কাজী মাসুদুর রহমান, জয়পুরহাট
সনদ জালিয়াতি ও বিভিন্ন অনিয়মের জন্য প্রধান শিক্ষক সহ ৯ জন শিক্ষকের নিয়োগ বিধি সম্মত নয়। এমন কি বিদ্যালয়টির বর্তমানে একাডেমিক নবায়ন স্বীকৃতিও নেই। এছাড়াও বিস্তর অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাটের চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরূদ্ধে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরির্দশন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্টে মিলেছে কয়েক জন শিক্ষকের বেতন-ভাতার প্রায় ৬৩ লক্ষ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত যোগ্য এমন প্রতিবেদনও দিয়েছেন অডিট সংশ্লিষ্ঠরা। কিন্তু অডিটের প্রায় ৪ বছরে সরকারি কোষাগারে কেউই টাকা ফেরত দেননি। স্থানীয় তদন্তকারী ও সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন,তদন্ত চলছে প্রতিবেদন পাঠানোর পর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টিকে নিরক্ষর মুক্ত করতে ১৯৯৩ সালে স্থানীয় শিক্ষা অনুরাগিদের দান করা ১ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়। বিগত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম থাকলেও এখন নানা অনিয়ম ও অব্যাবস্থাপনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যাবস্থা অনেকটায় ধস নেমেছে, এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরির্দশন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অডিট রিপোর্ট এবং সরেজমিনে জানা যায়, ১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, পরির্দশন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর অডিটের প্রতিবেদনে মিলেছে বিস্তর অভিযোগ। অভিযোগে বলা হয় ২০১২ সালের পর বিদ্যালয়টি একাডেমিক নবায়ন স্বীকৃতি নেই, চাকরি বিধি লঙ্ঘন, প্রধান শিক্ষক সহ ৯ জন শিক্ষকের নিয়োগ বিধি সম্মত নয়, কম্পিউটার শিক্ষিকা লতিফা খানমের “কম্পিউটার সনদ” জাল-ভূয়া, এ কারণে কম্পিউটার শিক্ষিকা সহ ৫জন শিক্ষকের বেতন-ভাতা ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৬২,৪৮,২৯৯ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত যোগ্য। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক সহ ৪ শিক্ষকের নিয়োগ বিধি সম্মত নয়। ইতি মধ্যে এক শিক্ষক সরকারি কোষাগারে ১৪,৯২,০০৮ টাকা জমা না দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সদ্য মেয়াদ উত্তীর্ন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও দাতা সদস্য মোঃ কামরুজ্জামান দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নানা অভিযোগে ৩১ শে জানুয়ারি ২০২১ তারিখে প্রধান শিক্ষক কে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করেছেন এবং এসব অনিয়মের জন্য সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে ৯ ই ফেব্রয়ারী ২০২১ তারিখে অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার এখনো মেলেনি । এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরির্দশন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অডিট প্রতিবেদনে নানা অনিয়মের স্পষ্ট নির্দেশনা দেখা গেলেও ৩ বছরেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, উল্টো বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন ও বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন, যদিও অডিট প্রতিবেদনে নির্দেশনা আছে, কম্পিউটার শিক্ষিকা ২০১৭ সালের পর বেতন ভাতা উত্তোলন করলে তাও ফেরত যোগ্য হবে। ৯ ফেব্রæয়ারী ২০২০ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ বিভাগের সচিব এর নিকট অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যাথে ২০১৭ সালের ঐ অডিট প্রতিবেদন সহ অনন্য অভিযোগের তদন্তের জন্য প্রেরন করেন পরির্দশন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর । ১৮ ফেব্রয়ারী ২০২১ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী বরাবর সেই অডিট প্রতিবেদন ও অনন্য অনিয়মের তদন্তের জন্য জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে চিঠি দেন। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (সদর) দীপক কুমার বনিক কে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সেই তদন্ত কমিটি ১৬ আগষ্ট ২০২১ তারিখে তদন্তও করেছেন, প্রতিবেদন শীঘ্রই দিবেন । বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষিকা লতিফা খানম সহ অনন্য শিক্ষকের বক্তব্য চাইলে সাফ জানিয়ে দিলেন, প্রধান শিক্ষকের নিষেধ থাকায়, মুখ খুলবেন না তারা।এ ব্যাপারে চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর কবির বলেন, বিদ্যালয়টির একাডেমিক নবায়ন স্বীকৃতি বর্তমানে নেই তবে স্বীকৃতি নবায়নে প্রক্রিয়াধীন আছে। অডিট রিপোর্ট সঠিক আছে, অডিট প্রতিবেদন মিথ্যা, আমি সেটা আপনাদের বলছি না। অডিট সম্পর্কে কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য দিবো না এটা আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়। আমাদের ডির্পামেন্টে জবাব দিয়েছি প্রয়োজনে তাদের কে আবারও দিব। এই পুরো বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলবো না। চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য মেয়াদ উত্তীর্ন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, এ বছরের কয়েক মাস আগে আমার দায়িত্ব শেষ হয়েছে। তবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রধান শিক্ষক সহ অনন্য শিক্ষকদের ব্যাপক নানা অনিয়মের অভিযোগ নজরে আসে, তখন আমি সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে তদন্তের জন্য সরকারি ফি জমা দিয়ে অভিযোগ করেছি। সেটির তদন্ত চলছে। সঠিক তদন্ত করে ব্যাবস্থা করা হোক। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (সদর) ও তদন্ত কমিটির প্রধান, দীপক কুমার বনিক বলেন, চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযোগ গুলো বিষয়ে তদন্ত করেছি, খুব তারাতারি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে। আর অডিট এর নির্দেশনার উপেক্ষা করে শিক্ষকরা যদি বেতন ভাতা তোলেন তাও ফেরত যোগ্য হবে। আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর পর উর্দ্ধতনের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহাদুজ্জামান বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী যে ব্যাবস্থা নিতে বলা হবে, আমরা সে ব্যবস্থাই বাস্তবায়ন করা হবে।