা ও অফিস ভাঙচুরে অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রের বাবাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগীর স্কুল ছাত্রের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনিছুজ্জামানের ছেলে উপজেলা আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র রাহাদ আহমেদ মৃন্ময় সাথে একই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম আহমেদের খেলার মাঠে সাইকেল চালানোকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বাধে। ঝগড়ার এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি মৃন্ময়ের মা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার স্ত্রী দেখতে পেয়ে মাঠে গিয়ে স্কুলছাত্র সিয়ামকে মারধর করে টেনে হেচড়ে তাদের কোয়াটারের দিকে নিয়ে যায়।
এক পর্যায়ে তিনি তার স্বামীকে ফোন অবগত করলে কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনিছুজ্জামান অফিস থেকে বের হয়ে এসে উত্তেজিত হয়ে তাদের কোয়াটারের সামনে এসে সিয়ামকে মারধর ও তার বুকে লাথি মারতে থাকেন । মারধরের ঘটনার সময় মাঠে থাকা শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসে কারন জানতে চাইলে ওই কৃষি কর্মকর্তা তাদেরও মারধোর করেন। এ সময় স্থানীয়রা সিয়ামকে উদ্ধার করে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। ওইদিন সন্ধ্যায় সিয়ামের বাবা মোফাজ্জল হোসেন মাঠে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে নিয়ে উপজেলা পরিষদে কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান এবং কৃষি কর্মকর্তার কাছে ছেলেকে মারধরের কারন জানতে চাইলে উভয়ে তর্ক বির্তকে জড়িয়ে পরেন। এক পর্যায়ে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পুলিশ এ সময় সিয়ামের বাবা মোফাকে আটক করে। পরে রাতেই কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান বাদী হয়ে ৬জনের নাম উল্লেখ করে ও কয়েকজনকে অজ্ঞাত করে সরকারী কাজে বাধা, অফিসে ঢুকে কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার অভিযোগে থানায় মামলা করেন। মামলা নং-০৬। ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রের মা স্বপ্না আক্তার বলেন, আমার ছেলে সিয়াম দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। তার খাদ্যনালি চিকন হয়ে গেছে। ৫ম শ্রে ণিতে পড়লেও অসুস্থ থাকার কারনে তাকে খাৎনা(মুসলমানি) দেওয়া যায়নি। অপারেশনের জন্য দ্রæত ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আমার ছেলে ভুল করলে তিনি আমাকে জানাতে পারতেন। আমি তাকে শাসন করতাম। কিন্তু তিনি এসে আমার অসুস্থ ছেলের বুকে লাথি মারেন। তিনি বলেন, একজন দায়িত্বশীল অফিসার হয়ে এমন জঘন্য কাজ কিভাবে করেন তা ভাবতে অবাক লাগে? আবার উল্টো তিনি আমার স্বামীসহ এলাকার লোকজনের নামে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী মুন্না ইসলাম জানান, আমি অফিসার স্যারের কাছে জানতে চেয়েছি সিয়ামকে কেন মারছেন? এই কথা বলার সাথে উনি আমার শার্টের কলাট ধরে। এরপর গলা চেপে ধরে বলেন, উপজেলায় কোন ডাঙ্গাপাড়ার লোক আসতে পারবেনা বলে হুমকি দেন। ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডা. নাহিদা বলেন, শিশুটি গায়ে ও বুকে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। শিশুটিকে বর্তমানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সে সুস্থ্য আছে। স্কুলছাত্র সিয়াম বলে , আমি বিকেলে সাইকেল নিয়ে মাঠে গেলে আমাকে দেখে মৃন্ময়(১১) বলে মেথর যারা সাইকেল চালায় তারা। তাদেরকে কেউ দেখতে পায় না। তখন আমি বললাম আমি তো সাইকেল চালাই, তাই বলে আমি কি মেথর। মৃন্ময় ভালো হয়ে যাও বলায় সে আমাকে মারধর করে, আমিও গায়ে হাত তুলি। পরে আন্টি এসে আমাকে মারতে মারতে তাদের বাসার সামনে নিয়ে যায়। আন্টি আংকেল কে ফোন দিলে তিনিও এসে আমাকে মারে এবং আমাকে মাটিতে ফেলে বুকের উপরে পা তুলে দেন। আমি আংকেল কে জোর হাত করে বলি আংকেল আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দেন। কিš‘ উনি মারতে থাকেন। এ ব্যাপারে ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনিছুজ্জামানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাছাড়া এটি ডোমার উপজেলা পরিষদের বিষয়। তারা বসে হয়তো কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রমিজ আলম বলেন, স্কুলছাত্র সিয়ামকে মারধরের বিষয়টি জানা নেই। সোমবার সন্ধ্যায় অফিসে এসে কিছু লোক হামলা করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে।