জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
আর্ন্তজাতিক বাজারে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানি নিশ্চতকরণের লক্ষ্যে ঢাকা,হট্রগ্রাম, ও খুলনায় ৩ টি বিশ্বমানের মাননিয়ন্ত্রক পরীক্ষাগার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম । তিনি আজ মৎস্য ভবনে সভা কক্ষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।, তিনি বলেন জনসাধারনের খাদ্র ওপুষ্টি চাহিদা পূরণে মাছের গুরুত্ব, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, মৎস্য খাতে লাগসই প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, জাতীয় অর্থনীতিতে মৎস্য খাতের অবদান ,রপ্তানি আয় বৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ারিদ্র্য বিমোচন ও দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জনগণকে আরও সম্পৃক্ত ও সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতিবছর জাতীয় সৎস্য সপ্তাহ ২০২২ উদ্যপন করা হয়।
এ ধারাবাহিকতায় এ বছরও ‘নিরাপ মাছে ভরবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২ পালন করা হচ্ছে। ২৩ থেকে ২৯ জুলাই পযর্ন্ত জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পালন করা হবে। সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন ২৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৯ টা ৫০ মিনিটে গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন এবং সকাল ১০ টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, ২০২২ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ অনুষ্ঠানে দেশের মৎস্য খাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতীয় মৎস্য পদক প্রদান করা হবে। এদিন জাতীয় সংবাদপত্রে দেশের মৎস্য খাতের সাফল্য ও অর্জন নিয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, দেশেল ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর আমীসের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ারিদ্র বিমোচন ওবৈিেশক মুদ্রা অর্জনে সৎম্যখাত বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। দেশের মোট জিডিডির ৩দশমিক ৫৭ শতাংশ,কৃসিজ জিডিপি,র ২৬দশমিক৫০মতাংশ এবং মোট রপ্তানি আয়ের ১দশমিক ২৪মতাংশ মৎস্যখাতের অবদান। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ ৩য়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম, ইলিশ উৎপাদনে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ স্থানে রয়েছে। এ অর্জন সম্ভব হয়েছে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার কারণে।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, একটা সময় মৎস্য খাতে যথাযথ পরিচর্যা না হওয়ায় ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় মাছের আকাল দেখা দিয়েছিল। আমাদের নিজস্ব যেসব মাছ তার একটা বিশাল অংশ হারিয়ে গিয়েছিল। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ৩৬ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মাছ যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য ময়মনসিংহে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে, যেখানে শতাধিক প্রকারের মাছ থাকবে। কোথাও কোন মাছ হারিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হলে তার রেণু ও পোনা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। এছাড়া নিজস্ব গবেষণা থেকে সুবর্ণ রুই নামক একটি ্রæত বর্ধনশীল ও অধিক উৎপানশীল মাছ উদ্ভাবন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আরও বলেন, বন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশাল সমুদ্র জয়ের পর এর অভ্যন্তরে কত প্রকার মাছ আছে, কী সম্পদ আছে, প্রচলিত-অপ্রচলিত মাছ আছে সেগুলো অনুসন্ধান করার জন্য আমাদের মীন সন্ধানী জাহাজ কাজ করছে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রচলিত-অপ্রচলিত বিশাল মৎস্য ভান্ডার রয়েছে। এই মৎস্যসম্পদ এক সময় আমাদের বড় ধরনের আয়ের উৎস হতে পারে। সে জায়গায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন প্তরসমূহ কাজ করছে। সমুদ্রসীমায় আমারে ক‚টনৈতিক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
মাছ রপ্তানির প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ইলিশ পূর্বেই আমাদের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য ছিল। ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নতুন সংযুক্ত হয়েছে আমাদের বাগদা চিংড়ি। বিশ্বপরিমÐলে বাগদা এখন বাংলাদেশের হিসেবে পরিচিত। এটি বিশ্বপরিমন্ডলে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছে। পৃথিবীর প্রায় ৫২ টি দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের মাছের চাহিদা রয়েছে। এসব দেশে বিভিন্নভাবে মাছ রপ্তানি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ও তার সরকারের ব্যবস্থাপনায় মাছের মান নিয়ন্ত্রণে দেশে তিনটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরী স্থাপন করা হয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হবে। কোন দেশেই যাতে মাছের সাথে বিষাক্ত উপাদান না যায়, এটা আমরা নিশ্চিত করছি।
করোনায় বিশ্বের অনেক দেশের মৎস্য খাতে বিপর্যস্ত অবস্থা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, এ সময় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তিনটি দেশ মৎস্য উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে। এ তিনটি দেশের একটি বাংলাদেশ, অপর ুটি শে মিশর ও ভিয়েতনাম। করোনার সময় মৎস্য উৎপাদনকারীরা বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়লে তাদের জন্য সরকার ভ্রাম্যমান বিক্রয় ব্যবস্থা চালু করেছে। সে সময় মাছের খাদ্য বিদেশ থেকে আনার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিক‚লতা ছিল সেগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের ঘুরে াঁড়ানোর জন্য নগ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকাকালে যাতে মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য বিনামূল্যে বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লক্ষ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করতে সরকার কাজ করছে। যাতে দেশের সব প্রান্তিক মানুষ ইলিশের স্বাদ নিতে পারে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার ও মো. আব্দুল কাইয়ূম, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. হেমায়েৎ হুসেন, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদসহ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সকালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২ এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বণার্ঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, নিরাপদ মাছ নিশ্চিত করার জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছি। মাছ বাঙালি জাতির কৃষ্টির অন্যতম অংশ। ভাতে-মাছে বাঙালির সে ঐতিহ্য আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। মাছ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে চাই। মাছ চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হবে, উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হবে।