খায়রুল আলম রফিক
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) প্রধান কার্যালয় শিক্ষা ভবনে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কর্মরত দিল আফরোজ বিনতে আছির। ২৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া দিল আফরোজের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ । আদালতে মামলাও রয়েছে। তারপরও মাউশির সর্বশেষ পদোন্নতির তালিকায় নাম এসেছে তার। এ কারণে বিতর্ক দেখা দেয়ায় আটকে গেছে যোগ্যদের পদোন্নতির প্রক্রিয়াও। সর্বশেষ ২০১২ সালে পদোন্নতি পেয়ে মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের সহকারী পরিচালক হন ধিল আফরোজ। সেই থেকে তিনি এই ‘লাভজনক’ পদেই আছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরির ক্ষেত্রে একই স্থানে তিন বছরের বেশি সময় থাকার নিয়ম নেই। অভিযোগ রয়েছে, এই নিয়ম মানা হচ্ছে না শিক্ষা ভবনের কারও কারও ক্ষেত্রে, বিশেষ করে দিল আফরোজ বিনতে আছিরের ক্ষেত্রে। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে শিক্ষা ভবনে থেকে গেছেন। এখন পুরো শিক্ষা ভবনই যেন দিল আফরোজ বিনতে আছিরের কবজায়। এই সুযোগে নানা ধরনের অনিয়মে জড়িয়েছেন তিনি, সে জন্য তার বিরুদ্ধে হয়েছে একাধিক মামলাও। অথচ পদোন্নতির জন্য তার নামও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে মাউশি থেকে। এ খবরে ক্ষুব্ধ পদোন্নতিবঞ্চিত হাজার হাজার শিক্ষক; সমালোচনা চলছে খোদ মাউশিতেও।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, ঢাকা শহরের মধ্যবর্তী এলাকায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলা চলছে দিল আফরোজ বিনতে আছিরের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে একটি সিআর মামলা চলছে ঢাকার সিএমএম কোর্টে সহকর্মীর বেতন অন্য হিসাবে পাঠানোর এবং ওই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে। এ ছাড়া ১০ স্কুল প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আইন-বিধান মোতাবেক কারও বিরুদ্ধে সিআর মামলা বা বিভাগীয় মামলা চললে তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। কিন্তু দিল আফরোজ বিনতে আছিরের নাম পদোন্নতির তালিকায় কীভাবে গেল, সে বিষয়েও মাউশির দায়িত্বরত কেউ মুখ খুলছেন না।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও পদোন্নতি কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান বলেন, ‘পদোন্নতির তো একটা বিধান আছে। তবে এ বিষয়টি এখন আমার নলেজে নেই। এ ব্যাপারে পদোন্নতি কমিটির সদস্যসচিব ও মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবার যোগ্যদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষা ক্যাডারের ১ হাজার ৮০ জনকে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এর বড় একটি অংশ সহকারী অধ্যাপক হওয়ার পর এক দিনের জন্যও শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেননি। কিন্তু তাদের নাম এসেছে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির তালিকায়।
প্রায় ৯ বছর ধরে মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের সহকারী পরিচালক পদে থাকা দিল আফরোজ বিনতে আছিরের বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলার পরও পদোন্নতির জন্য তাকে ‘ফ্রেশ প্রার্থী’ হিসেবে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোয় যোগ্য সবার পদোন্নতি আটকে আছে। এ-সংক্রান্ত জিও জারি করতে দেরি হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দিল আফরোজের পদোন্নতির জন্য ‘বড় স্যাররা তদবির করেছেন’। প্রথমে দিল আফরোজের পদোন্নতির রেজল্যুশনে সই করতে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে মহাপরিচালক কোনো না কোনো কারণে সই করেছেন।
গত ৯ মে শিক্ষা ক্যাডারের ৩ হাজার ৩০৮ জন কর্মকর্তার পদোন্নতিসংক্রান্ত সভা শুরু হয়, যা চলে সাত কর্মদিবস।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারের ২২তম বিসিএসের ৫৫০ জন ১২ বছর ধরে পদোন্নতি পাননি। এভাবে ২৩ ব্যাচের ১৭ জন প্রায় এক যুগ এবং ২৪ ব্যাচের ১ হাজার ৮৪৮ জন প্রায় ১০ বছর এক পদে আছেন। এ ছাড়া ২৫ ব্যাচের ১১২ জনের ও ২৬ ব্যাচের ৬৪৬ জনের পদোন্নতির যোগ্যতা থাকলেও একটি সিন্ডিকেটের বাধায় তারা বঞ্চিত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পদোন্নতিসংক্রান্ত ওই সভায় যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হবে- এমন আশায় ছিলেন শিক্ষা ক্যাডারের বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা, যা শুধু হতাশায় পরিণত হয়েছে। একাধিক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক দিল আফরোজ বিনতে আছিরের কারণে দিনের পর দিন যোগ্যদের বঞ্চিত করার কোনো অর্থ হয় না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের হস্তক্ষেপ আশা করছেন তারা। এ সব অভিযোগের ব্যাপারে দিল আফরোজ বিনতে আছিরের বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।