শহিদুল ইসলাম, ত্রিশাল থেকে ফিরে:
ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামীলীগের সন্মেলন আগামী ২১ জুলাই । সন্মেলনকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামলীগের গুরুত্বপূর্ন সভাপতি পদে সাংসদ হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, নবী নেওয়াজ সরকার, সাবেক সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক পদে ত্রিশালের জননেতা ইকবাল হোসেন,রাজাকারের মেয়ের জামাতা জিয়াউল হক সবুজ,উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জুয়েল সরকার, এ কে এম মাহাবুল আলম পারভেস, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম মন্ডল প্রমুখ। জিয়াউল হক সবুজ আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিরোধীতা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন করে আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে পরাজিত করা , দলীয় পদ ব্যবহার করে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলী বাণিজ্যসহ নানান বিতর্কিত কর্মকান্ডের জড়িতরা দুই পদে প্রার্থী হওয়ায় অস্বস্তিতে দলের তৃণমূলের নেতা- কর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সন্মেলনে ত্রিশাল আওয়ামী লীগে ৪টি গ্রুপে বিভক্ত । সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন, বর্তমান এমপি হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী, জেলা আওয়ামলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নবী নেওয়াজ সরকার , পৌরসভার মেয়র আনিছুজ্জামান আনিছ ও আবুল কালাম প্রমুখ।
তন্মধ্যে নবী নেওয়াজ সরকার আওয়ামীলীগের নৌকা মার্কার প্রার্থীর বিপক্ষে প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র আনারস মার্কার প্রার্থীর হয়ে নির্বাচন পরিচালনা করে । আওয়ামীলীগ পরাজিত হয় । সেই তিনিই হয়েছেন সভাপতি প্রার্থী? সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জিয়াউল হক সবুজ । তার শশুর আদিল সরকার একজন তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী । তিনি পলাতক আছেন । অভিযোগ আছে, শুশুরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে জিয়াউল হক সবুজ রাতের আঁধা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করেন । এক এগার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগারে থাকাকালে জিয়াউল হক সবুজ সংস্কারপন্থী এক নেতার অনুসারী হন । কিংস পার্টিতে যোগদানও করেন । ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক ছিলেন তিনি । তার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্য, বিতর্কিত কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে নিজ দলীয় নেতা- কর্মীরা তাকে গণধোলাই দেয় বলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো: কামাল হোসেন নিশ্চিত করেন । ৩৭ সদস্যের কমিটির মধ্যে ৩৪ জন পদত্যাগে করে পরে জেলা ছাত্রলীগ কমিটি বিলপ্ত করে পারভেসকে আহবায়ক ও ইকবাল হোসেন,আশরাফুল ইসলাম মন্ডল, মানিক সাইফুল ও মো: কামাল হোসেনকে যুগ্ম আহবায়ক করে ত্রিশাল উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেন। জিয়াউল হক সবুজ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক তিনি ।
তিনি বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরোধী আনারসের পক্ষ্যে কাজ করেন । ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারসের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচন করেন । প্রচারণা করেন । মিছিল মিটিং সমাবেশ করেন । নৌকার বিরুদ্ধে থাকেন সব সময় । ফেসবুকসহ সোস্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠে। তারা নৌকার বিরুদ্ধে অশালিন বক্তব্য দেওয়ার কারনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিয়াউল হক সবুজ ও নবী নেওয়াজ সরকারকে নিয়ে হয় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড । ত্রিশালে বর্তমানে চার গ্রুপ আ.লীগের সাবেক এমপি আ্যাডভোকেট রেজা আলী, সাবেক জেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি বীর মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল মতিন সরকার, বর্তমান এমপি রুহুল আমীন মাদানী, পৌরসভার জনপ্রিয় মেয়র আনিছুজ্জামান আনিছের । আ্যাডভোকেট রেজা আলী গ্রুপের নেতৃত্বে রাজাকারের মেয়ের জামাতা জিয়াউল হক সবুজ এবং নবী নেওয়াজ সরকার আনারসের পক্ষে প্রকাশ্যে সভা করেছেন । তারা বিতর্কিত হয়েছেন কয়েকবার । জিয়াউল হক সবুজ এডভোকেট রেজা আলীর সাথে থেকে নিয়োগ বাণিজ্য , বদলী বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন । স্বতন্ত্র হয়ে পৌরসভার মেয়র হওয়ার যোগ্যতা অর্জিনকারীকে দল থেকে বহিস্কার দেখানো হলেও এরচাইতেও অধিক অপরাধীদের দলে অবস্থান তৈরি করে দলকে বিতর্কিত করা হচ্ছে বলেও মতামত ব্যক্ত করছেন দলটির সমর্থক ও নেতা- কর্মীরা । সাবেক যুবলীগ নেতা মোঃ কামাল হোসেন বলেন , একই অপরাধ করলে একজনের যে শাস্তি হবে অপরেরও তাই হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। রাজাকারের জামাতা নানা অপকর্মে জড়িতরা অজনপ্রিয় হয়েও আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে মরিয়া হয়ে নেমেছে।
এতে অস্বস্তিতে পড়েছে আওয়ামী লীগের তৃনমুল নেতাকর্মীরা। প্রকট হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। বঞ্চিত হচ্ছে দলের ত্যাগী নেতারা ,ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নেতাকর্মীরা । এটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। এরা নেতেৃত্বে এলে তৃণমূলে চিড় ধরবে। তৃণমূলের তালিকায় যোগ্য নেতাদের নাম না পাঠানো, বিতর্কিত ও রাজাকার পরিবারের সদস্যের অভিযোগের পাহাড় । তাদের বিরোধ, মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্য ছাড়া রাজনৈতিক কোন আলাপই নেই তাদের বিরুদ্ধে । তারা রাজনৈতিক চর্চার চেয়ে ক্ষমতার চর্চাকে কাজে লাগায়। বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাবি-স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিং এবং কেন্দ্রে নাম পাঠানোর সময় স্বজনপ্রীতি ও মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা কারণে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। জনপ্রিয় মেয়র আনিছুজ্জামান আনিছ নির্বাচিত হয়েছেন কয়েকবার। স্বজন পোষণ ও অর্থ লেনদেন হচ্ছে, স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিংও চলছে। আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। আমার জনপ্রিয়তার কারনে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী করেন । তখন উপজেলা আওয়ামী লীগ ,যুবলীগ সহ বিভিন্ন সংগঠন ওপেন নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন। এলাকায় নেতা কর্মীদের দলীয় কর্মকাণ্ডে সরব ভূমিকা পালন করেন। তিনি আরও বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জিয়াউল হক সবুজ একজন রাজাকারের আদরের মেয়ের জামাতা।
একজন রাজাকারের জামাতা কিভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়? এবিষয়ে জিয়াউল হক সবুজের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র আনিছুজ্জামান আনিছ বিষয়ে জানা গেছে, অভিযোগসমূহ কোনপ্রকার তদন্ত না করে অভিযোগপত্রে বহিস্কার করার সুপারিশ করা হয়েছিল এবং বহিস্কার করা ছিল অযৌক্তিক। আওয়ামলীগের রাজনীতির দুর্দিনের বন্ধু আনিছ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শেও সৈনিক, ত্রিশাল আ.লীগের রাজনীতির পুনর্জাগরণ শুরু করেন । বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। অভিযোগ উঠেছে, মেয়র আনিছুজ্জামানের প্রতিপক্ষরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেই সংগঠনের পদ পেতে মড়িয়া হয়ে উঠেছে । পক্ষান্তরে দলের দু:সময়ে অবদান রেখেছেন মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান আনিছ । ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। নিজের মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করে চলেছেন । দলীয় নেতা কর্মীরা বলছেন, এরাই চক্রান্ত করে মেয়র আনিছকে বহি:স্কার করিয়েছে । মেয়র আনিছের কি অপরাধ ছিল ? আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. দিপু মনি বলেছেন, রাজাকারের সন্তান, পরিবারের সদস্য কখনও আওয়ামলীগে আসবেন না । মাদক ব্যবসায়ী , মাদক সেবী, গডফাদারদের আওয়ামীলীগে রাখা হবে না । দলেল বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে তাদেরকে রাখা যাবে না ।