খায়রুল আলম রফিক:
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৩০ টি ভবণ নির্মাণ কাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে । পটুয়াখালি গণপূর্ত উপ- বিভাগের উপ- সহকারি প্রকৌশলী( ১) তৈয়েবুর রহমান ভবন নির্মাণের ইট দিয়ে গড়ছেন নিজের ৬ তলা বিশিষ্ট একটি আলিশান বাড়ি। নিজের ভবনের ইটের ব্র্যান্ড ও হাসপাতাল ভবনের ইটের বান্ড একই । মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ভবণ নির্মাণ কাজে রড দেয়া হচ্ছে কম । ব্যবহার করা হচ্ছে নিন্মমাণের বালি, সুড়কি ও পাথর। জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় ১৬ টি টেন্ডারের মাধ্যমে পটুয়াখালি গণপূর্ত উপ- বিভাগে ৩০টি ভবণ নির্মাণ কাজ শুরু করে । তন্মধ্যে ২টি ভবণ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ।
বাকী কাজগুলো চলমান রয়েছে। অনলাইনে টেন্ডার আহবান করা হলে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঠিকাদার নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। ঐসব ঠিকাদাররা নিজেরা কাজ না করে সরকার দলীয় স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ নেতাদের দিয়ে সাব কন্ট্রাকটর হিসাবে কাজ সম্পাদন করাচ্ছেন । এসব কাজ তদারকি দায়িত্বে রয়েছেন , পটুয়াখালী গণপূর্তের উপ – বিভাগের উপ- সহকারি প্রকৌশলী তৈয়েবুর রহমান । তিনি ১৬ বছর ধরে পটুয়াখালী গণপূর্ত অধিদপ্তরে কর্মরত। গেল বছরে বরিশালে বদলি হলেও এক রাতের মধ্যেই বদলির আদেশ স্থগিত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী তৈয়েবুর রহমান পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগে প্রায় একযুগ চাকরি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। গড়েছেন আলিশান বাড়ি ও কিনেছেন কয়েক একক জমিও।

সরেজমিনে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, নির্মাণকাজে রড দেয়া হচ্ছে কম । বালি ,পাথর ও সুড়কি ব্যবহার করা হচ্ছে নিন্মমানের । সাব কন্ট্রাকটররা স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা- কর্মী হওয়ায় কেউ এর প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছেন না ।অভিযোগ রয়েছে , প্রকল্প পরিচালক এসব কাজের বিপরীতে অতিমাত্রায় বেশি বিল দিয়ে দিচ্ছেন। যদিও প্রকল্প পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল মতিনের কাছে জানতে চাইলে দৈনিক আমাদের কন্ঠকে বলেন, নিন্মমান কিংবা কাজের বিষয়ে আমার দেখার বিষয় নয় । তিনি বলেন, এগুলি পিডব্লিউডি দেখার বিষয় । পিডব্লিউডির চাহিদা অনুয়ায়ি বিল দিয়েছি । যা দেখার বিষয় গণপূর্ত বিভাগের ।
পটুয়াখালীর শহরে ডুপ্লেক্স একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন? এত টাকা কোথায় থেকে পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমার ভাই বিদেশে থাকে, আমার বোন মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন তারা আমাকে টাকা দিয়েছেন, কিছু টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। আমি এখন বিজি আছি পরে কথা বলবো। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক হাসান জানান,স্যার ১০০% পার্সেন্ট সৎ মানুষ,ডুপ্লেক্স বাড়িটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে করেছেন।কত টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন জানতে চাইলে দৈনিক আমাদের কন্ঠকে হাসান বলেন, এটা আমি জানি না, তবে শুনেছি, স্যারের ভাই বোনেরা টাকা দিয়েছেন। একজন সম্মানী মানুষের বিরুদ্ধে নিউজ করার কি প্রয়োজন। এমন বাড়ি অনেকেই করেছেন।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অতিরিক্ত এ্যাকাউটেন্ট মহসিন দৈনিক আমাদের কন্ঠকে জানান, পিডব্লিউডির চাহিদা অনুয়ায়ি বিল দেয়া হয়েছে । এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি । ইতিমধ্যে ৯০ কোটি টাকার বিল দেয়া হয়েছে,আমার ঢাকায় বদলি হয়েছে, আমি ঢাকার মহাখালীতে আছি ।
পটুয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের উপ- সহকারি প্রকৌশলী তৈয়েবুর রহমান জানান, নির্মাণকাজে রডের সংখ্যা কম থাকলেও কাজ ভাল হয়েছে । একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে । বলা হয়েছে, রড অনেক কম দেয়া হয়েছে । সিনিয়রদেরকে আপ্যায়ন , যাতায়াত ও তেল খরচ কম দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হয়েছে । তিনি আরও জানান,ইতিমধ্যে ২শ ৮২ কোটি ২৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং ৩শ’ ২৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ।
অভিযোগ উঠেছে, পটুয়াখালী শহরে হাসপাতাল প্রকল্পের মালামাল নিয়ে নিজের ৬তলা বিশিষ্ট একটি ভবণ নির্মাণ করছেন গণপূর্ত উপ- বিভাগের উপ- সহকারি প্রকৌশলী তৈয়েবুর রহমান । তবে তিনি দাবি করেন তার শুশুরবাড়ি জমিতে তার স্ত্রী বাড়ি করছেন। এ বাড়ি তার নয়। অপরদিকে প্রকল্প পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল মতিন দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়টি দেখে স্বেচ্ছায় প্রকল্প পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন । প্রকল্প পরিচালক নিজেও পটুয়াখালি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন । যার খরচ হয়েছে আনুমানিক ৪ কোটি টাকা । যা এখন টক অফ দ্যা পটুয়াখালি ।
অভিজ্ঞরা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে নির্মাণাধীন পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ভবণ নির্মাণ প্রকল্পটি। নির্মাণ কাজের নির্ধারিত প্রারম্ভিক প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে ।পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তদন্ত করা হলেই প্রকৃত ঘটনা বেড়িয়ে আসবে । তারা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার আহবান জানান।