সোহেল আহাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বছরের প্রথম দিন নতুন বইয়ের নতুনত্বের ঘ্রাণে শিশু শিক্ষার্থীদের বছর শুরু হয়। এবার এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত কোমলমতী শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ ও ২০২১ সন ছিল শিক্ষাহীন বছর। সে সময়ও শিক্ষার্থীদের মাঝে শতভাগ পাঠ্য বই পৌঁছাতে পারলেও করোনা মহামারী ধাক্কা সামলাতে বেহাল পরিস্থিতি রয়েছে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই না পাওয়ার হতাশা নিয়েও তারা ছুটে চলেছে প্রতিদিনের পাঠশালায়। তার মাঝে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিক্ষার্থীরাও ব্যতিক্রম নয়। পাঠ্য বই ছাপানোর কাজসহ পাঠ্য বই পরিবহণে সময়মত পৌঁছানোর দীর্ঘ পক্রিয়ায় আটকে গেছে শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছা।
শহেরর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় শিশুরা তাদের পাঠ্য বই না পেয়ে হতাশ আর উৎকণ্ঠায় ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের কোমল হৃদয়। জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরিন জাহান রাইসা, মুন্নী, রাফসান, শিপন, জুনাঈদসহ বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এমন আক্ষেপই জানালেন প্রতিবেদককে। বই না পাওয়ার হতাশা শিক্ষকদের মাঝে থাকলেও তা জাতীয় সমস্যা বলেই মনে করছেন অধিকাংশ শিক্ষক। ২০২৩ সালের শিক্ষা বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট চব্বিশ লক্ষ তিনশত চুয়াত্তরটি বইয়ের চাহিদা থাকলেও ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আটানব্বই লক্ষ এক হাজার চারশত তিরানব্বইটি যা ৪০.৮৩ ভাগ বই পৌঁছেছে। প্রথম শ্রেণিতে বাংলা ও গণিত, দ্বিতীয় শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত (সীমিত) পৌঁছলেও তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্য বই ছাড়া অন্য কোন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে পারেনি কর্তপক্ষ।
জেলার মোট ৯টি উপজেলার বরাদ্দ অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় প্রথম শ্রেণিতে ৫৪৯০০ চাহিদা থাকলেও বই পৌঁছেছে মাত্র ১২২০০টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাহিত সংখ্যা ৫২৪৪০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৯৯০০, তৃতীয় শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ১১৭০০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৫০০০টি, চতুর্থ শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ১০৫১৮০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৫০০০টি, পঞ্চম শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৯০০০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৫০০০টি। নবীনগর উপজেলায় প্রথম শ্রেণিতে ৬১৯৮০ চাহিদা থাকলেও বই পৌঁছেছে মাত্র ১৩৮৬০টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাহিত সংখ্যা ৫৯০৩১টি প্রাপ্ত সংখ্যা ২৭৬০০, তৃতীয় শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ১১৩৭৮টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৩৭৯২৬টি, চতুর্থ শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ১১৩০৪০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৩৭৬৮০টি, পঞ্চম শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ১০১৫২০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৩৩৮৪০টি। কসবা উপজেলায় প্রথম শ্রেণিতে ৪৪৯৪০ চাহিদা থাকলেও বই পৌঁছেছে মাত্র ২৯৯৬০টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাহিত সংখ্যা ৪৪৯১০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৪৯৭০, তৃতীয় শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৮৪০৬০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৪১৫৩০টি, চতুর্থ শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৮৩৮৮০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ২৭৯৬০টি, পঞ্চম শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৭১৯৪০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ২৩৯৮০টি।
সরাইল উপজেলায় প্রথম শ্রেণিতে ৩৭৫০০ চাহিদা থাকলেও বই পৌঁছেছে মাত্র ২৫০০০টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাহিত সংখ্যা ৩৪৫০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১১৫০০, তৃতীয় শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৬৪২০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৩২১০০টি, চতুর্থ শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৫৭৬০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৯২০০টি, পঞ্চম শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৪৯২০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৬৪০০টি। বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় প্রথম শ্রেণিতে ২৯৪৬০ চাহিদা থাকলেও বই পৌঁছেছে মাত্র ২৯৪৬০টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাহিত সংখ্যা ২৮৯০৫টি প্রাপ্ত সংখ্যা ২৮৯০৫, তৃতীয় শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৫৬৫৩২টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৮৮৪৪টি, চতুর্থ শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৫৫৩৮০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৮৪৬০টি, পঞ্চম শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৫২৫০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৭৫০০টি।
আখাউড়া উপজেলায় প্রথম শ্রেণিতে ১৫৭৮০ চাহিদা থাকলেও বই পৌঁছেছে মাত্র ১৫৭৮০টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাহিত সংখ্যা ১৫৪৫০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৫৪৫০, তৃতীয় শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ২৮৮০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৯৬০০টি, চতুর্থ শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ২৯১০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৯৭০০টি, পঞ্চম শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ২৮২০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৯৪০০টি। নাসিরনগর উপজেলায় প্রথম শ্রেণিতে ৩১৫০০ চাহিদা থাকলেও বই পৌঁছেছে মাত্র ৩১৫০০টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাহিত স।ংখ্যা ৩১৮০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৩১৮০০, তৃতীয় শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৫৭০৬৬টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৯০২২টি, চতুর্থ শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৬৩১৬৮টি প্রাপ্ত সংখ্যা ২১০৫৬টি, পঞ্চম শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৪৭৪০৬টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৫৮০২টি।
আশুগঞ্জ উপজেলায় প্রথম শ্রেণিতে ১৮৯০০ চাহিদা থাকলেও বই পৌঁছেছে মাত্র ১২২০০টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাহিত সংখ্যা ১৮০০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৯৯০০, তৃতীয় শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৩৪৮০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৫০০০টি, চতুর্থ শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৩২৪০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ৫০০০টি, পঞ্চম শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৯০০০টি প্রাপ্ত সংখ্যা ২৮৮০০টি ও বিজয়নগর উপজেলায় প্রথম শ্রেণিতে ২৬৮৬৫ চাহিদা থাকলেও বই পৌঁছেছে মাত্র ২৬৮৬৫টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাহিত সংখ্যা ২৪০২৭টি প্রাপ্ত সংখ্যা ২৪০২৭, তৃতীয় শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৪৬৩৮৬টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৫৪৬২টি, চতুর্থ শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৪৪০৫৮টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৪৬৮৬টি, পঞ্চম শ্রেণি চাহিত সংখ্যা ৩৯০৩৬টি প্রাপ্ত সংখ্যা ১৩০১২টি পাঠ্য বই পৌঁছেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বলেন, এ বছর বই ছাপানোর জটিলতায় সময়মত শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্য বই পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রæতই বইগুলো জেলার সকল শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে।