খায়রুল আলম রফিক : নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গ-সংগঠন নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী যুবলীগ। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ভ্যানগার্ড হিসাবে পরিচিত এই যুবলীগ এখন নেত্রকোনায় ত্রাসের নাম । নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের আহবায়ক মাসুদ খান জনি ও যুগ্ম আহব্বায়ক জামিউল ইসলাম খান জামি। নেত্রকোনায় এখন সাম্রাজ্য । এই সাম্রাজ্যের রাজা, সেনাপতি ও মন্ত্রী তারাই । এমন অভিযোগের তীর উপরোক্ত নেতৃবৃন্দ ও তাদের অন্ধ অনুসারীদের বিরুদ্ধে। নেত্রকোনায় জেলা ও উপজেলা ছাত্রদল, যুবদল,থেকে আসা বর্তমানে নামধারী কয়েক যুবলীগ নেতারাই এখন সাম্রাজ্যের বড় বড় দায়িত্বে। তাদের কাছে অনিয়মই নিয়ম।
তাদের কাছে জিম্মি নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগও। নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী,কৃষক, গৃহিণী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও। অভিযোগ রয়েছে, উপরোক্ত নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতৃত্বে পদ বাণিজ্য থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, মাদক ব্যবসা, জমি ক্রয় বিক্রিতে চাঁদাবাজি, সরকারি অফিস নিয়ন্ত্রণসহ নানাভাবে কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন যথাক্রমে জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারির পদ ব্যবহার করে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ২০১৭ সাল থেকে আহবায়ক কমিটি অর্থাৎ একই পদে আছেন তাঁরা। যদিও কেন্দ্রীয় যুবলীগের শীর্ষ পদের দায়িত্ব শেখ পরিবারের সদস্যের হাতে আসার পর সম্প্রতি তারা ঐ সক কর্মকান্ডে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । গত ৪ বছরে তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগ আকাশ সমান! তাদের কমিটিতে সেখানে স্থান পেয়েছেন ছাত্রদল নেতারা ।
নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দের হাতে বালু মহাল নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা অফিস, ভূমি অফিস, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য, সড়ক ও জনপদ, শিক্ষা প্রকৌশল, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত, বিআরটিএ, বিদ্যুৎ অফিসসহ অনেক অফিস তাদের নিয়ন্ত্রণে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আজো কেও কোন অভিযোগ করেনি । গোছানো ছিল আমাদের রাজনীতি । যুবলীগের নেতৃবৃন্দদের মানুষ শ্রদ্ধা আর ভালবাসার চোখে দেখতেন । কি রেখে এসেছি আর তারা কি করেছে ? নেত্রকোনার রাজনীতিতে যুবলীগের সুনাম ছিল । এখন কতিপয় নেতা-কর্মীর বিতর্কিত কর্মকান্ডে কারণে সে সুনাম অনেকটা ম্লান হচ্ছে । যে কারণে নবীন-প্রবীণ, ত্যাগী ও সুযোগসন্ধানী-সব শ্রেণীর নেতারাই ভুগছেন আতঙ্ক আর অস্বস্তিতে। রাজধানী ঢাকায় যুবলীগের সম্রাটসহ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয় । ঐ সব যুবলীগ নেতাদের টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে টানা তিনবার ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের অর্জন ম্লান হয় । এরপর ফরিদপুরে বরকত ও তাঁর ভাই রুবেল গ্রেপ্তার হয় ।
তাদের বৈধ কর্মকান্ডের মাধ্যমেম অর্জিত বিপুল সম্পদ, তাঁদের জীবনযাপন তাদের অবৈধ টাকার পরিমাণ সবই প্রকাশ্যে আসে । তাদের নেতৃত্বে ফরিদপুরের ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি কাজ, সরকারি স্থাপনা কীভাবে রাতারাতি দখল করা হয়েছে, তা ফুটে উঠেছে বরকত রুবেলদের জবানবন্দিতে। তারা দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হামলা, ভয়ভীতি দেখানো থেকে শুরু করে সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করত । নেত্রকোনায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের সাবেক কয়েকজন নেতৃবৃন্দ জানান, সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর আনুকূল্যে ২০১৭ সালে নেত্রকোনা যুবলীগের কমিটি গঠন করা হয় । কমিটি গঠনের পর থেকেই কয়েকজন যুবলীগ নেতার জীবনধারা পাল্টে যায়। তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক ।
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়া কাউকে তারা পরোয়া করেন না। এই যুবলীগ নেতারা তাদের নিজস্ব সিন্ডিকেট গড়ে তোলে । তাদের সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, বালু মহল নিয়ন্ত্রণসহ সব অপকর্মে জড়িত। নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের আহবায়ক মাসুদ খান জনি ও যুগ্ম আহবায়ক জামি তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন । তারা এসবে জড়িত নন বলে জানান । এদিকে দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা যুবলীগের কয়েক নেতা এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে । তাদের কর্মকান্ড ও গতিবিধি পর্যালোচনা করা হচ্ছে । সহসাই উপরোক্ত ঘটনার মত অভিযান পরিচালনা করা হবে ।