কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে তীব্র ¯্রােতে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি বাড়ার পাশাপাশি ভাঙ্গন আতঙ্ক বিরাজ করছে নদীপারের মানুষের মাঝে। তিস্তার ভাঙ্গনে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরাঘাট, কাশিমবাজারে গত দুই দিনে প্রায় ২০/২৫ টি বাড়িসহ ৫০-৬০বিঘা ফসলি জমি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন স্থাপনা। সরেজমিনে পশ্চিমবজরা ঘাট ও কাশিমবাজার ঘুরে দেখা গেছে, পশ্চিমবজরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরবজরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বজরা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ, পশ্চিমবজরা পুরাতন হাট, বজরা পূর্বপাড়া জামে মসজিদ ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে। বজরাঘাট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বারি, মোজাম্মেল হক, রেজাউল করিম ও গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদটি রক্ষা করার জন্য বড় বড় গাছ, গাছের ডাল ফেলে পানির গতিপথ পরিবর্তন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেও মসজিদটি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে একটি প্রাইমারী স্কুল। স্কুলটি ভেঙ্গে গেলে সমাজের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে ও ছেলে-মেয়েদের আলোর পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এলাকাবাসী মনের ক্ষোভ নিয়ে বলেন, এমপি থেকে শুরু করে ইউপি সদস্যরা শুধু ভোট নিয়ে যায় বড় বড় বুলি আউরে আমাদের এমন বিপদে তাদের কোন সাড়া পাই না। তারা দাবি জানিয়েছেন এখনও সময় আছে অতিদ্রæত জিওব্যাগ ডাম্পিং করলে এলাকার প্রায় কয়েকশ’ বাড়ি আবাদি জমি, স্কুলসহ একটি টি-গ্রোয়েন রক্ষা করা যাবে। অপরদিকে, তিস্তা নদী বেষ্টিত গুনাইগাছ ইউনিয়নে নাগড়াকুড়া শুকদেব কু- এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাদাম চাষিরা বাদাম নিয়ে যে স্বপ্ন দেখত, বাদাম ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় তারা এখন বাদাম নিয়ে পড়েছে দুশ্চিন্তায়। অনেক কৃষককে অপরিপক্ব বাদাম তুলে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ রেজাউল করিম আমিন বলেন, নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে বজরা ইউনিয়নকে রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট যোগাযোগ করেছি। তারা শুধু কাজ করবে বলে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। অতিদ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এলাকার চরম ক্ষতি হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং ইতোমধ্যে বজরা কাশিমবাজার প্রকল্পের কাজ অনুমোদন হয়েছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ পশ্চিমবজরা এলাকা পরিদর্শনে আসবেন বলে জানিয়েছেন। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে আগামী সপ্তাহে ভাঙ্গন রোধে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে গাইবান্ধা থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, অবিরাম বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিস্তা নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গত এক সপ্তাহে তিস্তার পেটে বিলীন হয়ে গেছে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার গ্রাম এবং চÐিপুর, তারাপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের তিন শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি। ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ও বালির বস্তা ফেললেও তা কোন কাজে আসছে না। এখন ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে প্রায় এক হাজার ঘরবাড়ি। ভাঙ্গনের আশঙ্কায় নদীপারে বসবাসরত এসব পরিবার এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা পদক্ষেপ থামাতে পারছে না তিস্তার ভাঙ্গন। ফলে তিস্তার অব্যাহত ভাঙ্গনে ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। এদিকে উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ি, পাঁচপীর খেয়াঘাট, তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দা, লাঠশালা ও হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজার খেয়াঘাটসহ কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত সাত দিনের ব্যবধানে কাশিমবাজার গ্রামের তিন শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারা বলেন, যে হারে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে, তাতে করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী নাজিমাবাদ বিএল উচ্চ বিদ্যালয় রক্ষা করা যাবে না। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টি রক্ষা করার জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারে জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি জানান, তার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ভাঙ্গন রোধে জোরালো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সাতদিনের ব্যবধানে কাশিমবাজার, লখিয়ারপাড়া, মাদারিপাড়া, চরচরিতাবাড়ি, চরিতাবাড়ি গ্রামে ৩ শতাধিক বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন কবলিত পরিবাগুলোর আশ্রয় নেয়ার মতো জায়গা নেই। এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, হরিপুর ইউনিয়নের কাশিমবাজারে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কোন কোন ইউনিয়নে জরুরী কার্যক্রমও চলছে।
বৃহস্পতিবার, জুন ১
সংবাদ শিরোনাম
- জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু
- লঞ্চে মোটরসাইকেল পারাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকছে না
- দেশের সবচেয়ে বড় এডুকেশন এক্সপো সোমবার
- কমলগঞ্জে অভিনব কায়দায় সিএনজি চুরি : কৌশলে নগদে টাকা আদায়
- রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উন্মোক্ত বাজেট ঘোষণা
- এনবিআরের দাবি করা কর দিতে হবে ড. ইউনূসকে
- কাউকে জেতানো বা পরাজিত করা ইসির দায়িত্ব নয়
- ভালুকায় অসংক্রামন রোগের কারণ ও প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত