মো. শহিদুল ইসলাম
দেশের কৃষি পণ্য রপ্তানী যোগ্য করতে বাংলাদেশ সরকার বহু দিন ধরে চেষ্টা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতা বিশ্বব্যাংকের ঋণে নেয়া পার্টনার(প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারল এন্ড রুরাল ট্রান্সফনমেশন ফর নিউট্রিশন,এন্টারপ্রিনিউরশীপ এন্ড রেজিল্যান্স ইন বাংলাদেশ) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রয়োজন অভিজ্ঞ জনবল। কেননা এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নতুন। এর আগে এ ধরনের প্রকল্প দেশে বাস্তবায়িত হয়নি। এ প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করার সময় যারা বিশ্বব্যাংকের সাথে জড়িত ছিলেন তাদেরকে তারা হাতেকলমে প্রশিক্ষন দিয়েছেন। তাই এ প্রকল্প পরিছন্ন ভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য ওই সময় যারা কাজ করেছেন তাদেরকেই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগানো উচিৎ বলে মনে করেন কৃষিবিদরা। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায় সঠিক ভাবে প্রকল্পের কাজ না হলে বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ ছাড়েও সমস্য হতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের কৃষি খাতে অমূল পরিবর্তন আসবে।
কৃষি পন্য রপ্তানি প্রসারিত হবে। জুলাই ২০২৩ থেকে প্রকল্পটি শুরু হয়ে শেষ হবে জুন ২০২৮। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধিন ৭টি সংস্থা দ্বারা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তার মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থাকবে লিড এজেন্সিতে। অর্থের উৎস যৌথ ভাবে আসবে আইডিএ(ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন),বিশ^ ব্যাংক ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং ইফাদ( ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট)৪৩ মিলিয়ন ডলার,জিওবি ১হাজার ১৫১ কোটি। প্রকপ্লের মোট অর্থ ৬ হাজার ৯১০কোটি ৯৪ লাখ, যার অধিকাংশ বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের টাকা। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদ্যমান কৃষি ব্যবস্থাকে রূপান্তর করে বানিজ্যিক কৃষিতে পরিবর্তন আনা। রপ্তানী মূখী খাদ্যশস্য উৎপাাদন করা। কৃষিপণ্য রপ্তানির উদ্দেশ্যে কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা। জলবায়ুর সাথে মিলরেখে এগ্রিফুড ভ্যালু-চেইনের সম্প্রসারণ করা। কৃষি মন্ত্রণালয় তৈরি জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ এবং প্ল্যান অব অ্যাকশন এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বিশ^ব্যাংকের প্রোগ্রাম ফর রেজাল্ট কৌশলের উপর ভিত্তি করে প্রকল্পটি প্রনয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটির চলমান কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হবে এবং এর ভিত্তিতে অর্থ ছাড় দেয়া হবে। এ জন্য প্রকল্পে যে পিসি(প্রোজেক্ট কো-ওডিনেটর) থাকবে তাকে অবশ্যই বিশ^ব্যাংকের দেয়া প্রশিক্ষণ অনুসারে কাজ করতে হবে। এ প্রকল্পের লিডিং এজেন্সি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান কাজ হচ্ছে কৃষক, উদ্যোক্তা তৈরি করা এবং কর্মচারিদের প্রশিক্ষণ দেয়া। কৃষক স্মার্ট কার্ড প্রবর্তনের মাধ্যমে ডিজিটাল কৃষি সেবা নিশ্চিত করে কৃষিকে আধুনিকায়নে রুপান্তর করা।
সীড টেষ্টিং এবং খাদ্য নিরাপত্ত ল্যাব তৈরি করা, সেচ অবকাঠামো আবাসিক,অনাবাসিক ভবণ নির্মাণ করা। মোবাইল ক্রপ ক্লিনিক ও কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ জাতীয় ও আঞ্চলিক সেমিনারের আয়োজন করা। কৃষি বিপনণ অধিদপ্তর এর কাজ হচ্ছে মার্কেট এক্টার ও স্টোক হোল্ডর তৈরি করা শস্য গুদাম, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রসেসিং হাউজ ভবণ নির্মাণ করা। বাজার চাহিদা মূল্য পূর্বাভাস সম্পর্কে গবেষণা ও ও যন্ত্রপাতি ক্রয়। বাংলাদেশ কৃষি গভেষণা কাউন্সিলে কাজ হচ্ছে রাস্ত, সেচ ব্যবস্তাপনা ট্রেনিং কমপ্লেক্রা,রিসার্চ কনসোর্টিয়াম অবকাঠামো নির্মাণ করা উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এনএআরএস(ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসোর্স সিস্টেম) এর সক্ষমতা বাড়ানো। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর প্রধান কাজ হচ্ছে সেচ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন,সেচ যন্ত্রপাতি ও ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি ক্রয়,বীজ উৎপাদন ও সার বিতারণ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট কে আধুনিক ক্রপ প্যাটান প্রবর্তন ও ফসলের জাত উদ্ভাবন । ল্যাব ও ট্রেনিং কমপ্লেক্রা নির্মাণ বিজ্ঞানীদের দক্ষতা বৃদ্ধি লক্ষে প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষা করানো। বাংলাদেশ ধান গভেষণা ইনষ্টিটিউটের প্রধান কাজ হচ্ছে ফলন পটেশিয়ালিটি বৃদ্ধির গভেষণা ও অ্যাডাপটিভ ট্রায়াল,ক্রপিং প্যার্টান উন্নয়ন ও সেচ প্রযুক্তি উদ্ভাদনের গবেষনা। নতুন জাত উদ্ভাবন ও প্রদশনী করা। অ্যাক্রেডিটেশন পরীক্ষা নেয়া। বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাজ হচ্ছে সেচ যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষন। এ প্রকল্পটি দেশের ৮টি বিভাগ ১৪টি কৃষি অঞ্চল ৬৪টি জেলাসহ ৪৯৫টি উপজেলায় ও সকল ইউনিয়েনে বাস্তবায়ন করা হবে।
কৃষিবিদরা মনে করে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য ফল ও সবজি উৎপাদন বাড়বে। কৃষি পণ্যের মানের উন্নতি হবে। কৃষি উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকসহ উদ্যোক্তদের আয় বাড়বে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুয়োগ সৃষ্টি হবে। খাদ্য শস্য ফল ও সবজির মান উন্নয়নের ফলে এ সব রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্র আয় করা সম্ভাব। এ প্রকল্প থেকে স্মার্ট কৃষি কার্ড দেয়া হবে। যার ফলে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করার কাজে যারা সংশ্লিস্ট ছিলেন তাদেরকে এ বিষয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্প আওতায় প্রায় ৩লাখ হেক্টর জমিতে ফল ও সবজি উৎপাদন করা হবে। যে ফলগুলো দেশের বাইরে রপ্তানী করা হবে তার মধ্যে আম,পেঁয়ারা,কাঠাঁল, আনারস ও কুল। আর সবজি রয়েছে ১০টি আলু,পটল সীম লাউ চিচিঙ্গ,মিষ্টিকুমড়া,মরিচ বাঁধাকপি, কাচা মরিচ,কাচা পেঁপে ও কচু এগুলো যাতে বাইরে পাঠানোর মত উপযোগী হয় তা দেখভাল করার জন্য থাকবে ১৫০০জন কর্মকর্তা।
প্রায় ১০লাখ কৃষককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রপ্তানী উপযোগী ফসল ফলানো মত আদর্শ কৃষক গড়ে তোলা হবে । উচ্চ ফলনশীর ধানের জাত উদ্ভাবনসহ আবাদী জমির পরিমান বৃদ্ধি করণ সহ দানাদার শস্য. ডাল ফসল, তেলবীজ ও উদ্যান ফসলের নতুন জাত তৈরি করা হবে। উন্নত ও দক্ষসেচ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন জমি সেচের আওতায় আনা হবে। কৃষি র্স্মাট কার্ড এর মাধ্যমে কৃষকদেরকে বিভিন্ন রকমে সহায়তা দেয়া হবে, যার মধ্যে থাকবে সার, বীজ, কৃষি ঋণ। সারা দেশের প্রায় ২কোটি ২৭লাখ কৃষকদেরকে কৃষি স্মাট কার্ডের মাধ্যমে ডিজিটার কৃষিসেবা দেয়া হবে। যুব ও মহিলা উদ্যোক্তাদের আর্থিক ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করানো হবে এবং প্রায় ২০হাজার উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে ৩০টি সমঝোতা সাক্ষর সম্পন্ করা হবে। ৫টি কৃষি পণ্য আম, কাঠাঁল ,আলু ,টমোটোও সুগদ্ধী চাউলের জন্য ভ্যালুচেইন প্রফেশনাল বডি প্রতিষ্ঠাকরণ করা হবে। মাঠপর্যায়ে কৃষি তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহের জন্য দেশের সকল উপজেলায় কারিগারী সক্ষমতা জোড়দার করা হবে।