মোঃ রবিউল ইসলাম রাব্বি (বরিশাল):
বরিশাল নগরীর অন্যতম ব্যস্ত কেন্দ্র নতুল্লাবাদ সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল এখন অব্যবস্থাপনা, দখল ও যানজটের চরম চিত্রে পরিণত হয়েছে। পর্যাপ্ত পার্কিং স্থান না থাকায় প্রতিদিন শতাধিক যানবাহন টার্মিনালের বাইরে, এমনকি প্রধান হাইওয়ে সড়কের দু’পাশেও রাখা হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে যাত্রী, পথচারী ও চালকরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে যখন আলোর স্বল্পতা থাকে, তখন হাইওয়ে সড়কের দুই পাশে তিনটি করে গাড়ি রাখা হয়। ফলে মাঝের ফাঁকা অংশ দিয়ে অন্য গাড়ি চলাচলের সময় দৃষ্টিসীমা কমে যায় এবং প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এসব পার্কিংয়ে দায়িত্বরত কর্মচারীরা নিয়ম না মেনে অনিয়মের মাধ্যমে টাকা আদায় করেন। যার ফলে অবৈধ পার্কিং বন্ধ না হয়ে বরং উৎসাহিত হচ্ছে।শুধু তাই নয়, সড়কের দুই পাশের দোকানদাররাও রাস্তার জায়গা দখল করে নিজেদের দোকানের মালামাল গ্যাস সিলিন্ডার, লোহা কাটার সরঞ্জাম, অটোপার্টস ও মেরামতের উপকরণ রাখছেন খোলা জায়গায়। এতে চলাচলের রাস্তা আরও সরু হয়ে পড়েছে। একদিকে গাড়ির চাপ, অন্যদিকে দোকানের মালামাল ফলে হাইওয়ে সড়কটি ক্রমেই দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় পরিণত হচ্ছে।
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় টার্মিনাল এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, বাসে ওঠা-নামার জায়গা না থাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করতে হয়। এমনকি শহর থেকে দূরপাল্লার বাসগুলো রাস্তায় থেমে যাত্রী তুলছে, যা যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েক মাসে অন্তত ছয় থেকে সাতটি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে এই এলাকায়। এর মধ্যে তিনটি ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত দশজন যাত্রী ও পথচারী। বিশেষ করে রাতের বেলায় অপর্যাপ্ত আলোকসজ্জা ও এলোমেলোভাবে রাখা বাসের কারণে দুর্ঘটনার হার বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
এদিকে, টার্মিনালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে এই অব্যবস্থাপনা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত অংশে কিছু গাড়ি রাখা হলেও বাকি তিন-চতুর্থাংশ জায়গা দখল করে রাখা হয় অযথা স্থায়ীভাবে। অথচ নিয়ম অনুযায়ী টার্মিনালে প্রবেশকারী প্রতিটি বাসের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা ও পার্কিং স্পট নির্ধারিত থাকার কথা।
স্থানীয় বাসচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “টার্মিনালের ভেতরে জায়গা না থাকলে আমাদের বাধ্য হয়ে বাইরে গাড়ি রাখতে হয়। কিন্তু বাইরে রাখলে হাইওয়ে পুলিশ এসে জরিমানা করে। অথচ দায়িত্বপ্রাপ্তদের কেউ বিষয়টি দেখেন না।”
পথচারী রহিমা বেগম বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসার সময় রাস্তা পার হতে ভয় লাগে। দুই পাশে গাড়ি, মাঝখানে সঙ্কীর্ণ রাস্তা দেখতে না পেয়ে অনেক সময় বাচ্চারা বিপদে পড়ে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, টার্মিনালের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সড়কের দুই পাশের দখলদার উচ্ছেদ না করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
তারা প্রশাসনের প্রতি আহন জানান,বরিশাল সেন্ট্রাল বাস টার্মিনালকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা করা, অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা, রাস্তার জায়গা মুক্ত করা এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে।