সৈয়দ ফজলে রাব্বী ডলার
দেশজুড়ে যখন ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গ্রাহকের আমানত সুরক্ষা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন বিরাজ করছে, ঠিক সেই সময়ে রাষ্ট্রয়াত্ত মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক লি: বগুড়া অঞ্চলের থানা রোড শাখা ঋণ আদায়, মুনাফা অর্জন এবং আমানত বৃদ্ধিতে অর্জন করেছে ঈশ্বনীয় সাফল্য। আর এই অসাধ্য কর্মটি সাধন করেছেন ব্যাংকের থানা রোড শাখার বর্তমান এজিএম মোঃ জুলফিকার আলী আকন্দ। মূলত: ইতিপূর্বে বগুড়া জেলার অন্যতম ব্যস্ত এই শাখাটি বিগত কয়েক বছর যাবৎ ব্যাংকিং পারফর্মেন্সে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে শাখাটির আমানতের পরিমাণ ছিল ১৩৭.৯৮ কোটি টাকা, ঋণ ও অগ্রীম ৫১.৭৭ কোটি টাকা, মুনাফা ২.১৭ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক রেমিটেন্স ৬.৪৯ কোটি টাকা। শাখাটির ঋণ অগ্রীমের একটা বড় অংশ ছিল ৮০ হতে ৯০ দশকের খেলাপী ঋণ। এহেন নেতিবাচক পরিস্থিতিতে ঋণ আদায় কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল।
যার কারণে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকান্ডে বিরাজ করছিল হতাশা। উল্লিখিত ঋণগুলির একটি বড় অংশ ২০১১-২০১৩ সালে অবলোপন করে অগ্রণী ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী শাখাটির মোট অবলোপনকৃত ঋণ ছিল ৩.২৮ কোটি টাকা এবং শ্রেণীকৃত ঋণ ছিল ৫.৫৯ কোটি টাকা; মোট খেলাপী ঋণের পরিমাণ ছিল ৮.৮৭ কোটি টাকা। আমদানী ব্যবসাও প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল; ২০২১ সালে মোট আমদানীর পরিমাণ ছিল ২৮.৩৩ কোটি টাকা। শাখাটিতে বিগত ৩০ বছর যাবৎ কোন রপ্তানী হয়নি। দিন দিন এই শাখার সার্বিক কার্যক্রমে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। সেই সাথে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মাঝে নেমে আসে হতাশা। আর এহেন হতাশাজনক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের টপ ম্যানেজমেন্ট বগুড়া অঞ্চলের অন্যতম সফল ব্যবস্থাপক এজিএম মোঃ জুলফিকার আলী আকন্দকে এই শাখাটির দায়িত্ব প্রদান করে। স্বীয় দায়িত্ব কাঁধে পেয়ে এজিএম মোঃ জুলফিকার আলী অগ্রণী ব্যাংক টপ ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমান করতে তিনি খুব বেশী সময় নেননি।
মাত্র ৭ মাসের ব্যবধানে তিনি শাখাটিকে অনন্য উ”চতায় নিয়ে যান। ফলশ্রুতিতে ২০২২ সালের বার্ষিক সমাপনীতে শাখাটির আমানতের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১৭৫.৫২ কোটি টাকা ; যা বিগত ২০২১ সালের তুলনায় আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৭.৫৪ কোটি টাকা, ঋণ ও অগ্রীম ৭৩.০৯ কোটি টাকা, মুনাফা ৪.১৭ কোটি টাকা; বিগত বছরের তুলনায় ২.০০ কোটি টাকার বেশী। শুধু তাই নয়, ৮০ হতে ৯০ দশক অবধি খেলাপী ঋণগ্রহীতাদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে শাখা প্রধান জুলফিকার আলী আকন্দ শাখার অবলোপনকৃত ঋণ ৩.২৮ কোটির টাকার মধ্যে ২.০৬ কোটি টাকা আদায় করেছেন। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে অগ্রণী ব্যাংকের বগুড়া অন্য কোন শাখা অবলোপনকৃত ঋণ আদায় করতে না পারলেও ২০২২ সালে শ্রেণীকৃত ঋণ আদায় হয়েছে ১.৩৪ কোটি টাকা।
মোট খেলাপী ঋণ আদায় হয়েছে ৩.৪০ কোটি টাকা। এখানেই শেষ নয়, এজিএম জুলফিকার আলী আকন্দ মাত্র ৭ মাস হলো দায়িত্ব গ্রহণ করে অত্র শাখায় কর্মরত সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়ে সমবেত ভাবে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে বিগত ৩০ বছর ধরে বন্ধ থাকা রপ্তানী কার্যক্রম পুনরায় চালু করেন। এতে করে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে রপ্তানী খাত থেকে অত্র শাখা অর্জন করেছে ১৭.৯২ কোটি টাকা । বিশ্বজুড়ে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ডলার সংকট হওয়ায় যখন বগুড়া জেলার সকল ব্যাংকের আমদানী ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়ে, ঠিক সেই সময় অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এর থানারোড শাখায় আমদানী কার্যক্রম আগের যেকোন সময়ের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকের খেলাপী ঋণ আদায়, আমানত সংগ্রহ, আমানত বৃদ্ধি, মুনাফা অর্জন, রপ্তানী কার্যক্রম চালুর বিষয়ে অত্র শাখার এজিএম জুলফিকার আলী আকন্দ’র মুখোমুখি হলে তিনি জানান, ২০২২ সালে শাখাটির মোট আমদানী ৩২৩.৭০ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের তুলনায় ২৯৫.৩৭ কোটি টাকা বেশী। শাখার সেবার মাণ পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লেখ্য, এজিএম মোঃ জুলফিকার আলী আকন্দ ইতোপূর্বে অগ্রণী ব্যাংক লি: বগুড়া অঞ্চলের মহাস্থানগড় শাখা, সেনানিবাস শাখা, নন্দীগ্রাম শাখা, সুলতানগঞ্জ শাখা ও সপ্তপদী মার্কেট শাখায় ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন।