আমাদের কণ্ঠ ডেস্ক:
পৃথিবীতে সুস্থভাবে সন্তানকে নিয়ে আসতে, জন্মের আগেই তার জন্য ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করেন বাবা-মা। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে তার প্রতিটি চাওয়া ও প্রয়োজন পূরণ করতে বাবা-মা তাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন। প্রতিটি মানুষের জীবনে বাবা-মায়ের সবচেয়ে বড়ো অবদান রয়েছে। কোনো কিছুর সাথে পিতার ধৈর্য এবং মায়ের ভালোবাসার তুলনা করা যায় না।
বাবা-মার শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তাদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা জানালেন , সহকারী পুলিশ সুপার কাজী ওয়াজেদ আলী ।
খুব ছোটবেলার কথা। ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা বড় একটা চুলে বেখেয়ালে পা দেয়াতেই বাবা খুব বকা দিলেন। দেখনা তোমার মায়ের চুল পড়ে আছে! চুলটা সুন্দরভাবে উঠিয়ে চুমু দাও। মায়ের পায়ের নিচে বেহেস্ত জানো না? এরপর মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞানী কথাবার্তা বলা শুরু করলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দামোদর নদী সাঁতরে পার হওয়ার গল্প থেকে শুরু করে আরো নানান গল্প বলতেন।
বাসায় উপস্থিত থাকাকালীন সবসময়ই মেঝেতে খেয়াল রাখতেন। মায়ের মাথা থেকে পড়া কোঁকড়ানো বড় বড় চুলগুলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে গোছাতেন। দলা করে নিয়ে চুলগুলোয় চুমু দিতেন, আমাদেরকে দেখাতেন, তারপর কোন জলাশয়ে সুন্দরভাবে ফেলে আসতেন।
চাকরি কালীন সময়ে মাসের প্রথমে বেতন পেয়ে পুরো টাকাটাই মায়ের হাতে দিতেন। এমনকি শেভিং ব্লেড কেনার টাকাটাও মায়ের কাছ থেকে চেয়ে নিতেন। এমন স্ত্রী ভক্ত মানুষ আমি আর কখনো দেখিনি। সারাদিন কত শত বার যে মাকে ডাকে তার কোন শেষ নেই।
প্রচন্ড রাশভারী এবং নিয়মানুবর্তিতায় কঠোর হলেও স্ত্রীর সন্মূখে একেবারেই নরম শিশুসুলভ মানুষ ছিলেন বাবা। স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালবাসা আর সম্মান দেখানো যে কেমন সেটা বাবাকেই দেখেছি। একই সাথে নিজের বাবা-মাকেও প্রচুর সেবা যত্ন করতেন। জীবনের শেষ ছয় মাস আমার দাদী বিছানাগত হলে আমার বাবা এবং মা দুজন মিলেই দাদির প্রস্রাব পায়খানা নিজ হাতে পরিষ্কার করতেন।
মা ছাড়া কিছুই বুঝতেন না বাবা। দু’জনের মনোমালিন্য যে কখনও হয়নি এমন নয়। তবে দৈবক্রমে এমন কিছু হলে দশ মিনিটের মধ্যেই বাবা-মায়ের পিছে পিছে ঘুরঘুর করতেন। কত দ্রুত কথা বলা যায় সে সুযোগ খুঁজতেন। কারণ মা ছাড়া বাবা চলতে পারতেন না এক কদমও। দুই মিনিট মা চোখের আড়াল হলেই চিৎকার করে বলতেন, কোথায় গেলে? মা একটু অসুস্থ হলে অস্থির হয়ে যেতেন। সবসময় বলতেন তোমাকে ছাড়া আমি কবরে কিভাবে থাকবো?
বাবার মৃত্যুর পর মায়ের অবস্থা খুবই করুন। বিভিন্ন স্মৃতিময় কথাগুলো বারবার বলছেন আর সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছেন। এমন ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে উনি কিভাবে থাকবেন জানিনা।