মির্জা বদরুজ্জামান টুনু, যশোর
প্রকল্প পরিচালক এএসএম কবিরের সীমাহীন দুর্নীতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে যশোরাঞ্চলের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন। চাহিদামতো ঘুষের টাকা না দেয়ায় বরাদ্দের টাকা পাচ্ছেন না ঠিকাদাররা। ফলে, ব্যাহত হচ্ছে চলমান উন্নয়ন কাজ। বুধবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে এসব অভিযোগ করেছেন ৭৮ জন ঠিকাদার। এ বিষয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছেও অভিযোগ করেছেন তারা। এই অভিযোগপত্রে ৫৬ জন ঠিকাদার স্বাক্ষর করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, জে আরআরআইডিপি প্রকল্পে যশোর জেলায় সড়কের ডবিøউবিএম ও কার্পেটিং কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। কিন্তু বিগত দু’বছরে ঠিকাদাররা বরাদ্দের বিল পেয়েছেন মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ। তারা অভিযোগ করেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত টাকা প্রকল্প পরিচালক নিজের ইচ্ছামতো বণ্টন করেন। যারা বেশি ঘুষ দেন তারাই বরাদ্দের টাকা পেয়ে যান। যশোরের ঠিকাদাররা বরাদ্দ অনুযায়ী টাকা না পেলেও নড়াইল ও মাগুরা জেলার কোনো ঠিকাদারের বকেয়া পাওনা নেই বলে দাবি করেন তারা। এসব ঠিকাদার বলেন, তারা ৫০ কোটি টাকার বিল জমা দিয়েছেন। বিল না পাওয়ায় কাজ চলছে মন্থর গতিতে। ফলে,বাকি কাজ যথাসময়ের মধ্যে সমাপ্ত করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব না। এ কারণে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা যাচ্ছে। তারা অভিযোগ করেন, প্রকল্পর পরিচালকের কাছে সময় বৃদ্ধির কথা বললে আবেদন প্রতি পাঁচ হাজার টাকা গ্রহণ করেও জরিমানা করা হচ্ছে ঠিকাদারদের। এছাড়া, বরাদ্দ প্রাপ্তির পর আয়কর ভ্যাট ও বিভাগীয় পুরাতন মালামালের টাকাসহ প্রতি লাখে এক শতাংশ অগ্রিম ঘুষ নিয়ে সামান্য বরাদ্দ করেন।
এদিকে, অন্য জেলার ঠিকাদারা দু’ শতাংশ ঘুষ দিয়ে বরাদ্দের ভাগ বেশি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন যশোরের ঠিকাদাররা। প্রকল্প পরিচালক এএসএম কবিরের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা। বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঠিকাদার রেজাউল হক, জহুরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, আবু সাঈদ, বাদল বিশ্বাস, মনিরুজ্জামান তপন, হাসানুজ্জামান, তহিদুর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্পের আওতায় যশোরের আট উপজেলার ৪০ কিলোমিটার সড়ক, দুশ’৪৫ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, পাঁচশ’ সাত কিলোমিটার গ্রামের রাস্তাসহ সাতশ’ ৯২ কিলোমিটার গ্রামীণ উন্নয়ন কাজ চলছে। এছাড়া, ৮০ কিলোমিটার বৃক্ষরোপণ, এক হাজার তিনশ’৪৬ মিটার ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণসহ গ্রামীণ সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করে পণ্যের বিপণন সুবিধা ও পরিবহন খরচ কমানোর লক্ষ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যশোরাঞ্চলে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এবং শেষ হবে ২০২৩ সালের জুন মাসে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক এএসএম কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ প্রকল্পের জন্যে চারশ’ ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। কিন্তু চার জেলায় মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮৮ কোটি টাকা। যেখানে যশোর জেলায় ৩৬, ঝিনাইদহে ২৪, মাগুরায় ১০ ও নড়াইল জেলায় উন্নয়ন কাজের জন্যে বরাদ্দ হয় ১০ কোটি টাকা। এসব জেলার মধ্যে যশোরের উন্নয়ন কাজ বেশি। এ কারণে ঠিকাদাররা কাজও করেন দ্রæত। ফলে তাদের বিল কিছু বকেয়া থেকে যায়। তবে, চাহিদার চেয়ে বরাদ্দ কম হওয়ায় মূলত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ ও বরাদ্দের টাকা অসম বণ্টন অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এখানে স্বার্থান্নেষী মহল তার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। ফলে মূল সমস্যার বাইরে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।