কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজার সদর উপজেলাধীন ভারুয়াখালী ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক পাড়া জামে মসজিদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও তৎসংলগ্ন পুরনো কবরস্থানের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে।
ছাত্র জনতার আন্দোলনের মূখে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার প্রধান পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে গেলে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যায়।একই ঘটনায় আওয়ামী সমর্থিত সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় সদরের ভারুয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনও আত্মগোপন রয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্র বলছে,দীর্ঘ মাস ধরে অত্র ইউনিয়নের সাবেক পাড়ার শত বছরের পুরনো কবরস্থানের পাহাড় কেটে চেয়ারম্যান কামাল ও তার ভাইদের দিয়ে মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা।কিন্তু গেল ৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন।সেই সাথে পাহাড় কাটার কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়।কিন্তু সেই পাহাড়ের ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়।ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের একটি টিম। তারা পাহাড় কাটাস্থল পরিদর্শন করে পাহাড় কাটা সত্যতা পায় বলে জানা যায়।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে এ প্রতিবেদক, ঘটনাস্থল ঘুরে এবং স্থায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,সাবেক পাড়া এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বিশাল আকারের একটি পাহাড় সম্পূর্ণ কেটে ফেলা হয়েছে।এবং তৎসংলগ্ন পুরনো কবরস্থানের পাহাড়ের কিছু অংশ কাটতে গেলে মৃত ব্যক্তিদের হাড়গোড় ও মাথার খুলি বেরিয়ে আসতে দেখে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।কিন্তু চেয়ারম্যান বাহিনীর ভয়ে এতদিন কেউ মুখতে পারেনি। তবে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারে পতনের পর স্থানীয়রা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন সচেতন এলাকাবাসী।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে এ প্রতিবেদকসহ আরও কয়েকজন সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে গেলে সাংবাদিক আসার খবরে চেয়ারম্যান বাহিনীর কয়েকশত মহিলা পুরুষ জড়ো হয়ে হৈচৈ শুরু করে দেয়। তখন সংবাদ কর্মীরা গোপনে স্থানীয় বাসিদ্ধাদের সাথে কথা বলার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। ওই সময় চেয়ারম্যান বাহিনীর বেপরোয়া আচরণে সংবাদকর্মীরা স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।পরে অত্র ইউনিয়নের এক সাবেক ইউপি সদস্যের মাধ্যমে কামাল চেয়ারম্যানের ছোট ভাই নেজামত আলীর সাথে কথা হয়। তিনি পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, প্রাইমারী স্কুলের সীমান দেয়াল ও খেলার মাঠ তৈরি করতে স্কুলের পাহাড়টি কাটা হয়েছে।তবে কবরস্থানের পাহাড় কাটা হয়নি এবং মাটি বিক্রির কথাও মিথ্যা বলে দাবী করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন এক বৃদ্ধ বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে এখানে বসবাস করি। ঘরের পাশে বিশাল আকারের একটি পাহাড় ছিলো,সেটা চেয়ারম্যানের লোকজন বেশকিছু দিন ধরে রাতের আঁধারে কেটে ট্রাকে ট্রাকে মাটি বিক্রি করতে দেখেছি। তবে স্কুলের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করলেও কবরস্থানের পাহাড়টি কিছু অংশ কেটেছে। এতে দাপন করা মৃত মানুষের হাড়গোড় দেখার পর আর মাটি কাটে নাই।তবে এখন একটি মাঠ হয়েছে তাতে ভালো হয়েছে। কিন্তু কবরস্থানের পাহাড় কাটাটা উচিৎ হয়নি৷ সেটার জন্য যারা পাহাড় কাটায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এ নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি সত্য। এইভাবে পাহাড় কাটা তার মাঝে কবরস্থানের পাহাড়া কাটার বিষয়টি অমানবিক।সাথে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডের জন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যদিকে একই ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া কবরস্থানের পাহাড় কাটার অভিযোগ ছিল এই সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন,১০-১২ বছর পূর্বে পাহাড়টি ভেঙ্গে পড়েছিল।তখন মাটিগুলো সরিয়ে সেখানে একটি জানাজার মাঠ তৈরি করা হয়েছিল অন্যকিছু নয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ে কর্মকর্তা (ডিডি) জমির উদ্দিন বলেন, ইতিমধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,স্কুল পরিচালনা কমিটি খেলার মাঠ তৈরি করার জন্য পাহাড় কেটেছে সেটা জানি। তবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। আমি এসবের সাথে জড়িত নই।