পাইকগাছা, খুলনা প্রতিনিধি
ভোর হলেই শত শত মানুষ গ্রামে গ্রামে এসে একেবারে উৎসবমুখর পরিবেশে শিরিস গাছের এই আঠা সংগ্রহের জন্য ডাল ক্রয় করছে। ছোট শিশু, বৃদ্ধ, নারী পুরুষ মিলে টাকার লোভে যেভাবে জীবনের ঝুকি নিয়ে গাছে উঠে আঠা লাগানো চিকন ডাল কাটছে। বিশেষ করে মরা গাছে উঠে এই ডাল ও আঠা সংগ্রহ করছে তাতে ভয় হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে গাছের নরম ডালে বসে আঠা লাগানো চিকন ডাল সংগ্রহ করতে গিয়ে বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে তার আশঙ্কাও রয়েছে। তারপরও ঝুকি নিয়ে তারা শিরিস গাছের মাথায় চড়ে চিকন ডাল সংগ্রহ করছে।
আশানুরুপ মূল্য পাওয়ায শিরিস গাছের ডালে লেগে থাকা আঠা জাতীয় প্রলেপ সংগ্রহের হিড়িক পড়ে গেছে। গত এক মাস ধরে পাইকগাছা উপজেলার প্রতিটি গ্রামে মহাধুমধামের সাথে এই প্রলেপ সংগ্রহের কাজ চলছে। কাজকর্ম ও নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশু-বৃন্ধসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ শিরিস গাছের ডালে লেগে থাকা এই আঠা জাতীয় প্রলেপ সংগ্রহ করছে। তারা দাম পাচ্ছে আশানুরুপ। তাই আঠা লাগানো ডাল সংগ্রহে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেঘুরে ডাল ক্রয় করছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় উপজেলার কপিলমুনি বাজার,কাজিমুছা বাজার ও শ্যামনগর বাজারে বিক্রি হচ্ছে।বাহিরের ব্যবসাহীরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বিক্রেতা মোঃ জাহাঙ্গীর গাজী, হাসেম আলী শেখ, আবুল হোসেন খান জানান, কপিলমুনি হাসপাতালের সামনে ও কাজিমুছা বাজারে সন্ধ্যায় হাট বসে।
বাহিরের ব্যাপারীরা এসে কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন ভোর হতে স্থানীয় ক্রেতারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে এগুলো কিনে নিচ্ছে। গাছ থেকে ডাল কেটে শত শত ভ্যান ও ইজিবাইক বোঝাই করে বাড়ি নিয়ে আঠা ছাড়িয়ে বিক্রি করছে। এতে আয় হচ্ছে ভাল। শতশত মানুষ বিকল্প আয় হিসেবে এই কাজে ব্যস্থ সময় পার করছে। জানা গেছে, নওগাঁ ও রাজশাহীতে গালা,পালিস,রং তৈরির কেমিক্যাল কারখানা রয়েছে। এ বিষয়ে কপিলমুনি বাজারের ব্যবসাহী নারান চন্দ্র সিংহ বলেন, শিরিসের আঠা রাজশাহী ও নওগায় যাচ্ছে, সেখানে কারখানা আছে।মেশিনে রিফ্যাইন করে মন্ড তৈরি করা হয়।এদিয়ে ফর্নিচারের পালিস করা গালা,সিল গালা সহ বিভিন্ন কেমিক্যাল জাতিয় দ্রব্য তৈরি করা হয়। পাইকগাছার রাড়–লী ইউনিয়নের কাঠ ব্যবসায়ী জামির হোসেন বলেন,আমি ছয়টি শিরিস গাছ কিনেছি ২৭ শত টাকায়।আর কাজিমুছা গ্রামের মশিয়ার শেখের নিকট ছয়টি গাছের আঠার প্রলেপ লাগা চিকন ডাল বিক্রি করেছি ৭ হাজার ৫শত টাকায়। চিকন ডালগুলির ওজন দুই মন হতে পারে।আঠা লাগা শিরিসের ডালের ব্যাপক চাহিদা।
কে কার আগে ডাল কিনতে পারবে তার জন্য ব্যবসাহীরা বিভিন্ন এলাকায় ছুটে বেড়াছে। ব্যবসাহী ইজহার আলী গাজী জানান,আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে গাছের ডাল ক্রয় করে গাছ থেকে সেগুলো নিজেরা ভেঙে নিয়ে আসছি,তাছাড়া ছাড়নো আঠাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিনে আনতেছি। সারাদিন ডাল ক্রয় করে সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়ে আঠা গুলো পরিষ্কার করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেই।ব্যবসায়ী মসিয়ার হালদার জানান, ডাল থেকে আঠার মত প্রলেপ ছাড়াতে কেজি প্রতি ৫০ টাকা দিতে হয়। এ আঠাগুলো সংগ্রহ করে বস্তায় ভরে হাটে বিক্রি করা হচ্ছে। আর ডাল থেকে ছাড়ানো এ আঠা কেজি প্রতি ২শত টাকা থেকে ২৫০টাকা দরে বিক্রয় করছি। এতে প্রতিদিন ৩ জনের প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাভ হয়। কয়েক বছর যাবত উপকুল এলাকার শিরিস গাছের ডাল থেকে আঠা ঝরে যাচ্ছে ও ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে।কি কারণে আঠা ঝরে ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে তার রোগ উদঘটন হয়নি।আর আঠা ঝরে এক পর্যায়ে শতশত গাছ মরে মরে যাচ্ছে।