ফুলবাড়ী, দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ব্যবসায়িদের বাইরেও ধান, চাল, ভুট্টা, সরিষা, হলুদ, ডাল ও আলুতে ব্যক্তি পর্যায়ে বেড়ে গেছে বিনিয়োগ। শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এককালীন মুনাফার আশায় ধান, চাল, ভুট্টা, ডাল, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য মজুত করছেন। ব্যক্তি পর্যায়ে এসব খাদ্যপণ্য মজুত হওয়ায় এসব মৌসুমী মজুতদারেরা থাকছেন প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব মজুতদারদের কারণে মিল মালিক ও লাইসেন্সধারি ব্যবসায়িরা হাটবাজার থেকে প্রয়োজনীয় ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারছেন না। আর এরই বিরূপ প্রভাব পড়ছে খাদ্যপণ্যের দামে। মজুতদারদের বিনিয়োগ এবং খাদ্যপণ্যের মজুতদারি বন্ধ করতে না পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণে কোন অভিযানই কাজে আসবে না, এমনটি মনে করছেন মিল মালিক ও ব্যবসায়িরা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ৩১ মে এবং ১ জুন ফুলবাড়ী কয়েকটি অটোরাইস মিলে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু কোন অনিয়মই খুঁজে পায়নি মিলগুলোতে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম ধান ও চাল তাদের গুদামে ছিল। তবে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে খুচরা বাজারে তেমন কোন প্রভাব না পড়লেও নতুন করে আর চালের দাম বাড়েনি। মিল মালিক ও ব্যবসায়িদের অভিযোগ, প্রশাসন সব সময় মিল ও লাইসেন্সধারি ব্যবসায়িদের গুদাম ও আড়তে অভিযান চালায়। কিন্তু যত না ধান-চালসহ খাদ্যপণ্য মিল ও ব্যবসায়িরা মজুত করছেন, তার চেয়ে অনেক বেশিগুণ মজুত হচ্ছে মৌসুমী মজুতদারের ঘরে। ব্যক্তি পর্যায়ের এই মজুতদারি সিÐিকেট ভেঙ্গে নিয়মের মধ্যে আনতে পারলে বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমে আসবে। খাদ্য সংগ্রহ ও মজুতের বিষয়ে সরকারি নীতিমালায় বলা আছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কেউ এক মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য কিংবা খাদ্যসামগ্রী নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখাতে পারবেন না। এক্ষেত্রে অনুমোদিত লাইসেন্সধারি পাইকারি ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ ৩০০ মেট্রিক টন ধান সর্বোচ্চ ৩০ দিন এবং দ্বিগুণ পরিমাণ চাল সর্বোচ্চ ১৫ দিন নিজের নিয়ন্ত্রণে মজুত রাখতে পারবেন। তবে হাসকিং মিল মালিকেরা ১০০ মেট্রিক টন চাল সর্বোচ্চ ১৫ দিন নিজের নিয়ন্ত্রণে মজুত রাখতে পারবেন। কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বাড়তি মুনাফার আশায় ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য কিনে নিজ খেয়ালখুশি মতো মজুত রাখছেন। এসব মৌসুমী মজুতদারদের নিয়ন্ত্রণে কি পরিমাণ খাদ্য পণ্য মজুত থাকে, তার কোন হিসেব নেই খাদ্য বিভাগ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কাছে। গত কয়েক বছরে উপজেলায় এসব অনিয়মিত মৌসুমী মজুতদারের সংখ্যা এবং বিনিয়োগের পরিমাণ ব্যাপকহাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। লাইসেন্সধারী চাল ব্যবসায়ি, আড়তদার ও মিল মালিকেরা এসব মৌসুমী মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানালেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। চাল আড়তদার মো. হানিফ ও রতন চক্রবর্তী বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ বাসাবাড়ীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুদাম ঘর বাড়া নিয়ে ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য কিনে মজুত রেখেছেন। এ মজুতদারি না ভাঙলে ধান-চালসহ খাদ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি আসবে না এবং বাজার নিয়ন্ত্রণও হবে না। চাল আড়তদার অশোক কুমার বলেন, মুদির দোকানিও এখন চাল-ডাল কিনে মজুত করছেন। চাকরি করেন, হাতে টাকা আছে খাদ্যপণ্য মজুতদারিতে নেমে পড়েছেন। এভাবে সবচেয়ে বেশি খাদ্যপণ্য ব্যক্তিবিশেষের বাসাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে আটকে আছে। পৌরবাজারে ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি জয় প্রকাশ গুপ্ত বলেন, নতুন করে কয়েকদিনে চালের দাম বাড়েনি। তবে প্রশাসনের অভিযানের কারণে চালের দাম কমেওনি। মিল মালিকেরা চালের সরবরাহ স্বাভাবিক করলে চালের দাম কমে যাবে। ফুলবাড়ী চাউল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, সরকারের অভিযান মিল মালিকদের আতঙ্কিত করেছে। মিলাররা ধান-চাল মজুত নয়, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু রাখেন। এখনতো লাইসেন্স বিহীন অনিয়মিত ব্যবসায়ি চাকরিজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ধান-চালসহ খাদ্যপণ্য মজুত করছেন। কিছু হলেই মিলারদের দায়ি করা ঠিক না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মিলগুলোতে অভিযান চালানো হচ্ছে। অনিয়ম পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত ফুলবাড়ীতে একটি মিলেও অনিয়ম পাওয়া যায়নি, তারা সবাই নিয়মের মধ্যেই ব্যবসা করছেন। নিয়মের বাইরে যারাই খাদ্যপণ্য মজুত করবেন তাদের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।