মাহফিজুল ইসলাম রিপন
দিনাজপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যময় সুখ সাগর পাড়ের টিলা কেটে তৈরী করা হয়েছে বানিজ্যিক প্লটের রাস্তা। পাশাপাশি প্লটের আরেকটি রাস্তা তৈরীর জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সুখ সাগর সংলগ্ন পানি প্রবাহের খাল। রাস্তা তৈরীর জন্য মাটি ভরাট করে পানি প্রবাহের পথটি বন্ধ করে দেয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমির। সরকারী সম্পত্তি দখল ও পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণকারী ওই প্লট বিক্রেতা খোদ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদকের ছেলে ও প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না জলাবদ্ধতার শিকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা। প্রশাসনও পালন করছে নিরব ভুমিকা। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, দিনাজপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরীর ছেলে আজিজুল ইকবাল চৌধুরী তার স্ত্রীর নামে দিনাজপুর সদর উপজেলার সুখসাগর দক্ষিন দিকের এলাকায় প্রায় এক বছর আগে দিনাজপুর মৌজায় ৪০ হাজার টাকা শতক দরে ৩ একর ৭৭ শতক ফসলী জমি বায়নানামা করেন। সেই ফসলী জমিতে এখন মাটি ভরাট করে তিনি শুরু করেছেন প্লট ব্যবসা। ইতিমধ্যেই সেখানে প্লট বিক্রির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ওই জমিতে যাওয়া-আসার কোন রেকর্ডীয় রাস্তা না থাকায় প্লট বিক্রির সুবিধার্থে সরকারী সুখ সাগরের দক্ষিন পাড়ের টিলা কেটে নির্মান করেছেন ১৮ ফুট চওড়া রাস্তা।
ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সুখ সাগরের প্রায় ৩’শ মিটার দীর্ঘ টিলা কেটে তিনি ওই রাস্তা নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি ওই জমিতে প্লট বিক্রির সুবিধার্থে আরেকটি রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পানি প্রবাহের পথ। পানি প্রবাহের পথটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার হাজার হাজার একর জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে শতাধিক কৃষক। কিন্তু প্লট বিক্রেতা আজিজুল ইকবাল চৌধুরী বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আজিজুল ইমাম চৌধুরীর ছেলে হওয়ায় ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। এতে কৃষকসহ স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা সকলের ভরসার স্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জমি বিক্রেতা ডাঃ তোফাজ্জল আলিম জানান, ৪০ হাজার শতক দরে তিনি ৩ একর ৭৭ শতক ফসলী জমি বায়নানামা করেছেন আজিজুল ইকবাল চৌধুরীর স্ত্রীর সাথে। বিক্রি সম্পাদন না হওয়া সত্যেও এবং অবশিষ্ঠ ১১ শতক জমি ১৫ ফুট লম্বা পানি নিস্কাশনের জন্য বিক্রি বা বায়না করা হয়নি। অথচ সেই ১১ শতক জমিতেও মাটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এতে পানি নিস্কাশনের পথ পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যময় সুখ সাগরের টিলা কেটে রাস্তা তৈরী করায় একদিকে সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে ঐতিহবাহী এই সুখ সাগরটি, অন্যদিকে প্লট বিক্রির সুবিধার্ধে এবং প্লট ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দখল করা হচ্ছে সরকারী সম্পত্তি। আর এই প্লট বিক্রেতা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না, প্রশাসনও নিরব ভুমিকা পালন করছে। বরং জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম থাকাকালীন সময়ে স্থানীয় দফতরের অসাধু ব্যক্তির যোগসাজসে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সুখ সাগর পাড়ের টিলা কেটে ও খালে মাটি ভরাট করে পৃথক দুটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এরপরও দিনাজপুরের নাগরিক কমিটি, নাগরিক উদ্যোগ, সচেতন নাগরিক কমিটিসহ নানান ব্যানার সর্বস্ব সংগঠনগুলো রয়েছে নিশ্চুপ। প্লট বিক্রেতা আজিজুল ইকবাল চৌধুরী টিলা কাটার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, পুর্ব থেকেই এখানে রেকর্ডীয় রাস্তা আছে। কিন্তু স্থানীয়রা জানান, এখানে কখনই রাস্তা ছিলো না এবং বৃটিশ কিংবা বিএস রেকর্ডেও এখানে কোন রাস্তা নেই। এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না, এরপরও তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় গেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।