বিশেষ প্রতিনিধি
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা হলো- “সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি সহ দ্বিতীয় শ্রেনী বিএড প্রশিক্ষণ অথবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২য় শ্রেনী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। তবে বিএড বিহীন শিক্ষকদের নিয়োগ লাভের পাঁচ বৎসরের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির বিএড ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতির শর্ত হলো সহকারী শিক্ষক হিসেবে আট বৎসরের চাকুরির অভিজ্ঞতা ও বিএড ডিগ্রি। অর্থাৎ চাকুরির নিয়োগ শর্ত মোতাবেক পাঁচ বৎসরের মধ্যে বিএড ডিগ্রি অর্জন পূর্বক আট বৎসরের সন্তোষজনক চাকুরিকাল হলেই সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতি পাওয়া যাবে। ওয়েবসাইটে দেয়া সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতির গ্রেডেশন তালিকায় “পাঁচ বৎসরের মধ্যে বিএড করেনি” এমন একটি মন্তব্য কলাম ছিল। বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি(ডিপিসি) এর সভায় এই মন্তব্য সম্পর্কে ডিপিসির সদস্যরা প্রশ্ন তুললে ডিডি আজিজ উদ্দিন সদুত্তর দিতে পারেনি। সে দম্ভোক্তি করে বলেছিল- শর্ত পূরণ না করলে কি হবে তা কোথাও লেখা নাই। জ্ঞাত বা অজ্ঞাত যেভাবেই হোক আজিজ উদ্দিন ঠিকই হিসাব মহা নিয়ন্ত্রকের পরিপত্র সম্পর্কে সে খুব ভাল ভাবেই অবগত ছিল। এই চিঠির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই এই মহা অনৈতিক কান্ডটি সে ঘটিয়েছে।
পর্ব ৩
এই চিঠিতেই সন্তোষজনক চাকুরিকালের সংজ্ঞা নিরুপন করা হয়েছে। হিসাব মহা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের ১৬ মে, ২০১১ তারিখের স্মারক নং সিজিএ/পদ্ধতি-১/উঃনিঃ/শিক্ষা/২৮৩/৭৫৩/(২) এর ৫(১) ও ৫(২) এ বলা আছে-“১)যেহেতু ১৯৯১ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী সরকারী হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি সহ দ্বিতীয় শ্রেনীর প্রশিক্ষণ অথবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২য় শ্রেনী স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (৫বৎসরের মধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণের শর্তে) রাখা হয়েছে সেহেতু ১ম যোগদানের তারিখ হতে প্রশিক্ষণ বিহীন সহকারী শিক্ষক /শিক্ষিকা গণ ২৩০০-৪৪৮০/-টাকার স্কেল প্রাপ্য হবেন। ২) প্রশিক্ষণ বিহীন সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ ৫বৎসরের মধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণে ব্যর্থ হলে তার ৫বৎসর পর বার্ষিক বর্দ্ধিত বেতনের সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। ২০১৭ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের চাকুরি ¯’ায়ীকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। ৩০আগস্ট, ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নিয়োগপত্রে উল্লেখ আছে- ধারা (ক) তাকে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পেশাগত ও বিশেষ কোন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। ধারা (খ)তে বলা হয়েছে- উপানুচ্ছেদ(ক) এ উল্লিখিত প্রশিক্ষণ সাফল্যের সাথে সমাপন, বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও শিক্ষানবিস কাল সন্তোষজনকভাবে অতিক্রান্ত হলে তাকে চাকুরিতে স্থায়ী করা হবে। ধারা(চ) তে আছে- প্রচলিত সরকারি বিধি বিধান অনুসারে তার জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে।” এই ধারাগুলো জেনেই তাদের স্থায়ীকরণের ফাইল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অথচ আজিজ উদ্দিন সন্তোষজনক চাকুরিকালের নির্দেশনা জেনেও ডিপিসি সদস্যদের মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। তার চাতুর্যপূর্ণ ভ‚মিকায় যোগ্য তেরোশত শিক্ষক পদোন্নতি বঞ্চিত হয়। একই ভাবে অনৈতিক লেনদেনের কারণে সন্তোষজনক চাকুরিকাল না থাকলেও ১৬৭৮ জনকে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। এরুপ স্পষ্ট বিধি বিধান সত্তে¡ও রাষ্ট্রের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এমন অমার্জনীয় কাজ করে রাষ্ট্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পার পেয়ে যাবে? তাহলে সুশাসনের জায়গাটি আর কোথায় থাকলো? মানুষ কেনই-বা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে?