আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ডা: আ ফ ম রুহুল হক এমপি বলেন, আগামী ২৫ জুন দেশবাসীর জন্য হবে সৌভাগ্যময় একটি দিন। ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। স্বাপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচন হবে। মৃতপ্রায় মংলাবন্দর বিগত কয়েক বছর আগে অনেকটাই ঘুরে দাড়িয়েছে। যেটি পদ্মাসেতু চালুর পর আরও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে। তেমনি সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর পূর্নাঙ্গতা লাভ করবে। যেটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী অঙ্গীকার। এছাড়া সুন্দরবনের পর্যটকদের যাতায়াত ব্যবস্থা আরো কয়েকধাপ এগিয়ে যাবে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে সাতক্ষীরা অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা বিনোয়গ করতে শুরু করেছে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে দ্রæত গতিতে। এছাড়া এ অঞ্চলের পরিবহন খাত চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।
দৈনিক আমাদের কন্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি আরোও বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোনে রূপান্তরিত করবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেই সঙ্গে পদ্মা সেতু জাগাবে পিছিয়ে পড়া ২১ জেলাকে। এ অঞ্চলের ৫ কোটি মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এই সেতু। আশার আলো দেখছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন- সেই প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন তারা। সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন এখন পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলের মানুষ।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়। এরপর থেকেই পাল্টে যেতে থাকে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য। মোংলা বন্দরসহ এই অঞ্চলে গড়ে উঠতে থাকে ছোট-বড় নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা। বেশ কয়েকটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী নানা ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। এ সেতু দিয়ে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পারবে এশিয়ান হাইওয়েতে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুচ্ছিা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলার সাধারণ মানুষ এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
ডা: আ ফ ম রুহুল হক এমপি বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর খুলনা বিভাগে বেসরকারি উদ্যোগে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। এ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে জুট এন্ড টেক্সটাইল, এলপি গ্যাস, অটো রাইসমিল, মাছের হ্যাচারি ও হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, ফুড এন্ড এলাইড প্রোডাক্টস, ক্যাটল, পোল্ট্রি এন্ড ফিশ ফিড, প্রকৌশল শিল্প, রসায়ন শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্টিলাইজার, কোল্ড স্টোরেজ, প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং, উড এন্ড পার্টিকেল বোর্ড প্রসেসিং, ডক ইয়ার্ড শিল্প, সার্ভিস (সেবা শিল্প), ডেইরি প্রোডাক্টস এন্ড ডেইরি ফার্ম, অটোমেটিক ব্রিক ফিল্ড, প্লাস্টিক প্রোডাক্টস, নির্মাণশিল্প, পোল্ট্রি হ্যাচারি, পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং চামড়া ও ট্যানারি শিল্প।
আমাদের কন্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন মুখ ফিরিয়ে নেয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন এ দেশের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণ হবে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রমাণ করলেন এই দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সব কাজ করা সম্ভব। নিজেদের অর্থায়নে স্বপ্নের সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন। চ্যালেঞ্জের মুখে এই পদ্মা সেতু নির্মাণ একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, ভোমরা ও বেনাপোল বন্দর এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য বাড়বে। বাড়বে জিডিপি, হবে দারিদ্র্য বিমোচন। তিনি বলেন, দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাট শিল্প থেকে এক সময় রপ্তানির মাধ্যমে আয় অধিকাংশ খুলনা থেকে হতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই শিল্প আবারো তার ঐতিহ্য ফিরে পাবে, আয় আরো বাড়বে। পাশাপাশি কমে যাবে পণ্য পরিবহনেরও খরচ। একইভাবে পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন, সাধারণ মানুষের যাতায়াতসহ পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গেও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের এক নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত হবে।