চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
নদীর এ কুল ভাঙ্গে, ও কুল গড়ে এইতো নদীর খেলা। আজ পদ্মার কড়াল গ্রাসে ক্ষতিগ্রস্থরা দিশেহারা, তাদের শান্তনা কে দেবে। বন্যার পানি নামার সাথে সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা ও আলাতুলিতে আবারও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে এ দু’টি ইউনিয়ন। গত কয়েকদিন ধরে গোয়ালডুবি এলাকায় নদী ভাঙ্গনে নির্মাণাধীন ওয়াক্তিয়া মসজিদ, ১’শ বিঘা জমি, আমবাগানসহ প্রায় ৬০টি কাঁচা-পাকা বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া আলাতুলী ইউনিয়নের শতাধিক বসতবাড়ি ও কমিউনিটি ক্লিনিক পদ্মার গর্ভে বিলিন হবার পর আবারও ভয়াল রুপ ধারণ করেছে । ইতোমধ্যে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গোয়ালডুবি নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। সেসময় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় প্রায় ৬’শ মিটার এলাকা জুড়ে ঘরবাড়িসহ ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তবে ভাঙ্গনরোধে বালুর বস্তা ফেলা হলেও তীব্র ¯্র্েরাতের কারণে তা ধোপে টেকেনি। নদীর গতিপথ দিন দিন পরিবর্তন হওয়ায় ভাঙ্গনের ধরনটাও পাল্টাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে পানি কমার সাথে সাথে আবারও ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এনিয়ে নতুন করে ৭’শ মিটার এলাকার ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই আতংকে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়ে অন্যের জমিতে মানবতের জীবন যাপন করছে। তারা এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সহায়তা পাননি। এদিকে ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাউবো জরুরি কাজগুলো করাতে সময়ক্ষেপণ করায় ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করছে এবং গোয়ালডুবি এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হলে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ভাঙন কবলিত এলাকায় বালুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি’র একটি বালু সিন্ডিকেট। তার হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এহেন কার্যক্রমে লিপ্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ভাঙনে বাখের আলী ও চরবাগডাঙ্গা বিজিবি’র বিওপি, ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউপি ভবন, বেড়িবাঁধ পাকা সড়ক, তিন শতাধিক আমবাগান, ১১টি গ্রাম, ৩ টি বাজার এবং পাকা সড়কের পশ্চিমে সাড়ে ৪ হাজার বসতভিটা ভাঙ্গনের কয়েকশ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। এ আতংকে নদীর নিকটবর্তী তিনটি গ্রামের মানুষজন দিনভর বাড়িঘর সরাচ্ছেন। তবে এখন ভাঙ্গন কিছুটা স্থির পর্যায়ে। এদিকে, আলাতুলি ইউনিয়নে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।এলাকার মানুষের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান কামাল জানান, নতুন করে ৮ নং ওয়ার্ডে গত ২০ দিনে ১৫০ কাঁচাবাড়িসহ একটি মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এ ইউনিয়ন। এছাড়া, ভাঙ্গন কবলিত এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডের মানুষ অন্যত্র চলে গেছে। এব্যাপারে স্থানীয় পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, পানি নামার সাথে সাথে ভাঙ্গন দেখা দিলে বালুর বস্তা ফেলে রোধ করা হয়েছে। তবে, বর্তমানে গোয়ালডুবি অংশে ভাঙ্গন অনেকাংশে কমে এসেছে। তিনি আরো জানান, আলাতুলি ইউনিয়নের ভাঙ্গনের বিষয়টি জানা নেই। যদি এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হয়, তাহলে ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।