হাসান-উজ-জামান
রাজধানীর বারিধারা জে বল্ক নতুন বাজারস্থ রাজউক প্রস্তাবিত কাঁচা বাজারের (১০১৮ ও ১০১৯ দাগের জমি) জায়গার প্লট বরাদ্দ নিয়ে কোটি কোটি টাকা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। বারিধারা নতুন বাজারকে ঘিরে একাধিক ব্যবসায়িক ও সহযোগি সংগঠন সক্রিয় থাকলেও সকলকে আড়ালে রেখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) রহস্যজনক কারনে ‘বারিধারা নতুনবাজার দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃ’কে জায়গাটি প্রাথমিক বরাদ্দ দেয়। রাজউক থেকে প্রাপ্ত প্রাথমিক বরাদ্দপত্র দেখিয়ে বারিধারা নতুন বাজার দোকানমালিক সমবায় সমিতির দুষ্ঠু ও কথিত নেতারা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্লট বিক্রি করে অন্ততঃ ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আরো বেশ কয়েকটি দোকানের পজিশন বিক্রির দেনদরবার চলছে। এদিকে রাজউকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বারিধারা দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃকে অপকৌশলের আশ্রয়ে বরাদ্দ দেয়ায় সেখানের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীসহ অপর দু’টি সক্রিয় সংগঠন যেমন বারিধারা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ ও বারিধারা নতুনবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। দীর্ঘ দিনের এ চাপা ক্ষোভ যে কোন সময় বিস্ফোরণ ঘটে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সেখানের সাধারণ ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা এখনই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে যেকোন সময় এখানে ত্রিমুখী রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ হতে পারে। তারা বলেন, এরকম অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা ঘটলে রাজউকসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য কোনক্রমেই এর দায় এড়াতে পারেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বারিধারা জে বল্কের ৫ নং প্লটটি (প্রায় ২৬ কাঠা সম্পতি) ১৯৬২ সালে একোয়ার করে তৎকালীন ডিআইটি। দীর্ঘদিন ধরে ওই জায়গাটিতে ছিলো অবৈধ দখলদার। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন ঢাকা ৫ আসনের সাংসদ ওই ২৬ কাঠা জায়গায় কাঁচা বাজার তৈরীর উদ্যোগ নেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও ওয়ান ইলেভেনের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে রাজউক থেকে জায়গাটির সাময়িক বরাদ্দ পান বারিধারা দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃ। গনতান্ত্রিক সরকার এসেই ওই বরাদ্দ বাতিল করেন। রাজউক তখন সেখানে একটি মার্কেট তৈরী করে তিনটি সংগঠনের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমবন্টন করে বরাদ্দ দেয়ার সীদ্বান্ত নেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সকলকে পাশ কাটিয়ে রাজউক রহস্যজনক কারনে ২০১৮ সালে বারিধারা দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃকে এককভাবে সাময়িক বরাদ্দ দেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় সাংসদ একেএম রহমতুল্লাহ দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিঃকে তার দেয়া ডিও লেটার স্থগিত করে বারিধারা ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিঃ ও বারিধারা নতুনবাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির ক্ষতিগ্রস্ত নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে ওই জায়গার পূনরায় বরাদ্দ প্রদানের জন্য রাজউক কর্তপক্ষকে চিঠি দেন। একইভাবে সংসদ সদস্য বারীধারা জে বøকের ১০১৮ ও ১০১৯ দাগের জমিটির বরাদ্দপত্র সমন্বয়ের ব্যবস্থা গ্রহনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেন। ২৫ অক্টোবর ২০২০ সালে ওই পত্রে সংসদ সদস্য উল্লেখ করেন, বারীধারা জে বল্কের ১০১৮ ও ১০১৯ দাগের জমিটি ২০১৮ সালে ১১৯ জনকে (ক্ষতিগ্রস্ত উল্লেখ করে) বরাদ্দ প্রদান করা হয়। কিন্তু নতুন বাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা স্থানীয় আওয়ামীলীগের দুঃস্থ, অসহায় কর্মীরা উক্ত তালিকা হতে বাদ পড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী সমিতি ও দুঃস্থ আওয়ামীলীগ কর্মীদের নাম অন্তভ’ক্ত করে বরাদ্দপত্রটি সমন্বয় করে সংশোধনের জন্য কয়েক দফা রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর ডি ও লেটার প্রদান করা হয়। বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবৎ প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। সাংসদ রাজনৈতিক বিবেচনায় বিষয়টি দ্রæত সমাধানকল্পে প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কিন্তু বছর ঘুরে এলেও এই জটিলতা নিরসন না হওয়ায় সেখানের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বারিধারা নতুনবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ খন্দকার আমাদের কন্ঠকে বলেন, উক্ত সম্পতির বারিধারা নতুন বাজারের তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় করে সমবন্টনের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য খুবই আন্তরিক। এ লক্ষ্যে তিনি রাজউক চেয়ারম্যানকে একাধিকবার ডি ও লেটার দিয়েছেন। চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। কিন্ত রাজউক কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারনে সময়ক্ষেপন করে চলেছেন। ইতিমধ্যে রাজউকে একাধিক চেয়ারম্যান এসেছেন আবার চলে গেছেন। কিন্তু কেউই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সুরুজ্জামান বলেন, রাজউকের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা এখানের একটি সিন্ডকেটকে সুবিধা দিয়েছেন। বিনিময়ে রাজউকের ওই কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। এখানে যাদের ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই ডাবল বেনিফিসিয়ারি। মানে তাদের অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে এর আগে বিভিন্ন স্থানে প্লট নিয়েছেন। আবার ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে এখানেও প্লট নিয়েছেন। রাজউক তাদের ব্যাপারে কোন তদন্ত করেনি। সুরুজ্জামান আরো বলেন, এ ধরনের সুবিধাভোগীর ব্যাপারে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করেছি। আশা করছি অল্প দিনের মধ্যেই দুর্ণীতিবাজদের খোলস উদঘাটিত হবে। স্থানীয় সাংসদ আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন, তিনি বারিধারা নতুন বাজারের তিনটি ব্যবসায়ীদের মধ্যেই উক্ত প্লট সমবন্টনের উদ্যোগ দিয়েছেন। আমরা তার উদ্যোগ বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছি।
জানতে চাইলে সুবিধাভোগী বারিধারা দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি দিন মোহাম্মদ দিলু আমাদের কন্ঠকে বলেন, তার বিরুদ্ধে দোকান বিক্রি করে টাকা আতœসাতের অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি বলেন, ২০০৭ সালে তার সংগঠনের নামে ওই জায়গা সাময়িক বরাদ্দ দেয় রাজউক। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে ওই বরাদ্দপত্র স্থগিত রেখে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা চায় রাজউক। আমরা ১১৯জন ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে জায়গার পরিবর্তে জায়গা বরাদ্দ চাইলে ২০১৮ সালে রাজউক থেকে ফের সাময়িক বরাদ্দ পাই। জায়গার অনকুলে রাজউকে চাহিদামতে টাকা পরিশোধও করা হয়। রাজউক চুড়ান্ত বরাদ্দ দিতে বিলম্ব করলে আমরা হাইকোর্টে মামলা করি। সম্প্রতি হাইকোর্ট আমাদের অনুকুলে মামালার চুড়ান্ত রায় দেয়।