ফুলবাড়ী, দিনাজপুর প্রতিনিধি
দেশের খাদ্য ভান্ডারখ্যাত দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষকের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে এক হাজার ৬ মেট্রিক টন ধান এবং ৪২ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে দুই হাজার ৭৪৯ দশমিক ১১০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করছে খাদ্য অধিদপ্তর। গত বছরের ২৯ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত চলবে সংগ্রহ অভিযান। তবে গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৪৭ দিনে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র এক মেট্রিক টন। আর চাল সংগ্রহ হয়েছে দুই হাজার ৩৮৪ দশমিক ১০ মেট্রিক টন। খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ করে ধানের বাজার চড়া হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে শেষতক পর্যন্ত চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে খাদ্য বিভাগ আশাবাদী হলেও নিরাশায় রয়েছেন ধান সংগ্রহ নিয়ে।
গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সরেজমিনে ফুলবাড়ী পৌর ধানের বাজারসহ বারাইহাট, আমডুঙ্গি, রাঙামাটি, মেলাবাড়ী, মাদিলাহাট, আটপুকুর ও পুকুরীহাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি ধানের হাটবাজারে ধানের দাম চড়া। সরকারি নির্ধারিত ক্রয়মূল্যের চেয়ে প্রতিকেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেশি দরে ধান বেচাবিক্রি হচ্ছে। উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনের পরও দাম বেড়ে যাওয়ায় ধান-চাল সংগ্রহে হোঁচট খাচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তর। কৃষক সরকারকে ধান দিচ্ছেন না আর মিল মালিকেরাও চাল দিতে গড়িমসি করছেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১২টি অটোরাইসমিল, একটি মেজর রাইস মিলসহ ১৪৩টি হাসকিং মিল রয়েছে। সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে মাত্র ৯১টি মিল। এরমধ্যে ১০ টি অটোরাইসমিলসহ ৮১টি হাসকিং মিল রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে যারা চুক্তিবদ্ধ হননি তাদের তালিকা খাদ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। মিলার মঞ্জিল মোরশেদ বলেন, ‘হয় সরকারকে নির্ধারিত দাম বাড়াতে হবে, নতুবা বাজারে ধানের দাম কমাতে হবে। বর্তমান বাজারে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে, তা থেকে চাল তৈরি করলে সর্বনিম্ন মূল্য দাঁড়ায় ৪৬-৪৮ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারণ করেছে ৪২ টাকা।
ফলে কেজিতে চার থেকে ছয় টাকা লোকসান গুনে চাল দিতে আগ্রহী নন তারা।’ ফুলবাড়ী উপজেলা চাউল কল মালিক সমিতির সভাপতি সামসুল হক মন্ডল ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, নিজেদের ক্ষতি করে হলেও সরকারকে সরবরাহ করছেন মিলাররা। তবে ধানের যে দাম, তাতে মিলারদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকার একটু দাম বাড়িয়ে দিলে মিলারদের জন্য সুবিধা হতো। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মঈন উদ্দিন বলেন, গত বছরের ২৯ নভেম্বর সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক মেট্রিক টন ধান ও এক মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের মাধ্যমে সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ করা যায়নি। তবে চাল সংগ্রহ হয়েছেন দুই হাজার ৩৮৪ দশমিক ১০ মেট্রিক টন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিন করা সম্ভব হবে। তবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত নিয়ে সংশয় রয়েছে।