মোহাম্মদ শাহ্ আলম শফি , কুমিল্লা
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রানী ময়নামতি প্রাসাদের কোল ঘেষে সমেশপুর গ্রামটির অবস্থান। দীর্ঘ ৫ যুগ ধরে এখানকার কৃষকরা বিভিন্ন রবিশস্যের চারা উৎপাদন করে আসছে। আর চারা বিক্রি করেই সারাদেশের কৃষকদের কাছে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে সমেশপুর গ্রাম। বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই তিন মাসে এ গ্রাম থেকে বিক্রি হবে অন্তত ৩ কোটি টাকার রবিশস্যর চারা। তাদের উৎপাদিত চারার মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, গোলবেগুন, শিংনাথ বেগুন, লাউ, টমেটোসহ বিভিন্ন রবিশস্যের চারা। সে লক্ষ্যই এখন ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা। সমেশপুরে এখন উৎসবের আমেজ। সরেজমিনে ঘুরে ও চারা চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের আগস্ট মাস থেকে কৃষকরা গরু, ছাগল বিক্রিসহ বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে লাভের আশায় বীজতলা তৈরি করতে থাকেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকেই বীজতলায় দেয়া হয় বীজ। ১৩ হাত দৈর্ঘ্য ও তিন হাত প্রস্থের প্রতিটি বীজতলায় সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার বীজ দেয়া হয়। বীজ রোপনের তিন থেকে চার দিনেই চারা গঁজানো শুরু হয়। ১৮ থেকে ২০ দিনেই চারা বিক্রির উপযুক্ত হয়ে উঠে। এরকম প্লটকে স্থানীয় ভাষায় কৃষকরা বীট বলেন। প্রতিটি বীটে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ হাজার চারা উৎপাদিত হয়। প্রতিটি বীট থেকে এক মৌসুমে ৩ থেকে ৪ বার চারা বিক্রি হয়। এরকম বীট রয়েছে সমেশপুর গ্রামে কয়েক হাজার। চারা উৎপাদনকারী মোঃ মনির হোসেন, মোঃ রাসেল, মোঃ খোকন মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক জানান, এটা আমাদের পৈত্রিক পেশা। ৫০/৬০ বছর ধরে চারা উৎপাদন করছি। দেশের সিলেট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নিলফামারী, দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী, নওগা, সিরাজগঞ্জ, গাজিপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এমনকি পাশ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও বিভিন্নস্থান থেকে অনেকে আসেন চারা ক্রয় করতে। ফুলকপি এক হাজার চারার দাম ৮শ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি হাজার ৬শ টাকা করে। এছাড়াও গোলবেগুন প্রতি হাজার চারা ১ হাজার টাকা, টমেটো ৫ শত টাকা দরে বিক্রিয় হয়। কৃষক আনোয়ার মেম্বার জানান, তিনি ৮ শতক জমিতে বীজতলা তৈরী করেছেন। আশ্বিন থেকে অগ্রাহায়ণ পর্যন্ত অন্তত তিনবার চারা উৎপাদণ হবে তার বীজতলায়। শতাধিক পরিবার এই তিন মাসে তিন থেকে চারবার চারা উৎপাদন ও বিক্রি করবেন। আরো জানান, এই তিনবারের মধ্যে প্রতিবার চারা উৎপাদনে তার খরচ হবে ৮০ হাজার টাকা। খরচের মধ্যে রয়েছে বীজতলা তৈরীর জন্য বাঁশ, পলিথিন, কীটনাশক, সার ও শ্রমিকের মজুরি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চারা বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে তার অন্তত ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা মুনাফা হবে। চারা কিনতে আসা ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নবীনগর এলাকার সরকার কবির আহমেদ বলেন, সমেশপুরের চারা নিঃসন্দেহে অনেক ভালো। গত দশ বছর ধরে আমি সমেশপুর থেকে চারা নিয়ে নিয়ে জমিতে রোপণ করি। এই চারার মৃত্যুর হার খুবই কম। চাষী ইকবাল হোসেন জানান, তার পিতা কৃষি বিভাগে চাকুরীর কারনে সেই কৃষিকাজে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, সমেশপুরসহ আশপাশের রামপাল, সৈয়দপুর, কোরপাই, কাবিলা গ্রামে প্রতি বছর ৩/৪ কোটি টাকার চারা বিক্রি হলেও কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তাকে এসব এলাকায় দেখা যায়না। কৃষক মাসুদ রানা জানান, তিনি এ বছর ২০ শতক জমিতে বীজতলা তৈরী করেছেন। বীজ সার কিংবা পরামর্শ সংক্রান্ত কোন সহযোগিতা কখনো কোন দিন কৃষি বিভাগ করে নি। কোন সমস্যা হলে কৃষকরা নিজেরাই আলাপ আলোচনা করে সমাধান খুঁজে নেন। বিষয়টি নিয়ে বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আফরিনা আক্তার জানান, মাঠ পর্যায়ে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগন কৃষকদের নিয়োমিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। বীজ, সার, কিংবা কিটনাশকসহ প্রনোদনার বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হবে।