# উন্নত বিশ্বের আধুনিক বিমানগুলোর আদলে দৃষ্টিনন্দন ও
সুপরিসর হচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দর
উমর ফারুক আলহাদী
ঢেলে সাজানো হচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকের বেবিচক) কার্যক্রম। জনবল সংকটসহ নানা সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি এ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। নতুন করে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দেড় হাজারের বেশি জনবল। হয়রত শাহজালাল বিমানবন্দরকে করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন সুপরিসর আধুনিক বিমাসবন্দর। পাশাপাশি দেশের বিমানবন্দরগুলোর বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের কাজ সংস্থাটি পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা। হয়রত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মানের মহাপ্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল বিভাগ জানায়, মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও হযরত শাহ্জালাল (র:) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ ১৬ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হওয়ার পথে রয়েছে দেশের বৃহত্তম বিমানবন্দরটির তৃতীয় টার্মিনাল। গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের ছোবল পড়ার পর টার্মিনালের কাজের গতি কমে যায়। সেখানকার একাধিক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়। পরে কিছু শ্রমিক কাজ ফেলে বাড়ি চলে যায়। তবে পরবর্তীতে শ্রমিকরা আবার কাজে যোগ দেয় এবং পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। একাধিকবার সরকার কর্তৃক লকডাউন দিলেও টার্মিনালের কাজে থেমে নেই। তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, টার্মিনালের ডিজাইনগত মান বৃদ্ধিও জন্য নির্মাণ কাজ শেষ হতে আরো ৩ মাস বাড়তে পারে। মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন ও স্যামসাং যৌথভাবে এ প্রকল্পের কাজটি করছেন। প্রকল্পে বর্তমানে কাজ করছেন প্রায় ১২০০ শ্রমিক। এই কাজ শেষে হলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী সেবার মান আরো উন্নত হবে। এতে করে বছরে উন্নত সেবা দেয়া যাবে আরো ২০ লাখ যাত্রীকে। পাশাপাশি আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাত। অন্যদিকে, ১ হাজার ৬১৬ জনকে নিয়োগ দিতে ইতোমধ্যেই সংস্থাটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
তিন দফার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রকৌশলী ও অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো: মফিদুর রহমান বলেন,দেশের আকাশ পথের যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করন এবং বিমান বন্দরগুলোর উন্নয়নের জন্য আমরা বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বিশেষ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ মহাপ্রকল্প, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প,সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ আমি ব্যক্তিগতভাবে সুপারভাইজ করছি। প্রতি সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ডেকে কাজের আপডেট নিচ্ছি। করোনাকালেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্মাণকাজ চলছে। চেয়ারম্যান আরো বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে সিভিল এভিয়েশন জনবল সংকটে নানাবিধ সমস্যায় ছিল। এ সমস্যা ও সংকট নিরসনের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায় ১ হাজার ৬১৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পরবর্তীতে আরো কয়েক হাজার জনবল নিয়োগ গেয়া হবে।
তিনি বলেন, যুগের চাহিদা পুরন ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সিভিল এভিয়েশনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সকল সুযোগ সুবিধিসহ যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি ও ফ্লাইট পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষন এবং নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখে হয়রত শাহাজালাল বিমানবন্দরকে আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। মহামারি করোনার প্রতিকুল পরিবেশেও নির্মাণ কাজ চলছে। বিমানের ফ্লাইট পরিচালনাসহ সিভিল এভিয়েশনের কাজ একদিনের জন্যেও বন্ধ হয়নি। বেবিচক জানিয়েছে, ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ করছে জাপানের মিটসুবিশি, ফুজিতা ও কোরিয়ার স্যামসাংÍএই তিন কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়াম। যার নাম এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম। নির্মাণ কাজে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি টাকা অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, বর্ষার মৌসুম শুরুর আগেই মাটি কাটা ও ভরাটের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। মাটি ভরাট শেষে ওপরের অংশের ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। মূল টার্মিনাল ভবনের পিলার নির্মাণ কাজও প্রায় শেষের পথে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ২০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পথে। সিভিল এভিয়েশন প্রকৌশল বিভাগ জানায়, তৃতীয় টার্মিনালে থাকছে ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ৩৭টি বিমান পার্ক করার জায়গা, ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার সুবিধা, ৬৩ হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি আমদানি-রপ্তানি কার্গো কমপ্লেক্স ও ১১৫টি চেকইন কাউন্টার।
এ ছাড়াও থাকবে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন ও বহুতল কারপার্ক। তিন তলা এই টার্মিনাল ভবনটি স্থাপত্যরীতিতেও অনন্য। নান্দনিক নকশায় এর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। কেবল টার্মিনাল ভবন নয়, ভবনের বহির্বিভাগেও থাকবে এমন নকশার ছাপ। নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকেরা করোনায় আক্রান্ত হলে দুশ্চিন্তা বাড়ে কাজের অগ্রগতি নিয়ে। তবে এখন প্রকল্প এলাকায় নির্মাণ শ্রমিকদেও আবাসনের ব্যবস্থা করে করোনা সংক্রমণ রোধ করে চলছে কার্যক্রম। বিশ্বর দৃষ্টিনন্দন হবে শাহজালাল বিবানবন্দর : সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী মো: আবদুল মালেক বলেন, পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) ও এক হাজার ২৩০টি গাড়ি রাখার সুবিধা, ৬৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আমদানি- রফতানি কার্গো কমপ্লেক্স, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার সব মিলিয়ে বিশ্বেও শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দরের সারিতে নাম লেখাবে শাহজালাল। ২০১৯ সালের শেষে শুরু হওয়া এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের জুনে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টার্মিনালটিতে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের একটি ভবন তৈরি করা হবে। ভবনটির নকশা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি এনওসিডি- জেভি জয়েন্ট ভেঞ্চার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি। সিভিল এভিয়েশন প্রকৌশল বিভাগ জানায়, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নীতকরন প্রকল্পের কাজও শেষ পর্যায়। এছাড়া সৈয়দপুর যশোর ও রাজশাহী শাহ মখদুম বিমানবন্দর রানওয়ে স্মপ্রসারণ ও নতুন ভবন নির্শান করা হচ্ছে। যা খুব দ্রুত সম্পন্ন হবে।