সৈয়দ ফজলে রাব্বী ডলার:
ভাই ছবি তুলে ও নিউজ করে কি করবেন? প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই আমরা ব্যবসা করছি- এমনটাই বলেন, রয়েল ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার বুলবুল আহমেদ। সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বারপুর-ঝোপগাড়ীস্থ বিশ্বইজতেমা সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ ইন্সপেক্টর শাকিউলের মালিকানাধীন এই বহুতল ভবন ভাড়া নিয়ে মাহফুজ নামের জনৈক ব্যক্তি রয়েল ইন্টারন্যাশনাল নাম দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চালিয়ে যাচ্ছেনারী ব্যবসা। এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই মাহফুজ এই অনৈতিক ব্যবসা চালাচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, বগুড়া শহর-শহরতলীর অর্ধ-শতাধিক আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়ে চিহ্নিত একটি সিন্ডিকেট নারীদের নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ সহ মদ্যপান ও জুয়ার আসর বসিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছে। এক্ষেত্রে যদিও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে ব্যবসা করছে।
কিন্তু বিষয়টিকে সম্পূর্ণ মিথ্যাচার ও গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে জেলা পুলিশের একাধিক ইউনিট। বগুড়া হোটেল-মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় অত্র এ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল রয়েছে প্রায় ২৩টি। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- হোটেল লা ভিলা, হোটেল ক্লাউড, সেফওয়ে মোটেল, নর্থওয়ে মোটেল, সেঞ্চুরী মোটেল, রোচাস রেস্টুরেন্ট, রেডচিলি, ম্যাক্স মোটেল, হ্যাংরি হুক, ক্যাসেল সোয়াদ, শখ, ক্যাফে বার বি কিউ, লিলিয়ান্ড, মাইডাস, ক্যাফে ট্রেন- ইলেভেন, উডবান, সম্পাডাইন, ম্যান্ডোলিন, লুক এ্যাট মি, হোটেল ৭১, চিটাগাং নূর হোটেল প্রভ‚তি। অভিযোগ রয়েছে অত্র এ্যাসোসিয়েশনভুক্ত একাধিক হোটেল-মোটেলে চলে নারীদের নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ। শুধু তাই নয়, খোদ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে শহরের সাতমাথায় টুনই ব্রাদ্রার্স হোটেলের মালিক লাজু মিয়া ও ফিরোজ নারীদের নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা চালিয়ে এখন কোটিপতি। লাজু মিয়ার নানা ব্যবসার পাশাপাশি মাটিডালীতে টাইম্ স্কয়ার সহ আরও তিনটি হোটেল রয়েছে। এছাড়া চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন একাধিক হোটেলে রাত নামলেই চলে ডিজে পার্টি, আট জনের মাথাপিছু দু’হাজার টাকা করে চলে এই ডিজে পার্টি।
রাত নামলেই নগ্ন নাচের সাথে বিদেশি মদ আর ইয়াবার ধোয়ায় আছন্ন হয়ে যায় পুরো ডিজে পার্টি। একইভাবে হোটেল প্যারাডাইসের মালিক ইমাম রাসেল এই অনৈতিক ব্যবসা করে এখন কোটিপতি। তার মালিকাধীন ইট ভাটা সাত-আটটি ট্রাক সহ শহরতলীর কৈচড়- ছিলিমপুরে রয়েছে একাধিক বিলাশবহুল বহুতল ভবন। অনুরুপভাবে শহরের নিউ মার্কেট, জলেশ্বরীতলা, ঠনঠনিয়া, বনানী, তিনমাথা, ভবের বাজার, মাটিডালী বিমান মোড় এলাকায় নামে-বেনামী অর্ধ-শতাধিক হোটেল ও বহুতল ভবন ভাড়া নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রশাসনের দৃষ্টির অগোচরে দেদারছে চালাচ্ছেনারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা সহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ড। মাঝে মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের দু/চারটিতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেও থামছে না তাদের অনৈতিক কারবার। একাধিক বিশ্বস্থ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য ও সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোদ শহরের সাতমাথা এলাকায় হোটেল ৭১, হোটেল আমজাদিয়া, হোটেল টুইন ব্রাদার্স, শহরতলীর তিনমাথা হতে মাটিডালী বিমান মোড় পর্যন্ত এলাকায় হোটেল নীল সাগর, আদর্শ হোটেল, ক্যাসেল সোয়াদ, হোটেল প্যারাডাইস, হোটেল অবকাশ সহ বেনামী অনেক বহুতল ভবনে দেদারছে চলছে টিনেজ নারীদের নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ।
এর পাশাপাশি হোটেল গুলোয় অবস্থারত কিশোর-তরুন-যুবকদের নিয়ে বসছে জমপেশ জুয়ার আড্ডা ও মাদক সেবন। এতে করে বগুড়ার তরুন সমাজের অনেকেই নেশায় আসক্ত হওয়ার পাশাপাশি অনৈতিক নানা কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে বগুড়ায় প্রায়শ ঘটছে ছিনতাই, রাজাজানি সহ খুনের মতো নৃশংস ঘটনা। এ বিষয়ে জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে অবহিত করলেও তারা সচারাচর এসব বিষয় তেমন আমলে নেয় না। এ নিয়েও জনমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ? আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা ড্যামকেয়ার ভাবে চালিয়ে যাচ্ছেতাদের অনৈতিক ব্যবসা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পালশা-ভবের এলাকার অনেক বাসিন্দা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা এসে বলে আপনারা বিরক্ত করেন কেন? হোটেল মালিকরাতো আর আপনারদের কোন ডিস্টার্ব করেন না? তাহলে আপনাদের সমস্যা কোথায়? শহর-শহরতলীতে হোটেল-মোটেলে নারী ঘটিত অনৈতিক কার্যকলাপের বিষয়ে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সেলিম রেজার দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি বলেন, নারী নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা চালানোর সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ইনচার্জ সাইহান ওলিউল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন, আমরা এসব কর্মকান্ডকে কখনও সমর্থন করি না। তাই এবিষয়ে আমরা অবশ্যই কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। অনুরূপভাবে জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আবাসিক হোটেল-মোটেলে অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধে জেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবিষয়ে জেলা প্রশাসনই শুধু নয়, জেলা পুলিশেরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।