এইচ এম জালাল আহমেদ
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রভাব বিশ্বব্যাপি। যদিও প্রভাবের ক্ষেত্রটি বিছিন্ন। কিছু কিছু দেশের প্রভাবের মাত্র অধিক। তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। প্রায় দু’বছর যাবৎ করোনার প্রভাবে শিক্ষাসহ সব কিছু স্থবির। প্রাণচঞ্চলতা বলতে গেলে থেমে গেছে। রাষ্ট্রের উন্নয়নের চাকা ঘুরছে না। বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষগুলো দিশেহারা। উৎপাদন কমেছে কয়েকগুণ। মাঝখানে প্রভাবটি বিলিনের পথে গেলে আবার জেকে বসছে নতুন করে। দিনদিন মৃত্যুর পরিসংখ্যানের হিসেব বাড়ছে। রাষ্ট্র করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপে হিমসিম খাচ্ছে। একদিকে চলছে সব মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা। অন্যদিকে সামাজিক দূরত্ব বৃদ্ধি করা। যাতে সমাজে মানুষের সমাগম না ঘটে। কিন্তু সাধারণ মানুষ বিষয়টি মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। রাষ্ট্র কয়েক মাসে বিভিন্নভাবে সামাজিক সম্পর্ক কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে মানাতে বা থামাতে নানা কর্মসূচি নিয়েও তেমন সফল হতে পারেনি যতটা হবার কথা। রাষ্ট্র বিশেষ প্রয়োজনে বন্ধ রেখেছে গণপরিবহনসহ রাজনৈতিক কর্মসূচি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তারপরও কোনভাবেই জন¯্রােত কেন যেন প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়নি স্থানীয় প্রশাসন। কঠোর বিধি নিষেধ জারি করেও লকডাউন দিয়ে যেন হিমসিম খাচ্ছে সরকার। সমালোচনার খোরকযোগীছে। কোনভাবে স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে সামাল দিতে সক্ষম হয়নি। তবে পহেলা জুলাই থেকে পুনরায় কঠোর লকডাউন দিয়ে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রেখেছে দেশের গর্বিত ও নন্দিত সেনাবাহিনী সহায়তায়। তাদের নামানো হয়েছে যৌক্তিক কারনে। এতে আবারো প্রমাণিত হলো রাষ্ট্রের শৃঙ্খলার জন্য প্রশাসনের সহায়তায় সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই।
করোনা প্রভাব কতটা বাড়ছে তা প্রতিদিনের প্রাণহানির পরিসংখ্যান দেখলেই প্রতীয়মান হয়। পরিসংখ্যান দেখলে আতঙ্কের স্থানটি অনেক লম্বা হয়। বিবেচনার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান যতই লম্বা হোকনা কেন সাধারণ মানুষ বিশেষ করে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা বড় কঠিন হয়ে পড়ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা বড় কঠিন কাজ। কিভাবেই নিয়ন্ত্রণে নিবে তাদেরকে? ওনাদের মধ্যে বেশীরভাগ মানুষ দিনের উপর্জন দিনে ব্যয় করতে হয়। অর্থাৎ তারা নিত্যদিনের শ্রমজীবী মানুষ। তাদের মধ্যে অনেক রয়েছেন আজকে কাজ করতে না পারলে রাত থেকেই না খেয়ে থাকতে হবে পুরো পরিবারকে। যাই হোক তারপরও আমরা উন্নয়নশীল বা মধ্যেম আয়ের দেশের জাতি। দেশে পরিচয়ের প্রতিনিধি থাকলেও রাষ্ট্র তাদের দিয়ে অনুরূপ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের পাশে দাঁড় করাতে পারেনি। পারেনি তাদের নিত্য প্রয়োজনটা মেটাতে। পারবে বলেও তেমন সামর্থ রাষ্ট্রের রয়েছে বলে মনে করার কোন সুযোগ নেই। এ কারনেই রাষ্ট্র করোনা প্রতিরোধে যতই পদক্ষেপ নেকনা কেন তা সাধারণ মানুষকে মানাতে সক্ষম হয়নি। কারন তাদের জীবনজীবিকার টানে জীবনবাজিতে কাজে বের হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। করোনার শুরুতে যেমন জাতির কঠোর চাপে পড়ে রাষ্ট্র সেনাবাহিনী নামিয়ে ত্রাণ সুষ্ঠু বন্টন ও সমাজিক দুরত্ব বাড়াতে সক্ষম হয়েছিল। একবছর পর আবার রাষ্ট্র বিশেষ ও জরুরি প্রয়োজনে একই কারনে সেনাবাহিনী নামাতে বাধ্য হয়েছে। ফলে করোনা প্রতিরোধে ঘোষিত কঠোর লকডাউন পুরো না হলেও দৃশ্যমান বাস্তবায়ন হয়েছে। এটা সেনাবাহিনীর পূর্ণসহায়তা ও জাতির সহঅবস্থানের কারনে সম্ভব হয়েছে। তারা জাতিকে বোঝাতে পারছেন এটা কষ্ট হলেও মানতে হবে। এ সবই সম্ভব হয়েছে পদক্ষেপ ও আচরন এর বিষয়গুলোর কারনে। তাদের তেমন আচরনটা দৃশ্যমান।
গত চার দিনের টানা দায়িত্ব পালনে সারা দেশে সেনাবাহিনীর সাথে সাধারণ মানুষের মোখামুখি হয়েছে বা কোন বিছিন্ন ঘটনা ঘটেছে তেমন কোন সংবাদ আমার জানা নেই। যদিও বিনা কারনে বাইর হবার কারনে বা প্রশাসনকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়া এযাবৎ দেড় হাজারের মত গ্রেফতার জারমানাসহ আইনি ব্যবস্থায় দাঁতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে বিরুপ কোন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভিন্ন কয়েকটি ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি। যে কয়টি ঘটনা দেখেছি তা আরো যারা দেখেছেন তারা আমার চেয়েও বেশী সেনাবাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের প্রশংসা করবেন এবং করেছেন। নিশ্চয়ই তারাও সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। যে কয়টি ঘটনা দেখেছি তার মধ্যে ক্ষুদ্র একটি ঘটনা উদাহরন হিসেবে এখানে তুলে ধরছি। এক ভদ্রলোক বয়সে ভারী না হলেও একেবারে তরুণ তাও নন। রিকশাযোগে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন সেনা চেকপোষ্ট অতিক্রম করে। সেনা সদস্যরা তার রিকশা থামিয়ে জিজ্ঞস করছিলে তার এ ভ্রমনের কারন কি? জবাবে তিনি বলছিলেন, ডাক্তারের কাছ থেকে এসেছেন এবং ওষুধ কিনে বাসায় যাবেন। কিন্তু তিনি তার বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেননি। সবশেষে তাকে বলা হয়েছিল, যে ডাক্তারের কাছে গেছিলেন তার ফোন নম্বর দিন এবং তিনি বসেন কোথায়? এ প্রশ্নেরও জবাব দিতে পারেননি তিনি। তখন তার হাতে থাকা ব্যাগটি চেক করলেন। যদিও তার ব্যাগে কিছুই ছিল না। তখন তার কাছে ব্যাগটি বহনের কারন জানতে চাইলে অকপটে সত্য কথাগুলো বলে কেদে দেয়। তখন এক সেনা কর্মকর্তা তাকে বললেন, ভাই আপনি এতক্ষণ কেন এতগুলো মিথ্যের আশ্রয় নিলেন? লোকটি বললেন, স্যার ভয়ে। তখন রিকশাটি ছেড়ে দিয়ে তাকে হেটে চলে যেতে দিলেন এবং বলে দিলেন অমন কোন কাজ যেন দ্বিতীয়বার আর না করেন। খানিকটা দুরে দাড়িয়ে পুরো ঘটনাটা দেখলাম এবং তাদের কথাবার্তা শুনলাম। এখানে সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয়টি হচ্ছে সেনাবাহিনী খুব কঠোর অবস্থানে ছিলেন এবং আচরনটি দৃশ্যমান তেমন। কিন্তু যে নাগরিকটার কথা বললাম তার সাথে প্রায় ১০ থেকে ১২ মিনিটের সংলাপে একবারও কোন রুচিহীন এবং অশোভনীয় বাক্য তো দুরে থাক শব্দ সেনা কর্মকর্তার মুখ থেকে শোনা যায়নি। তিনি পুরো সময়টা তার সাথে আপনি আপনি বলে কথা বলছিলেন। যদিও লোকটি বয়সে সে সেনা কর্মকর্তার চেয়ে বড় হবেন না।
পরিশেষে যে কথাটা বলতে চাই তা হচ্ছে মানুষ সবই মানুষ কেউ দরিদ্র কেউ ধনঢ্য। কেউ চলে গাড়িতে কেউ চলে পায়ে হেটে। কেউ চলে ক্ষুদ্র নানা পরিবহনে। কিন্তু সবই মানুষ। প্রকাশ না করলেও সবাই আচরন উপভোগের যোগ্য এবং বিবেচনা করেন। লেখা পড়া হোক আর নাই হোক আচরনটি সবাই লক্ষ্য করেন। সবাই ভালো ও মন্দ আচরন বোঝবার শক্তি রাখেন। আচরন দিয়ে মানুষের মনের কষ্টটা দুর করতে না পারলেও থামিয়ে রাখতে পারেন। কষ্টটা মনে চাপা দিয়ে খানিকটা সময় হলেও নিরব থাকার চেষ্টা করেন। যদি আচরন তেমন হয়, যেমনটির কথা বলা হচ্ছে। জানিনা আমরা সবাই সেদিকটায় লক্ষরাখি কিনা। তবে আচরনের দিকটায় বাংলাদেশ সেনাবহিনীর অধিকাংশ কর্মকর্তা সদস্য শতভাগ কার্যকর রাখেন। হয়ত হাতে গোনা দু’একজনের আচরন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। যদি হয় তাহলে মনে করতে হবে তিনি হয়ত বংশগতভাবে তেমন। নইলে প্রশিক্ষণে ফাকি দিয়েছেন। যাই হোক সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সাধারণ মানুষের উত্তেজনাটা দু’ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রথমত আচরন দিয়ে নইলে ডান্ডা দিয়ে। তবে বেশীরভাগই আচরন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন এবং চেষ্টা করেন। যদি আচরনে ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা থাকে তখন ডান্ডা ব্যবহার করতে বাধ্য হন। কারন সেনাবাহিনী কখনো হঠতে বা পেছাতে পারেন না। তারা জীবন দিতে পারেন কিন্তু হেরে যেতে পারেন না। ঠিক বাংলাদেশের সেনাবাহিনী বারবার তেমন প্রমাণ রাখছেন। তারা হারতে পারেন না হেরে যেতে চান না। তারা রাষ্ট্রের সেবায় জীবনবাজি রেখে কাজ করেন। তাদের কাজটি বারবার জাতির সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছেন। করোনা প্রতিরোধের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নেও তেমনটি প্রমাণ রাখছেন।
যেমনটি গত তিনদিনে প্রমাণ করছেন সেনাবাহিনীর সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসন। যদিও শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে ঘোষিত কঠোর লকডাউনের বিধি নিষেধ তাও বলা যাবে না। সাধারণ মানুষের ঢল সড়ক থেকে কমাতে কিছুটা হলেও সক্ষম হয়েছেন। প্রথম দু’দিনে প্রাইভেট ও বিভিন্ন সংস্থা কোম্পাণীর গাড়ি ভাড়া মানুষ বহন বন্ধ রখেতে পারলেও তৃতীয় দিন থেকে কেন যেন এসব গাড়ীর সংখ্যা সড়কে বেড়ে যাচ্ছে। তারপরও অনেকের মতে এসব নিয়ন্ত্রণে দেশের সব প্রতিনিধিরা হারলেও দেশের সেনাবাহিনী পুরোটা হারেননি এবং হারবে বলে মনে হয়না। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস প্রভাব প্রতিরোধে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কঠোর লকডাইন বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছেন। তাদের ব্যবহারে সাধারণ মানুষ হাজারো কষ্টের মাঝেও শান্তিপূর্ণভাবে তাদেরকে সম্মান জানিয়ে মেনে নিচ্ছেন অকপটে। তবে খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষকে কতক্ষণ এভাবে আটকিয়ে রাখা সম্ভব হবে সে বিষয়টি বিবেচ্য। দিন দিন তাদের অভাব বাড়ছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের বা কোন পেশা শ্রেণী বা কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে নূন্যতম সাহায্য পাচ্ছেন না। যদি তারা কোন সাহয্য না পান তাহলে সেনাবাহিনীর সহায়তার কতোটা কঠোর লকডাউনের বিধি নিষেধ কার্যকর করতে পারবে তা অবশ্যই বিবেচ্য বিষয়। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের বা সরকারের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে বিশ্লেষক বা আলোচকরা মনে করেন। জাতির প্রত্যাশা বিষয়টির দিকে রাষ্ট্র ও সরকার এবং দেশের বিত্তবানরা দৃষ্টি দিবেন।