ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
\
জাতীয় ফল কাঁঠাল। ফলের রাজা বলে সবার কাছে সমাদৃত। কাঁঠাল শুধুমাত্র একটি মৌসুমী ফলই নয়- সহায়ক খাদ্য ও অর্থকরী ফসল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের সর্বত্র এখন কাঁঠাল গাছগুলিতে ঝুলন্ত কাঁঠাল। যা এখন সবার নজর কেড়েছে কাঁঠাল গাছগুলো। কোন কোন বাগানের আগাম জাতের কাঁঠালগুলি পাকতে শুরু করেছে। পাকা কাঠালের মিষ্টি গন্ধে কীট পতঙ্গরা ভিড় করছে গাছে গাছে। আর সেই আনন্দে বাগান মালিকরা গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। এসময় বাংলার প্রিয় জাতীয় ফল কাঁঠালের মিষ্টি রসে চিড়া, মুড়ি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। উপজেলার হাট বাজারগুলোতে পাকা কাঁঠাল উঠতে শুরু করেছে।
এ এলাকায় কাঁঠাল বাগানগুলোর পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার দু’ধারে, স্কুল, কলেজের চত্ত¦রে প্রচুর কাঁঠাল গাছের দেখা মেলে। এসব গাছে ঝুলে থাকা কাঁঠলের দৃশ্য অনেকের নজর কাড়ে। চারা লাগানোর পর সাধারণত এর তেমন যতœ নেয়া হয় না। শুধুমাত্র গুরু- ছাগলের আক্রমণ ও ঝড়ে ভেঙ্গে না পড়ে তার জন্য বড়জোর একটা খুঁটি ও খাঁচা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কাঁঠালের চারা আপনা থেকেই বেড়ে উঠে। এক কথাই অনাদর আর অবহেলায় বন-বাদারে বেড়ে উঠে ফলের রাজা কাঁঠাল। অন্যান্য ফল ও গাছ নিয়ে সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে যত তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় কাঁঠাল গাছ নিয়ে তেমন তৎপরতা নেই বললেও চলে। কোন কোন পরিবার ফল মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি করে সারা বছরের আয় করে। ২ থেকে তিন মাস কাঁঠালের ভরা মৌসুম এসময় পাইকার ও শ্রমিক শ্রেণির লোকদের বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় কাঁঠালের ভাল হয়েছে। তবে ফলন বেশি হলে দাম না পাওয়ার আশংকাও রয়েছে। বেশি ফলনে দাম পড়ে যাওয়ার রেওয়াজ আদিকালের। অভাবের কারণে অনেকে কাঁঠালের গাছ বিক্রি দিচ্ছে। আসবাবপত্র প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ী এসব নামমাত্র মূল্যে কিনে ফায়দা লুটছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে কাঁঠাল গাছগুলো ফলে ফলে ভরে গেছে। বিজয়নগর উপজেলায় ১০ টি ইউনিয়নের মধ্যে কালাছড়া , বিষ্ণুপুর , কাঞ্চনপুর , খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, মেরাশানী, কামালমুড়া, নুরপুর, কাশিমপুর, হরষপুর, ধোরানাল, মুকুন্দপুর, সেজামুড়া, নোয়াগাঁ ও পত্তন এলাকায় রয়েছে প্রায় চার শতাধিক কাঁঠাল বাগান। চলতি বছর এই উপজেলায় ১২০টি বাগান ও ৩৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে রয়েছে ৫/৬ টি করে কাঁঠাল গাছ। যা প্রত্যেক পরিবারের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। বিজয়নগর উপজেলায় সবচেয়ে বড় কাঁঠালের হাট বসে বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের রানওয়ের বাজার, সিংগারবিল ইউনিয়নের মেরাশানি বাজার, সিঙ্গারবিল বাজার, চম্পকনগর ইউনিয়নের চম্পকনগর বাজার ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজার। এছাড়া ও উপজেলার মুকুন্দপুর, ছতরপুর, হরষপুর বাজারে পাইকারি ভাবে কাঁঠাল বেচাকেনা করা হয়। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, সিলেট, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কাঁঠাল ক্রয় করে বিভিন্ন যানবাহনে নিয়ে যাচ্ছে। বুধন্তী ইউনিয়নের পাইকার ব্যবসায়ী আমির আলী, মাধবপুর উপজেলার মনতলার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন জানান, ফলের মৌসুমে সিজনালভাবে ফলের ব্যবসা করি। উপজেলার বিষ্ণুপুর, পাহাড়পুর, সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের বিভিন্ন বাগান ও এলাকা থেকে কাঁঠাল কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। সাতগাঁও গ্রামের কাঁঠাল ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, বিষ্ণুপুর এলাকার কাঁঠালের বাগান বেশি। এখারকার কাঁঠালের স্বাদই অন্যরকম। তাই আমি বাগান ঘুরে কাঁঠাল কিনে সরাইল, বিশ্বরোড, মাধবপুর, ভৈরবসহ বিভিন্ন হাট বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। কাঁঠালের প্রকার ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রয় করে থাকি। এ বিষয়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. হাদিউল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, কাঁঠাল এবং অন্যান্য ফসল ও ফল উৎপাদনের জন্য সর্বদায় কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যাতে করে কৃষকরা ভালো ফল উৎপাদন করতে পারেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার আমাদের কণ্ঠকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলাসহ আখাউড়া, কসবা উপজেলা কাঁঠালের জন্যও প্রসিদ্ধ এ অঞ্চল। লিচুর পাশাপাশি এসব উপজেলায় এ বছর কাঁঠালেরও বাম্পার ফলন হয়েছে। এই অঞ্চলে নরম চাউলা ও রসালো এই তিন ধরনের কাঁঠাল চাষ হয়। ফসল ও ফল বাগানের মালিকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। তবে এ বছর কাঁঠাল বিক্রিয় প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।